প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যতা বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা৷ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন দরিদ্র৷ সেদেশে মোট দরিদ্রের সংখ্যা অন্তত ৪ কোটি৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ শুক্রবার এই তথ্য তুলে ধরে সতর্ক করে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে এই পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে৷ রিপাবলিকানদের নতুন আয়কর নীতির কারণেই এই পরিণতি বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷
জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ফিলিপ অ্যালস্টন দুই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্য ঘুরে এই পরিস্থিতি দেখতে পেয়েছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য এবং পুয়ের্তোরিকোতে অবস্থা বেশ খারাপ৷ তিনি তাঁর সফরে মানুষকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করতে দেখেছেন৷ এমন অনেক শিশু দেখেছেন যাদের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেই এবং তারা অপুষ্টিতে ভুগছে৷ তাদের লেখাপড়া করার পয়সা নেই৷ এসব দরিদ্র মানুষেরা বেশিরভাগ সময় জেলের ভেতর থাকছে, কারণ ক্ষুধার তাড়নায় তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে৷
এক বিবৃতিতে অ্যালস্টন বলেছেন, ‘‘ট্রাম্পের বেশ কিছু প্রশাসনিক নীতি এই দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণ৷ প্রথমত আয়কর বাড়ানো, সমাজকল্যাণ খাতে বাজেট কমানো, যা দরিদ্রদের অনিরাপত্তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে৷ অ্যামরিকার স্বপ্ন অ্যামেরিকার বিভ্রান্তিতে পরিণত হয়েছে এবং যে কোনো ধনী দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক গতিশীলতার হার কমে গেছে৷''
ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনি প্রচারণায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছিলেন৷ কিন্তু তার বেশিরভাগ নীতি ধনী আর দরিদ্রের মধ্যে কেবল ব্যবধান বাড়িয়ে চলছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার মধ্যে বসবাস করছে, যা মোট জনসংখ্যার ১২ ভাগ৷ এদের মধ্যে অর্ধেক চরম দারিদ্র্যর মধ্যে জীবনযাপন করছে৷
অ্যামেরিকায় দারিদ্র্য
যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অসামঞ্জস্যতার চিত্রটা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে৷ ২০১৪ সালে মার্কিন নাগরিকরা তাঁদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন৷ অর্থনীতিবিদদের মতে, বেকারত্বই মার্কিন নাগরিকদের দরিদ্র্যতার মূল কারণ৷
ছবি: Getty Images
ত্রাণের জন্য আকাশচুম্বী চাহিদা
২০১২ সালে অ্যামেরিকায় দারিদ্র্যের চিত্রটা ছিল ভয়াবহ৷ দারিদ্র্যের কবলে পড়েছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ, যার মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ শিশু৷ ২০১০ সালে বিনামূল্যে সরকারের কাছ থেকে খাবার পেত ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ৷ ২০১২ সালে সে সংখ্যাটা অনেক বেড়েছে৷
ছবি: Frederic J. Brown/AFP/Getty Images
দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই
১৯৬৪ সালের ৮ জানুয়ারি ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে অ্যামেরিকা থেকে দারিদ্র্য দূর করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখনকার প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন৷ তাঁর ঘোষণার ৫০ বছর পরেও বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর এই দেশ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
গৃহহীন মানুষের সংখ্যা
দারিদ্র্যের কারণে খাদ্যাভাব দেখা দেয়৷ মার্কিন প্রশাসনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরে ২০১৩ সালে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে৷
ছবি: Frederic J. Brown/AFP/Getty Images
জরুরি খাদ্য সহযোগিতা
জরুরি খাদ্য সহযোগিতার ব্যাপক চাহিদা৷ নিউইয়র্ক সিটির ফুড ব্যাংক প্রতিদিন শহরের ৪ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে খাবার দেয়৷
ছবি: Getty Images
দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতা
মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যুরো’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ এবং ২০১১ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রতি তিনজন মার্কিন নাগরিকের একজনের দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
সমস্যাক্রান্ত ২০১৩
অনেক সময়ই এমন হয় মানুষ চাকরি করছে, কিন্তু তার চাহিদা মেটাতে পারছে না৷ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনের মাথাপিছু আয় গড়ে ৭.২৫ ডলার৷ ২০১৩ সালে গ্যালাপ-এর এক জরিপে দেখা গেছে ২০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিককে খাবারের জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে৷
ছবি: DW/Y. Zarbakhch
বিশেষ আয়োজন
এই কুপনটি ‘থ্যাঙ্কসগিভিং ডে’ তে বিনামূল্যে টার্কি খাওয়ার জন্য৷ নিউইয়র্ক সিটির ‘কোয়ালিশন অ্যাগেন্টস হাঙ্গার’ জানিয়েছে, প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজন মার্কিন নাগরিক গত বছর পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে দিন কাটিয়েছে৷
ছবি: Getty Images
ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান
ওয়াশিংটন ডিসিতে বেশ কয়েকটি গরিব পরিবারকে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করে মান্না ফুড সেন্টার৷ বিশ্বের এই ধনী দেশটির ১ কোটি ৬০ লাখ শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে৷ এই শিশুরা যুক্তরাষ্ট্রের ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানকে সামনে তুলে ধরেছে৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
যুক্তরাষ্ট্র দারিদ্র্য সংক্রান্ত অ্যালস্টনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি আগামী বসন্তে প্রকাশ হবে এবং আগামী জুনে মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে এটি উপস্থাপন করবেন তিনি৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷