ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হ্য়ারিস, বাইডেনের সমর্থন
২৩ জুলাই ২০২৪
নির্বাচনি লড়াই থেকে বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর সরাসরি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করলেন হ্য়ারিস।
বিজ্ঞাপন
আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তিনি ডেমোক্র্য়াটদের তরফে মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নন। জো বাইডেন নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর পর অনেকেই মনে করছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্য়ারিস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য় ডেমোক্র্য়াটদের তরফে লড়বেন। কিন্তু এখনো তা স্পষ্ট হয়নি।
কিন্তু সে দিকে না তাকিয়ে হ্য়ারিস নিজের মতো করে নির্বাচনি প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। সোমবার ডেলাভেয়ায় প্রচারে গিয়ে হ্য়ারিস বলেছেন, ক্ষমতায় এলে দুইটি বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন তিনি। এক, মধ্যবিত্তের আর্থিক উন্নতি এবং দুই অ্যাবরশন আইনের পরিবর্তন।
এদিকে, ওই সভায় নির্বাচনি সহায়কদের ফোন করেছিলেন জো বাইডেন। তাদের তিনি জানিয়েছেন, কমলা হ্য়ারিসকে সবরকমভাবে সাহায্য় করতে। তিনি চান, কমলা হ্য়ারিসই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের যেসব দিকে নজর সবার
গত কয়েকমাসে প্রতিনিধি বাছাই, নির্বাচনি প্রচারণা এবং তহবিল সংগ্রহের নানা উদ্যোগ দেখা গেছে মার্কিন মুল্লুকে৷ এবার মধ্যবর্তী নির্বাচন ওয়াশিংটনে ক্ষমতার ভারসাম্য ঠিক করে দেবে৷ নির্বাচনে গুরুত্ব পাচ্ছে নানা কিছু৷ চলুন দেখি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
মধ্যবর্তী নির্বাচন মঙ্গলবার
২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন মূলত অনুষ্ঠিত হচ্ছে মঙ্গলবার৷ এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা ব্যাপক সমর্থন পাওয়ার আশা করছেন৷ অন্যদিকে, কংগ্রেসে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ডেমোক্রেটরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে৷ অর্থনীতির দুরবস্থা, অপরাধ, প্রেসিডেন্টের কারিশমা, গর্ভপাত আইনের মতো বিষয়াদি এই নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Brandon Bell/REUTERS
লালদের জনপ্রিয়তা কি বাড়ছে?
মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পক্ষে সমর্থন বাড়বে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ কিন্তু সেটার বিস্তৃতি কতটা হবে তা এক্ষুণি বলা মুশকিল৷ মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজনৈতিক বিভাজন বাড়ায় ভোটারদের মধ্যে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা কাজ করছে৷ আর ইতিহাস বলছে ভোটাররা সাধারণত ক্ষমতাসীনদের উপরেই তাদের হতাশার দায় চাপায়৷
ছবি: Eva Marie Uzcategui/AFP/Getty Images
ডেমোক্রেটদের আশা গর্ভপাত আইন
ডেমোক্রেটরা আশা করেছিলেন যে গর্ভপাতের অধিকার বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা হারানোর ঐতিহাসিক ধারায় বিঘ্ন ঘটাবে বা ক্ষতি কমাবে৷ কিন্তু নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে এই আশা ততটাই কমেছে বলে মনে হয়েছে৷ রিপাবলিকান দলে গর্ভপাতবিরোধী যারা আছেন তাদের ভোট কমতে পারে৷
ছবি: Getty Images/E. Nouvelage
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে রিপাবলিকানরা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হতে পারে৷ এজন্য দলটির আরো পাঁচটি আসন প্রয়োজন৷ হয়ত এরচেয়ে বেশি আসনও পেয়ে যেতে পারে দলটি৷ আর এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে ডেমোক্রেটদের কিছু এলাকায় বেশ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন রিপাবলিকানরা৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP
সিনেট জয় আরো সহজ
মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্রেটদের অবস্থা আরো নাজুক৷ রিপাবলিকানরা আরেকটি আসন পেলেই উচ্চকক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Schwenkenbecher
ল্যাটিনো ভোটাররা কি আরো ডানে সরবে?
২০২০ সালের নির্বাচনে ল্যাটিনোদের সমর্থন খুব একটা পায়নি ডেমোক্রেটরা৷ কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি বদলাবে এমন আশাও করা যাচ্ছে না৷ কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মেক্সিকো-মার্কিন সীমান্ত সমস্যার তেমন কোনো সমাধান দিতে পারেননি৷ অন্যদিকে, এই গোষ্ঠীর মধ্যে রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থন বেড়ে চলেছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখনো রিপাবলিকান পার্টিতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন৷ যদিও তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যালটে নেই, তার সমর্থন পাওয়া বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন৷ এই প্রার্থীরা যদি ভালো না করেন তাহলে ২০২৪ সালে আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের লড়াই করার সম্ভাবনা প্রশ্নবিদ্ধ হবে৷
ছবি: Kyle Mazza/AA/picture alliance
২০২৪ এর নির্বাচনের রূপরেখা
মার্কিন এই মধ্যবর্তী নির্বাচন কার্যত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলগুলোর অবস্থান কী হতে যাচ্ছে তা ঠিক করে দেবে৷ রিপাবলিকানরা বড় জয় পেলে ট্রাম্পের আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের পথ তৈরি হতে পারে, অন্যদিকে ডেমোক্রেটদের দুর্বল ফলাফল বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে টিকে থাকার লড়াই কঠিন করে দেবে৷
ছবি: Saul Loeb/AFP
8 ছবি1 | 8
ডেমোক্র্য়াটদের একটি বড় অংশ কমলা হ্য়ারিসকে সমর্থন করবেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আগামী অগাস্ট মাসে শিকাগোয় ডেমোক্র্য়াটদের নির্বাচনি কনভেনশন। সেখানেই স্থির হবে পরবর্তী ডেমোক্র্য়াট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কে হবেন? বাইডেন এদিন আবার জানিয়েছেন যে, নির্বাচনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে কোনো ভুল নেই।
মঙ্গলবারই হোয়াইট হাউসে ফেরার কথা বাইডেনের। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এর আগে প্রচার বন্ধ রেখে ডেলাভেয়ার বাড়িতে চলে গেছিলেন বাইডেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি এখন সুস্থ। তাই মঙ্গলবার তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরে যেতে পারেন।
হ্য়ারিসের সমর্থন
ডেমোক্র্য়াট প্রতিনিধিদের প্রায় দুই হাজার ২১৪ জনের সমর্থন হ্য়ারিসের সঙ্গে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রতিনিধিরাই হ্য়ারিসকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবেন। মনে করা হচ্ছে, অগাস্টের আগেই তারা ভারচুয়াল ভোটের মাধ্য়মে হ্য়ারিসের প্রতি সমর্থন জানাবেন।
এদিকে অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়ন এএফএল-সিআইও হ্য়ারিসকে সম্পূর্ণ সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। অ্যামেরিকার ৬০টি ট্রেড ইউনিয়নকে নিয়ে তৈরি এই মঞ্চ। সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ মানুষ এই ইউনিয়নের অংশ। সোমবার তারা ঘোষণা করেছে, কমলা হ্য়ারিসকে তারা পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে সমর্থন করবেন।
এর আগে ডনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন ইউনিয়নকে রিপাবলিকানদের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। রিপাবলিকান কনভেনশনে টিমস্টারের প্রেসিডেন্ট বক্তৃতা করেছিলেন। টিমস্টারে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ আছেন। কিন্তু টিমস্টারের প্রেসিডেন্ট শেষপর্যন্ত কাকে সমর্থন করবেন, তা স্পষ্ট করেননি।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক
আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আসবেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্য়ারিস তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। জো বাইডেনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন নেতানিয়াহু। তার আগে হ্য়ারিসের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে।
নেতানিয়াহু বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে বক্তৃতাও করতে পারেন। তবে হ্য়ারিস সেখানে সভা পরিচালনার কাজ না-ও করতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।