ট্রাম্প প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়িয়ে মূলত কংগ্রেসের উদ্যোগে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি ঘটে চলেছে৷ এবার সান ফ্রানসিস্কো শহরে রুশ কনসালেট ও আরও দু'টি রুশ দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া হলো৷
বিজ্ঞাপন
গত প্রায় আট মাস ধরে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সংঘাতের চক্র এবার নতুন এক মাত্রা পেল৷ সান ফ্রানসিস্কো শহরে রুশ কনসালেট তথা ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্কে রুশ বাণিজ্য দপ্তর বন্ধ করে দিলো মার্কিন প্রশাসন৷ উল্লেখ্য, সান ফ্রানসিস্কো শহরেই মার্কিন ভূখণ্ডে সবচেয়ে পুরানো রুশ কনসালেট অবস্থিত৷ এই তিনটি দপ্তর বন্ধ করা হলেও সেখানে কর্মরত কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হচ্ছে না৷ তাঁরা দেশের অন্যান্য রুশ দূতাবাস বা দপ্তরে কাজ করতে পারবেন৷ এমনকি বন্ধ হয়ে যাওয়া দপ্তরগুলির মালিকানা রাশিয়ার হাতেই থাকবে৷
বর্তমান এই সংঘাতের সূত্রপাত ঘটেছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে৷ গত ডিসেম্বর মাসে মেরিল্যান্ড ও নিউ ইয়র্কে দু'টি রুশ অবসরযাপন কেন্দ্র বন্ধ করে দেয় মার্কিন প্রশাসন৷ ওবামা প্রশাসনের অভিযোগ, সেখানে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ চলছিল৷ সে সময়ে ৩৫ জন রুশ নাগরিককে গুপ্তচর অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়৷ সাইবার যুদ্ধ চালিয়ে তারা ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল৷
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই রাশিয়া ও সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন৷ এমনকি তাঁর নির্বাচনের পেছনে রাশিয়ার ‘অবদান' নিয়েও একাধিক তদন্ত চলছে৷ অথচ তাঁরই আমলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এতটাই অবনতি হয়েছে, যেমনটা শীতল যুদ্ধ শেষ হবার পর আর দেখা যায়নি৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রুশ প্রেসিডেন্ট সের্গেই লাভরভকে টেলিফোনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান৷ সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালীন তাঁদের সাক্ষাৎ হবার কথা৷
‘বিদায় হোন’ – ট্রাম্প প্রশাসনে উইকেট পতন
ট্রাম্প প্রশাসনে যত দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ছে, ততটা আর কখনো কোথাও হয়নি৷ চলুন দেখা যাক, এ যাবৎ কার কার বিদায় ঘণ্টা বেজেছে৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
রেক্স টিলারসন
১৩ই মার্চ, ২০১৮৷ টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল৷ টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
অ্যান্টনি স্কারামুচি
‘দ্য মুচ’ বলে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সি সাবেক এই পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী ট্রাম্প প্রশাসনে টিকতে পেরেছেন মাত্র দশদিন৷ ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ তাঁর যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘদিন এই পদটি খালি ছিল৷ চিফ অফ স্টাফ পদে সাবেক মেরিন প্রধান জেনারেল জন কেলির যোগ দেয়ার দিনেই বিদায় হন অ্যান্টনি৷ প্রশাসনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি হারান তিনি৷
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল এই জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.S. Applewhite
রিন্স প্রাইবাস
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি
হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমত করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. S. Applewhite
মাইকেল ফ্লিন
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷