মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিয়োগ দেয়া সিআইএ-র উপ-পরিচালক জিনা হাস্পেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে জার্মান ফেডারেল প্রসিকিউটরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এক জার্মান এনজিও৷
বিজ্ঞাপন
হাস্পেলের বিরুদ্ধে ২০০২ সালে থাইল্যান্ডে এক বন্দিশিবিরে বন্দিদের উপর নির্যাতন চালাতে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে৷মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নির্যাতন নিয়ে ২০১৪ সালে মার্কিন সেনেট সিলেক্ট কমিটি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল৷ তারপর অজানা সিআইএ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ গঠন করেছিল বার্লিন ভিত্তিক এনজিও ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস' বা ইসিসিএইচআর৷ ঘটনা যেই সময় ঘটেছিল তখন হাস্পেল গুপ্ত এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷ তবে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সিআইএ-র ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান৷
ইসিসিএইচআর এর রিট জার্মান ফেডারেল প্রসিকিউটরের কাছে পৌঁছেছে বলে ডয়চে ভেলের কাছে নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র৷
ওয়াশিংটনে সর্ষের মধ্যেই যখন ভূত
উইকিলিক্স অথবা অন্য কোনো ‘বেসরকারি’ সংগঠন নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস করে দিচ্ছে হোয়াইট হাউস বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলিরই ভিতরের মানুষ৷ ট্রাম্প ক্রোধে ফুঁসলেও তার উৎস খুঁজে পাচ্ছেন না৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
টেলিফোন সংলাপ
ক্ষমতায় আসার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু বিদেশি শীর্ষ নেতার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ আলোচনা করেছিলেন৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বেশ কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন৷ সেই খবর সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে ট্রাম্প-এর রোষের শিকার হয়েছিলেন ওবামা আমলের অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস৷ তিনিই রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প টিমের যোগাযোগ নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেছিলেন বলে ট্রাম্প সন্দেহ করেন৷
ছবি: Reuters/L. Buckman
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ওভাল অফিসে আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইএস সম্পর্কে এমন গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন, যা ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও অজানা ছিল৷ সেই তথ্য ফাঁসের ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/Tass/Alexander Shcherbak
এফবিআই মেমো
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে আলোচনার পর তার বিস্তারিত বিবরণ লিখে রাখতেন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর প্রাক্তন প্রধান জেমস কোমি৷ তাঁকে বরখাস্ত করার পর সেই ‘মেমো’-র অস্তিত্ব ও বিবরণ ফাঁস হওয়ায় জোরালো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Harrer
পোপনীয়তা ও স্বতঃস্ফূর্ততা
হোয়াইট হাউসের কর্মী ও উপদেষ্টারা ট্রাম্প-এর অনেক সিদ্ধান্ত আগেভাগে জানতে পারেন না৷ ফলে তার ব্যাখ্যাও দিতে পারেন না৷ ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, যে তাঁর দ্রুত চিন্তার সঙ্গে তারা তাল মিলিয়ে চলতে পারে না৷ এমন ‘অরাজকতা’-র ফলে তথ্য-ফাঁসের ঘটনা ঘনঘন ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
অন্তর্ঘাতের অভিযোগ
ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা এই সব তথ্য ফাঁসের ঘটনার মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের কালো ছায়া দেখছেন৷ অনির্বাচিত আমলারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনকে হেয় করতে এমন অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে বলে রক্ষণশীল মহলে অভিযোগ উঠছে৷ এই সব ‘লিক’-এর উৎস খুঁজে বার করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যমকে চ্যালেঞ্জ করছে তারা৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
6 ছবি1 | 6
হাস্পেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০০২ সালে থাইল্যান্ডে ‘ক্যাটস আই' নামে সিআইএ-র একটি গোপন বন্দিশিবিরের প্রধান ছিলেন হাস্পেল৷ সেই সময় সৌদি নাগরিক যায়ান আল আবিদিন মুহাম্মদ হুসায়েন, যিনি আবু জুবায়দাহ নামেও পরিচিত, তাকে শাস্তি হিসেবে তিন সপ্তাহের মধ্যে ৮৩ বার ‘ওয়াটারবোর্ডিং' করা হয়েছিল৷ এক সময় এই ধরণের শাস্তি দেয়া বৈধ হলেও মার্কিন সেনেট পরবর্তীতে একে ‘নির্যাতন' বলে উল্লেখ করে৷
২০১৪ সালে প্রকাশিত সেনেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, বারবার ওয়াটারবোর্ডিংয়ের এক পর্যায়ে আবু জুবায়দাহ অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁর মুখ দিয়ে অনবরত ফেনা বেরিয়েছিল৷
আবু জুবায়দাহকে এই ধরণের শাস্তি বন্ধ করার ক্ষমতা হাস্পেলের থাকলেও তিনি তা করেননি৷
ওসামা বিন-লাদেনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত আবু জুবায়দাহকে সিআইএ'র বিভিন্ন গোপন বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছে৷ সবশেষ তাকে এখন গুয়ানতানামো কারাগারে রাখা হয়েছে৷
এখন যা হবে
বার্লিনভিত্তিক এনজিও ইসিসিএইচআর এর আগে বিভিন্ন দেশের প্রসিকিউটরদের কাছে সিআইএ সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিল৷ কয়েকটি ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে৷ ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে সিআইএ তাদের ঐসব কর্মীর ইউরোপে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল৷