1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিযুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের প্রচারণার সঙ্গী এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি

১৯ জুলাই ২০২৫

২০২৪ সালের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে ফিরিয়ে আনতে বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্কের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্ক
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক একসময় ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক ছিলেন, কিন্তু এখন তিনি নিজে অ্যামেরিকা পার্টি নামে দল গঠন করে ট্রাম্পের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেনছবি: Brandon Bell/REUTERS

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ২০২৪-এর সফল প্রচারণায় যে ব্যক্তি অর্থ ও প্রভাব দিয়ে সহায়তা করেছিলেন তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।

ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পরও, সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত - মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাব কি সবেমাত্র শুরু হয়েছে?

ইলন মাস্ক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং গত এক বছর ধরে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে ফিরিয়ে আনতে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তারপর সরকারি করিডোরে চলে তার অবাধ আনাগোনা,  এবং ক্রমশ নিজেকে রাজনৈতিক দক্ষিণপন্থি প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে বিভিন্ন বিতর্কের কারণে তার জনপ্রিয়তা খানিক হ্রাস পেয়েছে।

ট্রাম্পের প্রচারণায় মাস্কের অবদান

পূর্বে নিজেকে মধ্যপন্থি বলে পরিচয় দিলেও এবং উভয় দলের প্রার্থীদের অনুদান দেওয়ার ইতিহাস থাকলেও, মাস্ক তার যথেষ্ট সাংস্কৃতিক ও আর্থিক প্রভাব ট্রাম্পের সফল প্রেসিডেন্ট প্রচারণায় নিয়োজিত করেছিলেন।

বিলিওনিয়ার উদ্যোক্তা "অ্যামেরিকা প্যাক" নামে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি তৈরি করেন এবং এতে প্রায় ১২ কোটি ডলার অর্থ বিনিয়োগ করেন। নির্বাচনের আগে তিনি সপ্তাহের পর সপ্তাহ মূল রাজ্যগুলোতে ভোটারদের ভোট দিতে উৎসাহিত করেছেন, এক পর্যায়ে ১০ লাখ ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করেছিলেন।

২০২৩-২৪ নির্বাচনী চক্রে তিনি সব স্তরের রিপাবলিকান প্রার্থীদের জন্য ২৯ কোটি ডলারের বেশি অবদান রেখেছেন।

ব্যক্তিগত সুবিধা ও অর্থনৈতিক লাভ

ট্রাম্পকে সমর্থনের পর মাস্ক প্রেসিডেন্টের বিশেষ পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত হন। তার পরিকল্পিত "ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি" (ডোজ) নামে টাস্কফোর্স সরকারি অপচয়, জালিয়াতি ও অপব্যবহার কমানোর দায়িত্ব পেয়েছিল।

এই অবস্থানে থাকাকালীন মাস্কের প্রভাব বিভিন্ন সরকারি বিভাগে পৌঁছায়। তার লক্ষ্য ছিল বৈদেশিক সহায়তা সেবা ইউএসএইড, স্বাস্থ্য ও মানব সেবা এবং শিক্ষা বিভাগের মতো কেন্দ্রীয় বিভাগ এবং সাধারণ সেবা ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো সংস্থাগুলোর পরিসর কমানো।

বিতর্ক ও চরমপন্থি মতাদর্শের প্রতি আনুগত্য

মাস্কের দৃষ্টি জার্মানির প্রাথমিক নির্বাচনী মরসুমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও প্রসারিত করেন। সংবাদপত্রে চরমপন্থি দক্ষিণপন্থি "অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি" (এএফডি) দলের পক্ষে একটি মতামত নিবন্ধ, দলের নেতা অ্যালিস ওয়াইডেলের সঙ্গে এক্স-এ একের পর এক সাক্ষাৎকার এবং দলের প্রচারণা উদ্বোধনে ভিডিওর মাধ্যমে তিনি ইউরোপীয় দক্ষিণপন্থিদের সোচ্চার সমর্থক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

মাস্কের বিতর্ক চরমে পৌঁছায় যখন জানুয়ারিতে ট্রাম্পের উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি সমর্থকদের ভিড়ের সামনে এমন ইঙ্গিত করেছিলেন যা অনেকের কাছে নাৎসি স্যালুটের মতো মনে হয়েছিল। অন্যরা এটিকে মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাব বোধ হয় সবেমাত্র শুরু হয়েছে ''রোমান স্যালুট" বলে উল্লেখ করলেও, বেশিরভাগ মানুষ এই ইঙ্গিতটিকে ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এর ফলে ইউরোপ জুড়ে টেসলা গাড়ি ও ডিলারশিপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।

সম্পর্কের অবনতি

ট্রাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিতর্কের পর টেসলার বিক্রয় হ্রাসের খবর আসতে শুরু করে। ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলে তীব্র হ্রাসের কথা জানা যায়। এর ফলে ট্রাম্প - যিনি প্রচলিত পেট্রোলচালিত গাড়ি উৎপাদনের একজন বড় সমর্থক - হোয়াইট হাউসে একটি সাংবাদিক বৈঠকে টেসলার মালিকানা গ্রহণ করেছিলেন।

মে মাসের শেষ দিকে ট্রাম্প-মাস্ক অংশীদারত্ব শেষ হওয়ার মতো অবস্থা দেখা দেয়। ২৯ মে তিনি তার বিশেষ পরামর্শদাতার ভূমিকা এবং ডোজ থেকে সরে যান এবং ট্রাম্প একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে মাস্ককে একটি সোনার চাবি উপহার দেন।

তারপর থেকে দুজনের একে অপরের সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বলার মতো অবস্থা নেই। ট্রাম্প অভিবাসী ভিসা, প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর শুল্ক এবং একটি বিশাল কর ও ব্যয় বিলের পরিবর্তন ঘোষণা করার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। মাস্কের মতে, এই বিল ডোজ -এর সরকারি খরচ কমানোর কাজকে অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছে।

এই নীতির প্রতি মাস্কের তীব্র বিরোধিতা এতটাই প্রকট যে ৫ই জুন তিনি ট্রাম্প ও অন্যান্য প্রধান রিপাবলিকানদের সরকারি ঋণের বিরোধিতা করে পুরনো এক্স পোস্টগুলো পুনরায় প্রকাশ করতে শুরু করেন। তিনি দাবি করেছেন যে ট্রাম্প ২০২৪-এর নির্বাচনে হেরে যেতেন। এ ছাড়া, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজন আছে কিনা সেই নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।

স্পষ্ট হতাশা

সিলভার বুলেটিনের মতে, পরিসংখ্যানবিদ নেট সিলভারের পরিচালিত মতামত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে ২০২৪ সালে ট্রাম্পকে সমর্থন করার সময় জনমত জরিপে মাস্কের অনুমোদনের হার (নেট ফেভারেবিলিটি) ছিল শূন্য, নির্বাচনের দিন -২ শতাংশ, উদ্বোধনে -পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ এবং সম্প্রতি ১৪ জুলাই -২৩ শতাংশ।

মাস্কের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা কী ধরনের, তা স্পষ্ট নয়। তবে ট্রাম্পের কর ও ব্যয় বিল পাস হওয়ার পর মাস্ক "অ্যামেরিকা পার্টি" নামে দল গঠনের দিকে এগিয়েছেন। এই ধরনের দলের সফলতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক শতাব্দীর বেশি সময়ের দ্বি-দলীয় আধিপত্যকে পরিবর্তন করতে পারবে কিনা তা কেবল সময়ই বলবে ।

সাউথ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করায় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না, কিন্তু মার্কিন নাগরিক হিসেবে তিনি নিম্নতর পদে দাঁড়াতে পারেন। তিনি তার প্রভূত সম্পদের মাধ্যমে নীতি প্রভাবিত করার কাজও করতে পারেন। ইতিমধ্যে তিনি রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসির পুনর্নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থায়ন করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যে কজন রিপাবলিকান ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিলের' বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন, ম্যাসি তাদের মধ্যে একজন।

এসএসজি/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ