ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সামরিক পদক্ষেপের আলোকে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল আইন প্রণয়ন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় রাশ টেনে কংগ্রেসের ভূমিকা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
কাউকে কিছু না জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ইরানের এক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই বিষয়টি মার্কিন সংসদের একাংশের মোটেই পছন্দ হয় নি৷ দেশকে কার্যত যুদ্ধের মুখে ঠেলে দেবার মতো ঝুঁকি নেবার আগে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করা উচিত ছিল বলে অনেক সংসদ সদস্য মনে করেন৷ আপাতত যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উত্তেজনা কমানোর উদ্যোগ নিলেও ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যাতে একাই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, সেই লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব আনতে চলেছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের সংসদ সদস্যরা৷
গত সপ্তাহে ইরাকে কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ডের পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসন যে যুক্তি দেখিয়েছে, বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি রিপাবলিকান দলের একাংশও তা মেনে নিতে পারছে না৷ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যপ্রমাণ যাচাই করার সুযোগ পেয়েও তাঁরা মোটেই এমন সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না৷ নিম্ন কক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এ বিষয়ে এমনকি প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বক্তব্য নস্যাৎ করে দেন৷ তাঁর মতে, অ্যামেরিকার মানুষকে নিরাপদে রাখতে প্রেসিডেন্টের কোনো সুসঙ্গত কৌশল নেই৷ তাই ট্রাম্পের ক্ষমতায় রাশ টানতে বৃহস্পতিবার নিম্ন কক্ষে আইনের এক খসড়া নিয়ে ভোটাভুটি হবে৷ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে সেই আইন পাশ হলেও সেনেটে সেটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের ‘ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট' অনুযায়ী কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোনো বড় সামরিক অভিযান সম্পর্কে কংগ্রেসকে আগে থেকে জানাতে বাধ্য৷ অথচ ট্রাম্প সোলেইমানি হত্যার নির্দেশ দেবার সময় চরম গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ এ ক্ষেত্রে হাতে কম সময় ছিল বলে ট্রাম্প প্রশাসন যে যুক্তি দেখিয়েছে, বিরোধী নেতারা তা মানতে নারাজ৷ এমনকি ভবিষ্যতেও ইরান সম্পর্কে ট্রাম্পের কোনো স্পষ্ট নীতি আছে কি না, সে বিষয়েও তাঁরা সংশয় প্রকাশ করেছেন৷
ট্রাম্পের ক্ষমতায় রাশ টানতে বিরোধীদের উদ্যোগ নিয়ে আইনি বিতর্কও চলছে৷ রিপাবলিকান দলের মতে, বিরোধীদের আনা বিশেষ ধরনের এই প্রস্তাবে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের প্রয়োজন না হলেও সেটি আইন হিসেবে কার্যকর হতে পারে না৷ ডেমোক্র্যাটদের মতে, সেনেটেও প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে সেটি আইনসিদ্ধ হবে৷ এখনো পর্যন্ত কোনো ফেডারেল আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেয় নি৷
শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট দল সফল হলে যুদ্ধকালীন আইন সম্বল করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া কোনো দেশের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিতে পারবেন না৷
‘পিছু হটেছে’ ইরান, বললেন ট্রাম্প
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় ৮০ জন নিহতের তথ্য জানালেও ট্রাম্প বললেন ভিন্ন কথা৷ ভাষণে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন বা ইরাকি নিহত হননি৷ ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশগুলো দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
প্রতীক্ষিত ভাষণ
ইরানের হামলার পরপরই বেশ কিছু দেশ তাদের কোনো সৈন্য নিহত হয়নি জানালেও, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ রাতে টুইট করে ‘সব ঠিক আছে’ বললেও ক্ষতির পরিমাণ অ্যামেরিকার স্থানীয় সময় সকালে জানাবেন বলেও জানান ট্রাম্প৷ ভাষণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক স্পেনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন ট্রাম্পের পাশে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
‘ইরান পরমাণু অস্ত্র পাবে না’
ভাষণের প্রথম বাক্যেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি যতদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আছি, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেয়া হবে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পরমাণু বোমার পেছনে ছুটে ইরান ‘সভ্য’ বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে৷ আমরা তা কখনও হতে দেবো না৷’’
ট্রাম্প জানান, ইরানের হামলায় কোনো অ্যামেরিকান বা ইরাকি আঘাতপ্রাপ্ত হননি৷ কেউই হতাহতও হননি৷ সব মার্কিন সৈন্য নিরাপদে আছে এবং সেনা ঘাঁটিতেও খুব সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতার জন্য মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Nasser
‘পিছু হটেছে’ ইরান
মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘মহান’ এবং শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শক্তি থাকলেই তা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি মনে করেন না৷ ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরান ‘পিছু হটেছে’ বলে মনে করেন ট্রাম্প৷ ইরানের এমন অবস্থান সকল পক্ষ এবং বিশ্বের জন্যেও ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Mehr
‘সন্ত্রাসী সোলেইমানি’
ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে বিশ্বের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, হেজবুল্লাহর মতো ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখা এবং হাজার হাজার মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ ছিল সোলেইমানির বিরুদ্ধে৷
ইরানের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি ‘ছুঁড়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেন৷ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো- জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনকেও চুক্তি বাতিল করতে আহ্বান জানালেন ট্রাম্প৷ সোলেইমানি হত্যার পর ইরান এ চুক্তি না মানার ঘোষণা দিয়েই রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
‘চুক্তির টাকায় সন্ত্রাস’
ট্রাম্প দাবি করেন, পরমাণু চুক্তির ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাওয়া অর্থে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ চালাচ্ছিল ইরানের বর্তমান সরকার৷ তিনি বলেন, এর ফলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান এবং ইরাক ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে৷
ছবি: AFP/Iranian Presidency
আরো অবরোধ
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷এই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি৷ নতুন অবরোধ কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উঠে আসেনি তার বক্তব্যে৷ তবে ইরান তার ‘ব্যবহার’ পরিবর্তন করার আগ পর্যন্ত এ অবরোধ জারি থাকবে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
নতুন অস্ত্র আসছে
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট ন্যাটোকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ নিজের প্রশাসনের অধীনে আড়াই লাখ কোটি ডলার খরচ করে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ আমাদের বড়, শক্তিশালী, নির্ভুল, প্রাণঘাতি এবং দ্রুতগামী মিসাইল রয়েছে৷ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/U.S. Department of Defense/S. Apel
ইরানের প্রতি আহ্বান
ভাষণের শেষে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এবং জনতাকে সম্বোধন করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইরানিদের জন্য ‘দারুণ’ এক স্বপ্নের ভবিষ্যত চান তিনি৷ যারা শান্তি চায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে অ্যামেরিকা সর্বদা প্রস্তুত বলেও ভাষণে বলেন ট্রাম্প৷