ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে মিত্রদের সাথে আলোচনায় ইউক্রেন
২২ নভেম্বর ২০২৫
ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাবের পর বিষয়টি নিয়ে কীভাবে এগোনো যায় তা নিয়ে মিত্রদের সাথে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে কিয়েভ৷ শান্তি প্রস্তাবকে দুই দেশের জন্য লাভজনক বলছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এটি মস্কোর দাবিদাওয়া পূরণ করছে৷
মার্কিন প্রসাশনের প্রস্তাবের পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, ইতিহাসের কঠিনতম সময়ের মুখে তার দেশ৷ যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব মেনে নিলে তাকে মর্যাদা হারাতে হবে অথবা অ্যামেরিকার মতো মিত্রকে হারাতে হবে৷
২৮ দফা প্রস্তাব দেওয়ার পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইউক্রেনকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিযেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কীভাবে এগোনো যায় তা নিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে আলোচলা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি৷
তবে মার্কিন প্রশাসনের ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাবের পর এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যেও৷ শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হওয়া জি২০ সম্মেলনে সাইডলাইনে বৈঠকে মিলিত হবেন ইউরোপীয় নেতারা, এমনটাই জানা গেছে৷
‘যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় আরো কাজ করতে হবে'
যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা৷ শনিবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে ইউক্রেনের মিত্ররা জানায়, এই প্রস্তাব নিয়ে আরো কাজ করতে হবে৷
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই৷ ২৮ দফা শান্তি চুক্তিতে থাকা বিষয়গুলো ন্যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ আর তাই আমরা মনে করি, ২৮ দফা এই খসড়াটি হলো একটি ভিত্তি, যা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে৷''
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে সেইসাথে ক্যানডা এবং জাপানের সরকারপ্রধানেরা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনছেন৷
‘শান্তি আলোচনা শুরু করবে ইউক্রেন'
এদিকে শনিবার ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী দিনগুলোতে শান্তি আলোচনা শুরু করবে ইউক্রেন৷ যদিও ঠিক কবে থেকে আলোচনা শুরু হবে তা বলা হয়নি৷
সামাজিক মাধ্যম এক্স প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘ইউক্রেন কখনোই এই যুদ্ধ চায়নি এবং যুদ্ধ থামাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে৷''
বিবৃততিতে আরো বলা হয়, ‘‘শান্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেন কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না৷ এরইমধ্যে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধি দলের এবং আলোচনার বিষয়বস্তুর অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি৷''
কী আছে যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ দফায়
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রস্তাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো, ক্রিমিয়া, লোহানস্ক এবং ডোনেটস্কসহ সেখানকার যে অঞ্চলগুলো এখনো রাশিয়ার সেনাবাহিনী পুরোপুরি দখলে নিতে পারেনি সেই অঞ্চলগুলো রাশিয়ার বলে (ডি ফ্যাক্টো) বিবেচিত হবে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এমনটাই বিবেচনা করবে৷
উল্লেখ্য ২০১৪ সাল থেকে ক্রিমিয়া দখলে রেখেছে রাশিয়া৷
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছয় লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে৷ দেশটি ন্যাটো যোগ দিতে পারবে না৷
বিপরীতে ইউক্রেনকে শক্ত নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে৷
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাবের সমালোচনা উদ্ভট কল্পনা: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো প্রস্তাবেই হত্যা বন্ধ করা এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি থাকতে হবে৷ সামাজিক যোগাগাযোগমাধ্যম এক্স প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন৷
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শান্তি প্রস্তাব রাশিয়ার অনূকূলে যাচ্ছে এমন সমালোচনার প্রত্যাখ্যান করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট৷
তিনি বলেন, ‘‘এক ধরনের উদ্ভট কল্পনা রয়েছে যে, আমরা যদি আরো বেশি অর্থ দিই, অস্ত্র দিই এবং আরো বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করি, তাহলে জয় আমাদের হাতের নাগালে৷ কাল্পনিক দেশে বসবাস করা ব্যর্থ কূটনৈতিক বা রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে শান্তি আসবে না৷ এটি বাস্তব পৃথিবীতে বাস করা স্মার্ট মানুষদের হাত ধরেই আসবে৷''
আরআর/টিএম (এপি, এএফপি, রয়টার্স ডিপিএ, কেএনএ)