গত পনেরো দিন ধরে ট্রাম্প প্রশাসন তাড়াহুড়ো করে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাদের নীতি রূপায়ণ করতে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সপ্তাহে তারা ইরানের সাহায্যপ্রাপ্ত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে, ডিসেম্বরে একজন ইরাকি ও একাধিক ইরানি কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পশ্চিম সাহারার বিতর্কিত এলাকায় মরক্কোর সার্বভৌমত্বও স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।
এ সবই করা হয়েছে ইরানকে কোণঠাসা করতে এবং ইসরায়েলকে সাহায্য করতে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সব পদক্ষেপকে সম্ভবত মার্কিন ভোটদাতাদের একটি অংশ সমর্থন করবে। তা সত্ত্বেও এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবল সমালোচনাও হচ্ছে।
ট্রাম্পের নীতির প্রতিক্রিয়া
ব্রাসেলসের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ক্রাইসিস গ্রুপ গত সপ্তাহে বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা তাড়াহুড়ো করে যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী হবে। তাদের যুক্তি, হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে ইয়েমেনে যে এইড এজেন্সিগুলি কাজ করছে, তাদের অসুবিধা হবে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তার মতে, এর ফলে সেখানে বড়সড় দুর্ভিক্ষ হতে পারে। গত ৪০ বছরের মধ্যে এই দুর্ভিক্ষ হবে সব চেয়ে তীব্র।
ইরাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে. গত সপ্তাহে ফতেহ আল-ফায়াদের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তা মানা যায় না। এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে তাঁরা অবাক হয়ে গেছেন। আল-ফায়াদ হলেন স্থানীয় একটি আধাসামরিক বাহিনী পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সের প্রধান। ইরান তাদের সমর্থন করে। বিশ্লেষক সাজাদ জিয়াদ ২০২০ সালের জুলাইতে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, ''মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরাকি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিক্রিয়া হবে। এর ফলে মার্কিন বাহিনীর ইরাক ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রবল চাপ তৈরি হবে।''
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
মরক্কো নিয়ে সিদ্ধান্তের সমালোচনা
পশ্চিম সাহারার উপর মরক্কোর দাবি দীর্ঘদিনের। এটা হলো সব চেয়ে বেশিদিন ধরে চলা আঞ্চলিক বিবাদ। মরক্কোর দাবি মেনে নেয়ার পর ট্রাম্প প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। মনে করা হচ্ছে, মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করার ফলে তাদের এই উপহার দিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শদাতা জন বল্টনের মতে, ''এটা হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং খুব নগ্নভাবে দেয়া-নেয়ার নীতি।'' বিদেশ নীতি সংক্রান্ত একটি পত্রিকায় বল্টনের নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা প্রোগ্রামের ডিরেক্টর জুলিয়ান বার্নেস-ডেসি বলেছেন, ''ট্রাম্পের খেলা হলো, বিদেশনীতির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নীতি মিশিয়ে দেয়া। যখন পদে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, তখন ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা দেখানোর চেষ্টা করছে। ট্রাম্প কিছু উত্তরাধিকার রেখে যেতে চান। তিনি অ্যামেরিকাকে একটি নির্দিষ্ট দিকে এমনভাবে নিয়ে যেতে চান, যাতে বাইডেন এসেও তার বদল করতে না পারেন।''
বাইডেন প্রশাসন কি এই সব সিদ্ধান্ত বদলাতে পারবেন? যদি তারা বদলাতে চান, তা হলে কতদিনে তা হবে এবং এই প্রক্রিয়া কতটা জটিল হবে?
বদল করতে মাত্র একদিন লাগে
বার্লিনের হের্টি স্কুলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক মেরিনা হেনকের মতে, ''তত্ত্বগতভাবে কিছু পরিবর্তন করা খুবই সহজ। টেকনিক্যালি, একদিনেই অনেক সিদ্ধান্ত বদল করা যেতে পারে।''
যেমন, মরক্কো নিয়ে ট্রাম্প একটি ঘোষণা করেছেন মাত্র। মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদন না করলে, এটা আইনি রূপ পেতে পারে না। নতুন প্রেসিডেন্ট আরেকটি ঘোষণার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারেন।
প্রশাসনিক নির্দেশ ও প্রেসিডেন্টের মেমোরেন্ডামও একইভাবে কাজ করে। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তা বদলে দিতে পারেন।
তুলনায় কোনো বিদেশি সংস্থাকে একবার সন্ত্রাসবাদী চিহ্নিত করার পর তার থেকে সরে আসার পদ্ধতি কিছুটা জটিল। সেক্ষেত্রে বিদেশমন্ত্রী প্রথমে জানাবেন, তিনি সিদ্ধান্ত বদলাতে চান। তারপর কংগ্রেসের হাতে সাতদিন সময় থাকবে আপত্তি জানানোর। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস গত রোববারের মধ্যে আপত্তি জানাতে পারত। তবে তারা জানায়নি।
‘পিছু হটেছে’ ইরান, বললেন ট্রাম্প
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় ৮০ জন নিহতের তথ্য জানালেও ট্রাম্প বললেন ভিন্ন কথা৷ ভাষণে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন বা ইরাকি নিহত হননি৷ ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশগুলো দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
প্রতীক্ষিত ভাষণ
ইরানের হামলার পরপরই বেশ কিছু দেশ তাদের কোনো সৈন্য নিহত হয়নি জানালেও, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ রাতে টুইট করে ‘সব ঠিক আছে’ বললেও ক্ষতির পরিমাণ অ্যামেরিকার স্থানীয় সময় সকালে জানাবেন বলেও জানান ট্রাম্প৷ ভাষণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক স্পেনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন ট্রাম্পের পাশে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
‘ইরান পরমাণু অস্ত্র পাবে না’
ভাষণের প্রথম বাক্যেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি যতদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আছি, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেয়া হবে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পরমাণু বোমার পেছনে ছুটে ইরান ‘সভ্য’ বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে৷ আমরা তা কখনও হতে দেবো না৷’’
ট্রাম্প জানান, ইরানের হামলায় কোনো অ্যামেরিকান বা ইরাকি আঘাতপ্রাপ্ত হননি৷ কেউই হতাহতও হননি৷ সব মার্কিন সৈন্য নিরাপদে আছে এবং সেনা ঘাঁটিতেও খুব সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতার জন্য মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Nasser
‘পিছু হটেছে’ ইরান
মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘মহান’ এবং শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শক্তি থাকলেই তা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি মনে করেন না৷ ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরান ‘পিছু হটেছে’ বলে মনে করেন ট্রাম্প৷ ইরানের এমন অবস্থান সকল পক্ষ এবং বিশ্বের জন্যেও ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Mehr
‘সন্ত্রাসী সোলেইমানি’
ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে বিশ্বের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, হেজবুল্লাহর মতো ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখা এবং হাজার হাজার মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ ছিল সোলেইমানির বিরুদ্ধে৷
ইরানের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি ‘ছুঁড়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেন৷ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো- জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনকেও চুক্তি বাতিল করতে আহ্বান জানালেন ট্রাম্প৷ সোলেইমানি হত্যার পর ইরান এ চুক্তি না মানার ঘোষণা দিয়েই রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
‘চুক্তির টাকায় সন্ত্রাস’
ট্রাম্প দাবি করেন, পরমাণু চুক্তির ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাওয়া অর্থে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ চালাচ্ছিল ইরানের বর্তমান সরকার৷ তিনি বলেন, এর ফলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান এবং ইরাক ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে৷
ছবি: AFP/Iranian Presidency
আরো অবরোধ
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷এই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি৷ নতুন অবরোধ কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উঠে আসেনি তার বক্তব্যে৷ তবে ইরান তার ‘ব্যবহার’ পরিবর্তন করার আগ পর্যন্ত এ অবরোধ জারি থাকবে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
নতুন অস্ত্র আসছে
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট ন্যাটোকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ নিজের প্রশাসনের অধীনে আড়াই লাখ কোটি ডলার খরচ করে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ আমাদের বড়, শক্তিশালী, নির্ভুল, প্রাণঘাতি এবং দ্রুতগামী মিসাইল রয়েছে৷ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/U.S. Department of Defense/S. Apel
ইরানের প্রতি আহ্বান
ভাষণের শেষে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এবং জনতাকে সম্বোধন করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইরানিদের জন্য ‘দারুণ’ এক স্বপ্নের ভবিষ্যত চান তিনি৷ যারা শান্তি চায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে অ্যামেরিকা সর্বদা প্রস্তুত বলেও ভাষণে বলেন ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
10 ছবি1 | 10
জঙ্গিদের সঙ্গে কথা?
হেনকে বলেছেন, কংগ্রেস অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এখানেই বিষয়টি কিছুটা জটিল হয়ে যাচ্ছে। তাঁর মতে, ''পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে যেসব বিষয় ভোট আনতে পারে, তা নিয়ে ট্রাম্পের বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পেও একটি ন্যারেটিভ তৈরি করেছেন। যেমন, ইরান, চিন ও কিউবা। বাইডেন যদি এই সব নীতি নিয়ে তাড়াহুড়ো করেন, তা হলে রিপাবলিকানরা বলবেন, বাইডেন আসলে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছেন। তবে তাঁরা যদি কিছুদিন অপেক্ষা করেন, তা হলে প্রেসিডেন্ট বিতর্ক ছাড়া এই সিদ্ধান্ত বদল করতে পারবেন।''
আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক নিয়ে
বিদেশনীতির কয়েকটি বিষয় বাইডেনও সম্ভবত বদলাতে চাইবেন না। বার্নেস-ডেসি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আরব দেশগুলির সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করাকে দুই পক্ষই সমর্থন করে। মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমেনিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও সম্ভবত বাইডেন বদলাবেন না।''
যেখানে মানবিক কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে, সেখানে বাইডেন কিছু পরিবর্তন করতে পারেন। বার্নেস-ডেসি বলেছেন, ''ইয়েমেনে বাইডেন সরাসরি সিদ্ধান্ত বাতিল না করলেও কিছু পরিবর্তন করতে পারেন। যেমন মাববিক সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দিতে পারেন।''
ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যারি পেরিলগার মনে করেন, ''এখানে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি বড় ভূমিকা নেবে। তবে ইরান, সিরিয়া, ইরাকের স্টেট অ্যাক্টরদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বদল করা অনেক বেশি কঠিন।''
ইরান নিয়ে
লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের সিনিয়ার ফেলো ইয়ান ব্ল্যাক মনে করেন, ''আসল বিষয় হলো ইরান-চুক্তি। এ নিয়ে প্রবল চাপ আছে। ট্রাম্প অবশ্য ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলি যাতে ইরানের বিরোধিতা করে তার জন্য চেষ্টা করে গেছেন।''
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান চুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা সময় লাগবে। কারণ, এর সঙ্গে ইরান এবং সেদেশের মানুষ ও সংস্থার বিরুদ্ধে জারি করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আছে। এ সব নিয়ে কাজ করতে সময় লাগবে। পেরিলগার মনে করেন, এক বছর সময় লাগতে পারে। কারণ, বাইডেনের সামনে প্রচুর ঘরোয়া, সমস্যা আছে।