অ্যামাজন, ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট সহ প্রায় ১৬০টি কোম্পানি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে৷ তাদের মতে, এই বৈষম্য শুধু সংবিধান বিরোধী নয়, এতে অর্থনীতির ক্ষতি হবে৷
বিজ্ঞাপন
নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে অ্যামেরিকায় প্রবেশ বন্ধ করতে একের পর এক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ মুসলিম-প্রধান দেশগুলির এই তালিকায় রদবদল ঘটেছে৷ কখনো সরাসরি সেই সব দেশে বসবাসরত মানুষের প্রতি ঢালাও বৈষম্য দেখাচ্ছে তার প্রশাসন, কখনো জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে আসা বিমানে ল্যাপটপ-এর মতো ডিভাইস বহনের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হচ্ছে৷ কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপই আইনি বাধার মুখে পড়ছে৷
বিশেষ করে প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানিগুলি ‘ট্রাভেল ব্যান'-এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়ে উঠেছে৷ ১৬০টিরও বেশি কোম্পানি ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে৷ ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যের বিরোধিতার পাশাপাশি তাদের মতে, অ্যামেরিকায় প্রবেশের নিয়ম বদলানোর সরাসরি ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের নেই৷ এ সংক্রান্ত তাঁর দ্বিতীয় নির্বাহী আদেশের ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলি ও তাদের কর্মীর ক্ষতি তো হচ্ছেই, সামগ্রিকভাবে গোটা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তাছাড়া এর ফলে প্রতিভাধর কর্মীদের আকর্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে, কোম্পানিগুলির ব্যয়ভার বেড়ে যাচ্ছে এবং প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের ক্ষতি হচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলি সেই সব দেশে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হবে, যেখানে অভিবাসনের নিয়ম অনেক নমনীয়৷
এদিকে নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে অ্যামেরিকাগামী বিমানে ল্যাপটপ সহ কিছু ডিভাইস নিষিদ্ধ করার ফলে বেকায়দায় পড়েছে সে সব দেশের বিমান সংস্থা৷ চাহিদা কমে যাওয়ায় দুবাই-ভিত্তিক বিমান সংস্থা এমিরেটস অ্যামেরিকাগামী উড়ালের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
উল্লেখ্য, শুধু ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা নয়, ট্রাম্প প্রশাসনের অন্য কিছু সিদ্ধান্তও মার্কিন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক বলে মনে করছে ব্যবসা-বাণিজ্য জগত৷ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার জোরালো ইঙ্গিত দেওয়ার পর মার্কিন জ্বালানি কোম্পানিগুলিও দুশ্চিন্তায় পড়েছে৷ এক্সন মোবিল গত মাসে এক চিঠিতে কার্বন নির্গমন কমানোর উদ্যোগে অ্যামেরিকার শামিল হওয়ার গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করে৷ এই কাঠামোর আওতায় প্রতিযোগিতার বাজারে অ্যামেরিকার থাকা জরুরি বলে এক্সন মনে করে৷
বেকায়দায় ট্রাম্প, চারিদিকে অরাজকতা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবার পরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন, কখনো প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জেরবার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প টিম-এর সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সহ একাধিক মহলের যোগসূত্র নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে৷ এর মধ্যে জাতীয় উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফ্লিনকে বিদায় নিতে হয়েছে৷ একাধিক তদন্তের মুখে পড়েছেন অভিযুক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Lovetsky
ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা
কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণের উপর তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প৷ আদালতের হস্তক্ষেপে প্রথম নির্বাহী আদেশ বাতিল হবার পর দ্বিতীয়টিও থামিয়ে দিয়েছে আদালত৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
স্বাস্থ্য বিমা বিপর্যয়
তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ বা পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে স্বাস্থ বিমা খাতে যে সংস্কার চালানো হয়েছিল, তা বাতিল করতে বদ্ধপরিকর ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে রিপাবলিকান দলেরই একটা অংশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিকল্প আইনের বিরোধিতা করায় এ যাত্রায় হাত পুড়িয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে এখনো হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
স্বজনপোষণ
প্রচলিত বিধিনিয়ম উপেক্ষা করে জামাই ও মেয়েকে হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টার পদ দিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সমালোচকদের মতে, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের সংঘাত এক্ষেত্রে অনিবার্য৷ অবৈতনিক ফেডারেল কর্মী হিসেবে তাঁরা অনেক রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যেরও নাগাল পেতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Thew/Epa
পরিবেশের ক্ষতি
বহু বছর ধরে দরকষাকষির পর জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের দেশগুলি প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ সেই ঐকমত্যের পেছনে ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগ নস্যাৎ করে ট্রাম্প পরিবেশের ক্ষতি করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Thibault Camus
ক্ষমতার অহমিকা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বার বার ‘একলা চলো রে’ নীতির পথে চলার চেষ্টা করছেন৷ চটজলদি সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে চান তিনি৷ নিজের মন্ত্রিসভা তো নয়ই, এমনকি রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষের সঙ্গেও আলোচনা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন তিনি৷ এই অবস্থায় প্রশাসনের ভিতর থেকেই অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Barria
প্রশাসনে অরাজকতা
একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে প্রশাসনের কাঠামোর মধ্যে কোনো স্পষ্ট নীতি বা বিভিন্ন বিষয়ে ধারাবাহিকতার অভাব বার বার প্রকট হয়ে উঠছে৷ এমনকি খোদ ট্রাম্প অনেক বিষয় পুরোপুরি না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ এমন অরাজক পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় লোকবলের অভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/A. Harnik
জনপ্রিয়তার অভাব
সাম্প্রতিক কালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্যকালের প্রথম পর্যায় জনমত সমীক্ষায় এমন বিরোধিতার সম্মুখীন হননি৷ এমনকি রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন৷ বিচার বিভাগ বার বার হস্তক্ষেপ করছে৷ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের বৈরি সম্পর্ক পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে৷