মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার নতুন এক ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আট দেশের নাগরিকদের উপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন৷ আগামী মাসের ১৮ তারিখ থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে ট্রাম্প ছয়টি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন৷ তিন মাসের জন্য জারি থাকা ঐ নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন ছিল রবিবার৷ ঐ ছয়টি দেশ ছিল ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন৷ এবারের নিষেধাজ্ঞা থেকে সুদানকে বাদ দেয়া হয়েছে৷ তবে তালিকায় যোগ হয়েছে উত্তর কোরিয়া ও চাডের নাম৷ ভেনেজুয়েলার নির্দিষ্ট সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে৷ আদেশে সই করার পর ট্রাম্প টুইটারে লিখেছেন, ‘‘অ্যামেরিকাকে নিরাপদ করা আমার এক নম্বর অগ্রাধিকার৷''
পর্যাপ্ত পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় ট্রাম্পের প্রথম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আদেশের পর বিমানবন্দরগুলোতে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷ তবে এবার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ বিদেশি সরকারগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে৷ ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বা ডিএইচএস-ও কয়েকমাস ধরে এই বিষয়ে কাজ করেছে৷ এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের কয়েকটি ইস্যু সম্পর্কে খবর নিয়েছে ডিএইচএস৷ যেমন কোনো দেশ বায়োমেট্রিক তথ্য সহ ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট ইস্যু করে কিনা, হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্ট সম্পর্কে ইন্টারপোলকে জানায় কিনা, ভ্রমণকারীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য অন্য দেশের সঙ্গে শেয়ার করে কিনা ইত্যাদি৷
নতুন আদেশের কারণে বৈধ ভিসা বাতিল করা হবে না বলে জানানো হয়েছে৷ এছাড়া ইরানের নাগরিকরা শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে যোগদানের লক্ষ্য ভিসার আবেদন করতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে৷
ট্রাম্পের প্রথম ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় শুধু মুসলিমপ্রধান দেশ থাকায় সমালোচনা হয়েছিল৷ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থি বলেও মন্তব্য করেছিলেন অনেকে৷ এবার সেসব সমালোচনা এড়াতে উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
এক বছরে মাত্র ১০০ ভিসা!
ট্রাম্পের সবশেষ নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকরা প্রভাবিত হবেন না৷ কারণ দেশটির নাগরিকদের এমনিতেই দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই৷ শুধুমাত্র বিদেশি মুদ্রা উপার্জন সম্ভব হবে এমন চাকরি করতে নাগরিকরা অন্য দেশে যেতে পারেন৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেও অন্য দেশে যেতে পারেন উত্তর কোরীয়রা৷
ভয়েস অফ অ্যামেরিকার গতমাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র গত বছর উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের জন্য মাত্র একশটি ভিসা ইস্যু করেছে৷ এর মধ্যে ৫২টি ছিল ব্যবসা কিংবা পর্যটন ভিসা৷ আর বাকিগুলো কূটনৈতিক ভিসা৷ এছাড়া এ বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত উত্তর কোরীয়রা মাত্র ১৮টি ভিসা পেয়েছে৷
জেডএইচ/ডিজি (এপি)
যেসব দেশের কারণে টিকে আছে উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও এমন কয়েকটি দেশ আছে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পণ্য বা অস্ত্র আমদানি করে৷ চলুন দেখে নিই কোন দেশগুলো আছে এই তালিকায়৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
অ্যাঙ্গোলা
আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তারক্ষীদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেয় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
চীন
চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ৷ চীনের শিল্পকারখানায় উত্তর কোরিয়ার অনেক নাগরিক কাজ করে৷ চীনে উত্তর কোরিয়ান অনেক রেস্তোরাঁও রয়েছে, যেখান থেকে উত্তর কোরিয়া বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
কঙ্গো
কঙ্গোর সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং অন্য ছোট অস্ত্র আমদানি করে, যা মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল দেহরক্ষী এবং পুলিশ ব্যবহার করে৷
ছবি: Reuters/R. Carrubba
মিশর
অভিযোগ রয়েছে, উত্তর কোরিয়া মিশরকে ক্ষেপণাস্ত্রের উপকরণ পাঠিয়েছে৷ এ অভিযোগ সত্য কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Reuters/Amr Abdallah Dalsh
ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়া আফ্রিকার ছোট একটি দেশ৷ এই দেশটিরও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে সামরিক উপকরণ কিনে থাকে৷
ছবি: DW
কুয়েত
উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কুয়েতে নির্মাণ কাজে যুক্ত আছে৷ কুয়েতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসও আছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোজাম্বিক
উত্তর কোরিয়া মোজাম্বিককে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করছে৷ এছাড়া ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেও সহায়তা দিচ্ছে দেশটিকে৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFP/Getty Images
নামিবিয়া
দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সমরাস্ত্র উপকরণ তৈরি করার একটি কারখানা স্থাপনের জন্য উপকরণ এবং কর্মী পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: DW/B. Osterath
নাইজেরিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক চিকিৎসক যান৷ ২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় উত্তর কোরিয়ার তিন চিকিৎসক নিহত হয়েছিলেন সেখানে৷
ছবি: picture alliance /AP Photo/L. Oyekanmi
ওমান
ওমানে নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্য উত্তর কোরিয়া তাদের শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে৷
ছবি: SR
কাতার
কাতারেও নির্মাণ প্রকল্পে উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কাজ করে৷ ২০২২ সালে দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ এজন্য সেখানে স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumapress
সুদান
উত্তর কোরিয়া সুদানে যেসব সামরিক উপকরণ পাঠায়, তার মধ্যে রকেট কন্ট্রোল সেকশন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shazly
সিরিয়া
দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলা দেশটিও উত্তর কোরিয়ার উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম৷ জানা গেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ কিনে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Service of the President
উগান্ডা
আফ্রিকার দেশ উগান্ডারও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার সেনারা উগান্ডায় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন৷
ছবি: AP
সংযুক্ত আরব আমিরাত
ইউএই-তে উত্তর কোরিয়ার অনেক রেস্তোরাঁ এবং নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে, যেখানে কাজ করার জন্য সবসময়ই উত্তর কোরিয়া থেকে কর্মী পাঠানো হয়৷ এছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে স্কুড মিসাইল কিনে থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷