1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাম্পের মুখে হঠাৎ কেন বিমান ধ্বংসের কথা?

১৯ জুলাই ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে যুদ্ধবিমান ধ্বংস নিয়ে মন্তব্য ট্রাম্পের মুখে। কোন পক্ষের, সেটি স্পষ্ট না করলেও চার-পাঁচটি বিমান ধ্বংসের কথা বলেছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের উপরে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন কিনা, এমন প্রশ্ন তুলছেন ভারতের বিশ্লেষকেরাছবি: Alex Brandon/AP/picture alliance

এর পরেই আলোচনা শুরু হয়েছে, হঠাৎ এ বিষয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের কারণ কী? এর পেছনে কি কোনো বৃহত্তর বাণিজ্যিক লক্ষ্য রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের?

কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলার পর ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে হামলা চালায় ভারত। ভারতের দাবি, জঙ্গী আস্তানা লক্ষ্য করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। অভিযানের পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ শুরু হয়। ৭ থেকে ১০ মে সংঘর্ষ প্রায় যুদ্ধের রূপ নিচ্ছিলো। সেই সময়ে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকার কথা নিজের মুখেই বারবার বলেছেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট। এবার তিনি নতুন জল্পনা তৈরি করেছেন যুদ্ধবিমান ধ্বংসের প্রসঙ্গ তুলে।

ভোজসভায় ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে কৌতূহল

হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান পার্টির জনপ্রতিনিধির সঙ্গে একটি ভোজসভায় মিলিত হন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট। তার বক্তৃতায় উঠে আসে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও হিংসার প্রসঙ্গ। ট্রাম্প বলেন, "আমরা একাধিক যুদ্ধ বন্ধ করতে পেরেছি। এই যুদ্ধগুলি যথেষ্ট বিপজ্জনক ছিল। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধবিমান গুলি করে মাটিতে নামানো হয়েছিল। আমার মনে হয়, চার-পাঁচটি জেট ধ্বংস করা হয়। দুটি পরমাণু শক্তিধর দেশ পরস্পরকে আক্রমণ করছিল।"

এই বক্তব্যে  অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করেননি, কোন দেশের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার কথা তিনি বলেছেন। তবে এ নিয়ে মাস দুয়েক ধরে বিতর্ক চলছে। পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন দাবি করেছিল, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। ভারত সে কথা সরকারিভাবে স্বীকার করেনি। তবে ভারতীয় সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহান সিঙ্গাপুরে জানিয়েছিলেন, ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ায় ক্যাপ্টেন শিবকুমারের মুখে একই ধরনের স্বীকারোক্তি শোনা গিয়েছে। তিনি এই ক্ষতির জন্য অবশ্য ভারতের সংযমী মানসিকতাকে দায়ী করেছিলেন।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ট্রাম্পের বক্তব্যকে হাতিয়ার করেছে। কংগ্রেস নেতা উদিত রাজ সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, "যুদ্ধে ক্ষতি হতেই পারে। অনেকেই বিমান ধ্বংসের কথা বলেছেন। এটা স্বীকার করতে অসুবিধা কোথায়? বিমানের যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল, সেগুলি সাফ করে দিলে কি প্রমাণ মুছে দেওয়া যায়।"

যুদ্ধ বন্ধের কৃতিত্ব দাবি করলেও হঠাৎ আবার যুদ্ধবিমান ধ্বংসের প্রসঙ্গ কেন উত্থাপন করলেন ট্রাম্প, এ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ এটাকে হোয়াইট হাউসের কৌশল হিসেবে দেখছেন। তাদের প্রশ্ন, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের উপরে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করতেই কি বিমান ধ্বংসের কথা বলেছেন?

নেপথ্যে বাণিজ্য চুক্তি?

ভারত ও  অ্যামেরিকার বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে অনেক দিন ধরে। ট্রাম্প পারস্পরিক শুল্কনীতি ঘোষণা করেন ২ এপ্রিল। ভারতের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা ছিল। এই আমদানি শুল্ক আগামী মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এর মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি চলছে।

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলার সময়ে কেন্দ্রকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছিল নীতি আয়োগ। এ নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াও। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবসায় আট কোটি মানুষ জড়িত। অ্যামেরিকার পণ্য চলে এলে এই ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। ভারতে যখন এ নিয়ে বিরোধিতার আবহ রয়েছে, সেই সময়ে ট্রাম্পের বিমান ধ্বংসের মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও বিধায়ক অশোক লাহিড়ি ডিডব্লিউকে বলেন, "ভারতে শিল্পায়ন হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত।  অ্যামেরিকা ধনী দেশ। তারা অনেক সাহায্য দেয় কৃষককে। ওখান থেকে কৃষিজাত পণ্য ভারতে এলে দাম অনেক কমে যেতে পারে। এতে ভারতীয় ছোট ছোট কৃষকদের সমস্যা হবে। এভাবে কি চলবে সারা জীবন? তা হয়তো নয়। কিন্তু সময় দিতে হবে। হঠাৎ ঝড় এসে গেলে গাছ পড়ে যাবে।"

দুগ্ধজাত পণ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমাদের ছোটবেলায় দুধের একটা সমস্যা ছিল। হোয়াইট রেভোলিউশন হওয়ার পরে দুধের সমস্যা কমেছে।  অ্যামেরিকা থেকে ডেয়ারি জিনিস আসতে শুরু করলে আমাদের মুশকিল। তার থেকে ভালো, ওরা এখানকার ডেয়ারি শিল্পে বিনিয়োগ করুক। মিল্ক পাউডার, চিজ ইত্যাদি তৈরি করে নিয়ে যাক। অলিম্পিয়ানের সঙ্গে ছোট বাচ্চা দৌড়াবে কী করে? আমরা আর ছোট বাচ্চা নই, কিন্তু অলিম্পিয়ানদের সঙ্গে দৌড়তে পারব না। এখনই  অ্যামেরিকার পণ্য এ দেশে এলে দাম সস্তা হতে পারে। তবে ক্রেতাদের সস্তা দামে দুগ্ধজাত সামগ্রী দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ উৎপাদকদের ভালো দাম পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, এই সমন্বয় জরুরি।"

অনেকে আবার ট্রাম্পের এ দিনের মন্তব্য নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে রাজি নন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক মইদুল ইসলাম ডিডব্লিউকে বলেন, "ট্রাম্প নির্দিষ্ট করে বলেননি, কোন দেশের বিমান ভেঙে পড়েছে। তাই এটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। এক্ষেত্রে যারা বিমান নির্মাতা, তাদের বার্তা দেয়ার চেষ্টা থাকতে পারে। তাদের পণ্যের গুণমান যথেষ্ট ভালো নয়, অন্য দেশের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সেটাকে অকেজো করে দিতে পারছে। ভারত একটি বিমান অকেজো হওয়ার কথা বলেছে, যেটাকে মেরামত করে ফের ব্যবহার করা হয়েছে।"

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডিডব্লিউকে বলেন, "ট্রাম্প এক্ষেত্রে ভারতকে ইঙ্গিত করেছেন বলেই মনে হয়। হয়তো এমন বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন, ভারত যে সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে, তার তুলনায়  অ্যামেরিকার সরঞ্জাম ভালো, ওয়াশিংটনের কাছ থেকে সেসব কেনা উচিত। তবে যেটা ঘটেছে, সেটা সরকার স্পষ্ট বলে দিতে পারে। যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে, যদি ভবিষ্যতে এই সংক্রান্ত তথ্য উঠে আসে, সেটা রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রের শাসকদলের কাছে সমস্যার হতে পারে।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ