যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করার পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রায় প্রতিদিনই ভারত নিয়ে মুখ খুলছেন৷
ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনিই মধ্যস্থতা করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন। যুদ্ধবিরতির প্রথম ঘোষণা তিনিই করেন। ছবি: Hindustan Times/Samuel Corum/Ahmad Kamal/picture allianc
বিজ্ঞাপন
তিনি নিয়মিত ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে, ভারতের বাণিজ্য শুল্ক কম করা নিয়ে, অ্যাপলকে ভারতে আইফোন না বানানোর পরামর্শ দিয়ে যা বলছেন, তাতে কি নরেন্দ্র মোদী সরকার বিপাকে পড়ছে? প্রতিদিনই বিরোধীরা ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে সরকারকে নানা প্রশ্ন করে যাচ্ছে৷
ট্রাম্প যা বলেছেন
ভারত ও পাকিস্তান যে সংঘাত থামিয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, সেই ঘোষণাটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বা দুই দেশের প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী অথবা সেনার তরফ থেকে আসেনি৷ নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোস্যালে এই ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ তারপর থেকে নিয়মিত এই যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব ট্রাম্প নিজেকে দিচ্ছেন এবং একাধিক মন্তব্য করেছেন৷
ট্রাম্প প্রথমে বলেছিলেন, ‘‘অ্যামেরিকার মধ্যস্থতায় হওয়া এক রাতের আলোচনার পর আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তারা বাস্তববোধ ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়েছে বলে দুই দেশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷''
ট্রাম্পের এই বার্তার পর ভারত, পাকিস্তান এবং গোটা বিশ্ব জানতে পারে, যুদ্ধবিরতি হয়েছে৷ তার পরের দিনই যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘আমি খুবই গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পেরেছে৷ আমি দুই দেশের সঙ্গেই কাজ করব৷ দেখতে চাই, হাজার বছর পরে কাশ্মীর সমস্যার কোনো সমাধান হয় কিনা৷''
কাশ্মীর সমস্যা হাজার বছর ধরে চলছে, এমন তথ্য ট্রাম্প কোথা থেকে পেয়েছেন, তা জানাননি৷ তবে এরপর ট্রাম্প জানান, বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়ে তিনি দুই দেশকে সংঘাত থামাতে বাধ্য করেন৷ এরপরেও ট্রাম্প থামেননি৷ তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যা ভয়াবহ হচ্ছিল৷ রোজ নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দেখা যাচ্ছিল৷ আমরা তা মিটিয়েছি৷ আমরা বলছি, এস বাণিজ্য করা যাক৷''
তারপর বৃহস্পতিবার ট্রাম্প দাবি করেছেন, প্রায় সব পণ্যে শুল্ক কমাতে ভারত রাজি হয়েছে৷ তারপর তিনি বলেছেন, অ্যাপল ভারতে যে আইফোন তৈরির কারখানা করছে, সে ব্যাপারে তার আপত্তি আছে৷ ভারত চড়া হারে শুল্ক বসায়৷ ফলে ব্যবসা করতে অসুবিধা হবে৷
কাশ্মীরে হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়তে থাকে উত্তেজনা৷ হামলার পর থেকে বিভিন্ন দেশের বাছাই করা প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই ছবিঘর...
ছবি: Tauseef Mustafa/AFP/Getty Images
পহেলগামে হামলায় নিহত ২৬
২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামের একটি পর্যটনকেন্দ্রে হামলায় ২৬ জন নিহত হন৷ আকস্মিক এই হামলার এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে৷ হামলার ঘটনার পর ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী এর দায় স্বীকার করে৷ ভারতের অভিযোগ, ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের’ সাথে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার যোগ রয়েছে৷
ছবি: ANI
ভারতের অভিযোগের আঙ্গুল পাকিস্তানের দিকে
ভারত মনে করে, সীমান্তের ওপাড় থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমকে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান৷ এ অভিযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চুক্তি বাতিলসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় তারা৷
ছবি: ANI
নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান পাকিস্তানের
হামলার ঘটনার পর দেশটির সেনেটে পাশ হওয়া এক রেজ্যুলেশনে সব ধরনের সন্ত্রাবাদী কার্যক্রমের নিন্দা জানায় পাকিস্তান৷ হামলার সাথে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে- ভারতের এমন অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায় দেশটি৷ ভারতের পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও বেশ কিছু পালটা পদক্ষেপ নেয়৷
ছবি: Pakistan's Prime Minister Office/AP Photo/picture alliance
জাতিসংঘের নিন্দা
হামলার পর এক বিবৃতিতে এর নিন্দা জানায় জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষ থেকে তার মুখপাত্র বলেন, ‘‘জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হাতহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন৷’’ কোনো পরিস্থিতিতেই সাধারণ মানুষের উপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়- জাতিসংঘের মহাসচিব তা মনে করেন বলেও তার মুখপাত্র জানান৷
কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে ঘটনার নিন্দা ও সমবেদনা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, ভারতের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে৷’’ তিনি বলেন, ''তারা কোনো না কোনোভাবে একটি পথ খুঁজে নেবে৷’’ দুই দেশের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বানও জানায় হোয়াইট হাউস৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
হামলার নিন্দা চীনের, তদন্তের দাবিতে সমর্থন
হামলার ঘটনার পর এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়া জিয়াকুন বলেন, ‘‘চীন সব ধরনের সন্ত্রসবাদের বিরোধী৷’’ পাকিস্তানের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবির প্রতিও সমর্থন জানিয়েছে চীন৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইসাক দারের সাথে ফোন কলে বলেন, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার সুরক্ষায় চীনের সমর্থন রয়েছে৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই কথা বলা হয়৷
ছবি: Kevin Frayer/Getty Images
জার্মানির তীব্র নিন্দা
হামলার ঘটনার পর জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আমরা পহেলগামে পযটকদের উপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই৷’’ বার্তায় শলৎস ভারতের জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেন৷
ছবি: Stephanie Lecocq/REUTERS
মধ্যস্ততার প্রস্তাব ইরানের
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরান৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোন কলে হামলার নিন্দা জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেসকিয়ান৷ এদিকে ভারত-পাকিস্তানের সাথে শতাব্দী প্রাচীন সভ্যতার যোগসূত্রের উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্ততার প্রস্তাব দেন৷
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক৷ প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান বলেন, ‘‘কাশ্মীর বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা খারাপ পরিস্থিতির দিকে মোড় নেওয়ার আগেই তা দ্রুত প্রশমিত হওয়া উচিত৷’’ এদিকে ভারতের বেশ কিছু গণমাধ্যমে তুরস্ক থেকে পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো হয়েছে- এমন প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে তুরস্ক সরকার জানায়, জ্বালানির নিতে একটি কার্গো বিমান পাকিস্তানে অবতরণ করেছিল৷
ছবি: Emin Sansar/Anadolu Agency/picture alliance
হামলার নিন্দায় আরো যেসব দেশ
হামলার ঘটনার দিনে সৌদি আরব সফরে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফেরেন তিনি৷ অন্যান্য দেশের মধ্যে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইসরায়েল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশও পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায়৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
কংগ্রেস ও বিরোধীদের দাবি
লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক৷ সেখানে পহেলগাম, অপারেশন সিঁদুর এবং যুদ্ধবিরতি যা প্রথমে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে আলোচনা হবে৷ সব বিরোধী দল এটাই চাইছে৷
সব বিরোধী দল পহেলগামের পর স রকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, অপারেশন সিঁদুর সমর্থন করেছিল৷ যুদ্ধবিরতির পর তারা এবার প্রশ্ন করতে শুরু করেছে৷
রাজ্যসভার নেতা এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও একই দাবি করেছেন৷ গত ১৪ মে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে প্রত্যাঘাত করছিল, তা হঠাৎ থামিয়ে দেয়ায় আমরা বিস্মিত৷ এটা স্পষ্ট হচ্ছে না৷ ফলে গুজব ছড়াচ্ছে৷ ডনাল্ড ট্রাম্প সবচেয়ে আগে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেছেন৷ তিনি দাবি করেছেন, তিনিই দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপন করেছেন৷ তিনি বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়ে ভারতকে চাপ দিয়েছিলেন৷ ভারত সরকার পুরো চুপ করে আছে৷ এটা মেনে নেয়া যায় না৷ অতীতে ভারতের সব সরকার দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, কাশ্মীর হলো ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা৷ তৃতীয় কোনো দেশের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না৷ ট্রাম্পের দাবি ভারত খণ্ডন করেনি৷ আমরা মনে করি, আমাদের জাতীয় অবস্থান ও সম্মানের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে৷''
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল শুল্ক-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন গেছেন৷ ট্রাম্প দোহা থেকে দাবি করছেন৷ সরকার চুপ করে আছে৷''
লালু প্রসাদ যাদবের আরজেডি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা কংগ্রেসের দাবি সমর্থন করেছে৷ তেজস্বী যাদব বলেছেন, ‘‘সংসদ থেকে একটা স্পষ্ট বার্তা যাওয়া দরকার৷ বাণিজ্যের নামে আমরা কখনো ঝুঁকব না৷ আমরা সার্বভৌম দেশ৷ আমাদের তৃতীয় কোনো দেশের হস্তক্ষেপের দরকার নেই৷ আর কেউ যেন অর্থহীন সরপঞ্চ হওয়ার চেষ্টা না করেন৷''
উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে, আমরা কোন প্রতিশোধ নিয়েছি? কেন কোনো তৃতীয় পক্ষ সংঘাত থামাবে, কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থামাতে পারেন না? আমাদের দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোনো দেশের নেই৷''
বিজেপি-র তিরঙ্গা যাত্রা
বিজেপি দেশজুড়ে তিরঙ্গা যাত্রা শুরু করেছে৷ অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য দাবি করে এই যাত্রা হচ্ছে৷ এই বছরই বিহারে বিধানসভা ভোট৷ ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে, ২০২৭ সালে উত্তরপ্রদেশে, ২০২৮ সালে কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হবে৷ ফলে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াই সামনে আছে৷ সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিজেপি অপারেশন সিঁদুরের বিজয়োৎসব পালন করছে৷
এর মধ্যে বিজেপি সাংসদ অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘ট্রাম্প হলেন আলফা মেল, মোদী হলেন আলফা মেল কা বাপ৷'' পরে এই পোস্ট ডিলিট করে তিনি বলেছেন, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা তাকে পোস্টটি ডিলিট করতে বলেছেন৷ তিনি ব্যক্তিগত মতামত এভাবে পোস্ট করায় দুঃখিত৷ পোস্টটি ডিলিট করে দেয়া হলো৷
কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছেন, ‘‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে কথা চলছে৷ এটা জটিল আলোচনা৷ কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ দুই পক্ষের লাভ হয় এমন বাণিজ্যচুক্তি করা হবে৷''
বিপাকে ফেলে দিয়েছেন ট্রাম্প?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ট্রাম্প এই মন্তব্য করে ‘‘ভারতকে ধরাশায়ী করে দিয়েছেন৷ ভারত আঞ্চলিক প্লেয়ার থেকে আন্তর্জাতিক প্লেয়ার হতে চাইছিল, জি২০তে গুরুত্ব পাচ্ছিল, বিশ্বগুরু নিয়ে কথা হচ্ছিল, সেই ভারতকে বিশাল ধাক্কা দিয়েছেন ট্রাম্প৷''
পাকিস্তানে ভারতের হামলা, বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
বুধবার রাতে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী৷ ভারত সরকারের দাবি, ‘জঙ্গি আস্তানা’ লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে৷
ছবি: Punit Paranjpe/AFP/Getty Images
এটা লজ্জানক, আশা করি দ্রুতই থামবে: ট্রাম্প
বুধবার রাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভারতের হামলার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘‘এটি লজ্জাজনক৷ মাত্রই এ বিষয়ে শুনতে পেলাম৷’’ তিনি বলেন, ‘‘তারা দশকের পর দশক ধরে বিতণ্ডায় লিপ্ত৷ আমি আশা করি এটি দ্রুতই থামবে৷’’
ছবি: Evan Vucci/AP/picture alliance
উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ মহাসচিব
হামলার বিষয়ে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘‘লাইন অব কন্ট্রোল, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমানায় ভারতের সামরিক অভিযানের বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব খুবই উদ্বিগ্ন৷’’ বিবৃতিতে দু’দেশের প্রতিই সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানানো হয়৷ জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র আরো বলেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তানের এমন সামরিক সংঘাত বিশ্ব সামলাতে পারবে না৷’’
ছবি: Richard Drew/AP Photo/picture alliance
‘দুঃখজনক’ বললো চীন
হামলার ঘটনার পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বুধবার প্রথম প্রহরে ভারতের সামরিক অভিযান দুঃখজনক৷ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন৷’’ বিবৃতিতে ওই মুখপাত্র শান্তি রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান৷
ছবি: Pavel Bednyakov/REUTERS
দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জার্মানির
ভারত এবং পাকিস্তানকে উত্তেজনা আর না বাড়ানোর আহ্বান জানিযেছে জার্মানি৷ সেইসাথে দেশটির নাগরিকদের ওই অঞ্চল ভ্রমণ না করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা এবং ভারতের সামরিক পদক্ষেপের পর, দুই দেশেরই দায়িত্বশীল আচরণ করা জরুরি৷
ছবি: Michael Kuenne/PRESSCOV/Zumapress/picture alliance
সংযম প্রদর্শনের আহ্বান ফ্রান্সের
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টিএফ১-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন-নুয়েল বারো সংঘাত ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহান জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ থেকে নিজেদের সুরক্ষা দিতে ভারতের ইচ্ছার বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি৷ তবে আমরা অবশ্যই ভারত এবং পাকিস্তানকে উত্তেজনা কমাতে এবং বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা দিতে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই৷’’
ছবি: Magali Cohen/Hans Lucas/AFP/Getty Images
উত্তেজনা নিরসনে সহায়তার প্রস্তাব যুক্তরাজ্যের
ভারত ওবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান অস্থিরতা নিরসনে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্য৷ বুধবার রাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এমন প্রস্তাব দেন যুক্তরাজ্যের ট্রেড সেক্রেটারি জোনাথন রেনল্ডস৷ বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বার্তা হলো, আমরা উভয় দেশের বন্ধু. সঙ্গী৷ দুই দেশকে সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত৷’’
ছবি: House of Commons/UK Parliament/PA Wire/picture alliance
‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার সমর্থন করে ইসরায়েল’
ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় বলেন, ‘‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরায়েল৷ সন্ত্রাসীদের জানা উচিত যে, নিরীহ মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর লুকিয়ে থাকার কোনো জায়গা নেই৷’’
ছবি: Valerio Rosati/Zoonar/picture alliance
চাল সরবারাহ নিয়ে উদ্বেগে মালয়েশিয়া
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বা উত্তেজনার ফলে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে চালের আমদানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ডেটুক সেরি মোহামাদ সাবু৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের (ভারত ও পাকিস্তানের) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মালয়েশিয়ার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জরুরি৷’’ উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার আমদানিকৃত চালের প্রায় ৪০ ভাগ ভারত ও পাকিস্তানের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Thian
‘শান্ত ও সংযত’ থাকার আহ্বান বাংলাদেশের
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ৷ বুধবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের এই উদ্বেগের কথা জানায়৷ একইসঙ্গে দুই দেশকে শান্ত ও সংযত থাকা এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW
পাকিস্তানে ভারতের হামলা
কাশ্মীরে ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলার জবাবে যে-কোনো সময়ই পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে ভারত- এমন কথা বলা হচ্ছিল৷ এরই ধারাবাহিকতায়, ৭ মে, বুধবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত৷ ভারত সরকার বলছে, সুনির্দিষ্ট জঙ্গি আস্তানায় হামলা চালিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী৷ হামলায় ২৬জন নিহত হয়েছেন বলে পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়৷
ছবি: Narinder Nanu/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘ইন্দিরা গান্ধীকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন, ১৯৭১-এ যুদ্ধ বন্ধ করতে৷ ইন্দিরা শোনেননি৷ অ্যামেরিকা সেভেন ফ্লিট পাঠায়৷ তাও ইন্দিরা পিছু হটেননি৷ আর এবার বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের হুমকিতেই যুদ্ধবিরতি হয়ে গেলো!''
বিশ্বনাথ বলছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র ভূরাজনৈতিক কারণে ভারতকে প্রধান পার্টনার করেছিল৷ ভারতকে সঙ্গে নিয়ে কোয়াড তৈরি হয়৷ ট্রাম্প পুরো বদলে দিলেন৷ তিনি পুরনো বন্ধু হিসাবে পাকিস্তানকে রিভাইভ করলেন৷ ক্লিন্টনের সময় থেকে ভারত যে প্রাধান্য পাচ্ছিল, সেখান থেকে সরে এলেন ট্রাম্প৷ আজ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট যদি অ্যাপলকে ভারতে বিনিয়োগ করতে মানা করেন, তারপরে তারা কি তাকে অমান্য করে এই বিনিয়োগ করতে পারে?''
শরদের মতে, ‘‘প্রতিবার যুদ্ধের পর ভারতে একটা ইউফোরিয়া থাকে৷ এবার নেই৷ এমনকী কার্গিলের পরও তা ভরপুর ছিল৷ পোখরান ২-এর পর ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল৷ কিন্তু ভারত তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি৷ এবার কী হলো, যার জন্য ট্রাম্পের বাণিজ্য হুমকি মেনে নিতে হলো?''
যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘‘প্রশ্ন হলো, ভারত ও পাকিস্তান কি যুদ্ধবিরতি করেছে, নাকি অ্যামেরিকা করিয়েছে? যদি ভারত ও পাকিস্তান এই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সবচেয়ে আগে ট্রাম্প কী করে ঘোষণা করেন? যদি দুই দেশ সিদ্ধান্ত নেয়., তাহলে তৃতীয় পক্ষ কী করছিল? কী করে ট্রাম্প দাবি করেন, অ্যামেরিকা হস্তক্ষেপ করে সংঘাত থামিয়েছে৷ তাহলে তো মানুষের জানার অধিকার আছে, কে যুদ্ধ বন্ধ করালো? ভারতের এতদিনের অবস্থান তো ছিল, তৃতীয় কোনো পক্ষকে তারা কাশ্মীরের বিষয়ে ঢুকতে দেবে না৷ তাহলে কি অবস্থান বদলেছে৷''
যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘‘অ্যামেরিকা বলছে, এরপর তৃতীয় কোনো নিরপেক্ষ দেশে ভারত ও পাকিস্তান আলোচনায় বসবে এবং কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করবে৷ অথচ, প্রধানমন্ত্রী কিছু বলছেন না৷ ট্রাম্প বলেছেন, এই সমঝোতা বাণিজ্যের শর্তে হয়েছে৷ ট্রাম্প যা বলছেন, তা কি সত্যি, এটা তো সরকারকে বলতে হবে৷''