বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের ভোটাভুটিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়ে গিয়েছে। মামলা এবার সেনেটে।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভে দ্বিতীয়বারের জন্য ইমপিচড হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের জন্য ভোটাভুটি হয়। সেখানে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়ে যায়। এর আগেও মার্কিন কংগ্রেস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব এনেছিল। কংগ্রেসে তা পাসও হয়ে গিয়েছিল। তবে সেনেটে বিচারের পরে তা বাতিল হয়ে যায়। এবারেও সেনেটে তা পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ক্যাপিটলের ঘটনার জন্য দুইটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। এক, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সংবিধানের ২৫ নম্বর সংশোধনী অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে পদ থেকে বরখাস্ত করুন। দুই, দ্বিতীয়বার তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হোক। ভাইস প্রেসিডেন্ট আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করবেন না। ফলে বুধবার কংগ্রেস বা হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভে দ্বিতীয়বার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব পেশ করা হয়। শুরু হয় ভোটাভুটি। সেখানে ২৩২-১৯৭ ভোটে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পাস হয়ে যায়। কংগ্রেসে ২২২ জন ডেমোক্র্যাট আছেন। ফলে ১০ জন রিপাবলিকানও যে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবে ভোট দিয়েছেন, তা স্পষ্ট।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের যেসব ক্ষমতা রয়েছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে অনেক ক্ষমতাবান মনে হলেও আসলে কিন্তু তার ক্ষমতা সীমিত৷ ছবিঘরে জেনে নিন কি কি ক্ষমতা রয়েছে তাদের৷
ছবি: Klaus Aßmann
মার্কিন সংবিধান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছর। কোন প্রেসিডেন্ট দুইবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারেন না। প্রেসিডেন্ট সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কাজ করেন এবং ফেডারেল প্রশাসন নিয়োগ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করার পর সেই আইন প্রয়োগের দায়িত্বও প্রেসিডেন্টের।
ছবি: Klaus Aßmann
সরকারের প্রধান তিন শাখা
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের তিনটি প্রধান শাখা রয়েছে: বিচারবিভাগ, আইনপ্রনয়ন বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ। প্রেসিডেন্ট কোন অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন এবং ফেডারেল বিচারক মনোনীত করতে পারেন, কিন্তু তা সেনেট থেকে অনুমোদিত হতে হয়। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ও রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ দিতে পারেন, কিন্তু এসব নিয়োগেও সেনেটের অনুমোদন লাগে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আইনপ্রণয়ন বিভাগ প্রশাসনিক বিভাগের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ছবি: Klaus Aßmann
স্টেট অফ ইউনিয়নের ক্ষমতা
প্রেসিডেন্টকে কিছুদিন পরপর কংগ্রেসের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে অবহিত করতে হয়। প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে ‘স্টেট অফ ইউনিয়ন’ বলা হয়।
ছবি: Klaus Aßmann
‘না’ বলতে মানা
প্রেসিডেন্ট কোন আইনে ভিটো দিতে পারেন, বা 'না' বলতে পারেন। কিন্তু যদি কংগ্রেসের দুই কক্ষ, সেনেট ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের দুই-তৃতীয়াংশ কোন আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেয় তাহলে প্রেসিডেন্টের ভিটো সত্ত্বেও আইন কার্যকর হতে পারে।
ছবি: Klaus Aßmann
পকেট ভিটো
কিন্তু মাঝেমাঝে প্রেসিডেন্ট কোন আইন প্রণয়নকে একটি কৌশলে আটকে রাখতে পারেন। এই কৌশলকে বলা হয় ‘পকেট ভিটো’। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কোন আইন নিজের কাছে আটকে রাখতে পারেন। এর ফলে কংগ্রেসে অনুমোদিত হলেও প্রেসিডেন্টের কাছে আটকে থাকার কারণে আইনটি কার্যকর হতে পারে না। এই আইনের মত অনেক বিষয়ে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে স্পষ্ট করে নির্ধারিত করেনি।
ছবি: Klaus Aßmann
নির্বাহী ক্ষমতা
প্রেসিডেন্টের আরেকটি বিখ্যাত ক্ষমতার নাম হচ্ছে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ বা নির্বাহী ক্ষমতা। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সরকারি কর্মকর্তাদের কোন বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় প্রেসিডেন্ট যা খুশি তাই নির্দেশ দিতে পারেন। আদালত ইচ্ছে করলে এই নির্দেশ বাতিল করতে পারে অথবা কংগ্রেস এই নির্দেশের বিপরীতে আরেকটি আইন প্রণয়ন করতে পারে।
ছবি: Klaus Aßmann
চুক্তির ক্ষমতা
প্রেসিডেন্ট প্রয়োজন মনে করলে আরেকটি দেশের সাথে চুক্তি বাতিল করতে পারেন, কিন্তু সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে।
ছবি: Klaus Aßmann
সামরিক বাহিনীর প্রধান
প্রেসিডেন্ট কমান্ডার ইন চিফ বা সামরিক বাহিনীর প্রধান, কিন্তু যেকোন যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে কংগ্রেস। তবে এই নিয়মটি পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। কারণ, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াও কিছু সময় প্রেসিডেন্ট সামরিক সংঘর্ষে সৈন্যদের অংশ নেবার অনুমোদন দিতে পারেন।
ছবি: Klaus Aßmann
অভিশংসন
প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বা কোন অপরাধ করেন, তবে হাউজ অভ রিপ্রেজেন্টিটিভ তাকে সরানোর জন্য ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন শুরু করতে পারেন।
ছবি: Klaus Aßmann
9 ছবি1 | 9
ডনাল্ড ট্রাম্পই অ্যামেরিকার ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস যাঁকে দুইবার ইমপিচ করলো। তবে এর ফলেই ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে, এমন নয়। মামলা এবার যাবে সেনেটে। আর সেখানেই সমস্যা। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকবেন। ওই দিনই জো বাইডেন শপথ নিয়ে নতুন প্রেসিডেন্টের আসনে বসবেন। ফলে হাতে আছে এক সপ্তাহ। সেনেট এরপর বসবে ১৯ জানুয়ারি। অর্থাৎ, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের ঠিক আগের দিন। ওই দিন সেনেটে অভিসংশন প্রস্তাব উঠবে। তারপর শুরু হবে বিচার প্রক্রিয়া। এক দিনে তা কোনোভাবেই হওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। জো বাইডেন ক্ষমতায় চলে আসার পরেও কি অভিশংসনের বিচার চলতে পারে? বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এত সমস্যার কিছু নেই। কিন্তু অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, যে প্রেসিডেন্ট আর ক্ষমতায় নেই, তাঁর ইমপিচমেন্টের বিচারও হতে পারে না। ফলে ২০ জানুয়ারির পরে আদৌ সেনেটে বিচার হয় কি না, তা দেখার। তা ছাড়া সেনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা বেশি। এর আগেও তাঁরা ট্রাম্পের অভিশংসন আটকে দিয়েছিলেন। এবারও যদি বিচার হয়, তাহলেও ট্রাম্পকে ইমপিচ করা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।