৪৮ কিলোমিটার এলাকায় তৈরি হচ্ছে সাত ফুট উঁচু বেড়া। নিরাপত্তা কর্তারা বলছেন, এই বেড়া টপকে যাওয়া যাবে না। চেকপয়েন্ট বা অন্য জায়গায় থাকবেন ২৫ হাজার সুরক্ষা কর্মী। প্রায় আট হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হবে। চার হাজার পুলিশ অফিসারকে নিরাপত্তা রক্ষার বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হবে।
এই কর্মকাণ্ড আগামী সোমবার, ডনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার নেবেন, তার জন্য। এর আগে দুইবার ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। অন্তত দুইটি জায়গায় নতুন বছরের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। নিউ অরলিন্সে সাধারণ মানুষের উপর ট্রাক চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করেছে এক সাবেক সেনা কর্মী। তাই ট্রাম্পের শপথ নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো ঝুঁকি নিতে চান না নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তারা।
সিক্রেট সার্ভিসের স্পেশ্যাল এজেন্ট ইনচার্জ ম্যাট ম্যাককুল সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, ''আমরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে বাস করছি।''
কী বলছেন নিরাপত্তা কর্তারা
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে সম্ভাব্য সংগঠিত কোনো আক্রমণের আগাম খবর নেই। কিন্তু তারা চিন্তিত কোনো একজন ব্যক্তির আক্রমণের চেষ্টা নিয়ে। নিউ অরলিন্স ও অন্য জায়গায় একজন মানুষই আক্রমণ করেছে।
ক্যাপিটলের পুলিশ প্রধান থমাস মাঙ্গের বলেছেন, ''আগামী দিনগুলিতে কোনো একক আক্রমণকারীর জন্য চরম সতর্কতা বহাল থাকবে।''
এফবিআই এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পুলিশকে সাবধান করে দিয়ে বলেছে, নিউ অরলিন্সের কায়দায় আক্রমণের চেষ্টা হতে পারে।
ক্যাপিটলেই হবে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। ছবি: Allison Bailey/NurPhoto/picture alliance
আগামী সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাপিটল হিল ও তার আশপাশের এলাকায় কোনো সাধারণ যানবাহন চলবে না। এন্ট্রি পয়েন্টগুলি পুরোপুরি ব্লক করে দেয়া হবে।
ওয়াশিংটনে ৩৪ হাজার পাঁচশ হোটেলরুম আছে। তার মধ্যে ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যেই বুক হয়ে গেছে।
ট্রাম্প যখন প্রথমবার শপথ নেন, তখন হোটেলের ৯৫ শতাংশ ঘর ভর্তি ছিল। ফলে এবারও প্রচুর মানুষ আসবেন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হবে।
ক্যাপিটলে শপথ
আগামী সোমবার ক্যাপিটলে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। তখন সেখানে থাকবেন কংগ্রেস সদস্যরা,. সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, প্রচুর রাজনীতিক, প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা, বিদেশি অতিথি এবং প্রচুর মানুষ।
ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প যে সিদ্ধান্ত নিতে চান
প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হওয়ার পর প্রথম টিভি সাক্ষাৎকারে ডনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, তিনি এখন কী কী সিদ্ধান্ত নিতে চান।
ছবি: Nbc News/ZUMA Press Wire/picture alliance
একগুচ্ছ পরিবর্তন
আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে তিনি জানিয়েছেন তিনি দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একগুচ্ছ পরিবর্তন আনবেন। তার একাধিক সিদ্ধান্তের ফল সুদূরপ্রাসারী হতে পারে।
ছবি: Nbc News/ZUMA Press Wire/picture alliance
অ্যামেরিকায় জন্মালেই নাগরিকত্ব নয়
এনবিসি টেলিভিশনে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবেন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেই কেউ নাগরিক হওয়ার অধিকার পাবেন না। মার্কিন সংবিধান এই অধিকার দিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের মতে, এটা একটা অর্থহীন ব্যবস্থা। তিনি প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়ে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করবেন।
ছবি: Thibault Camus/AP Photo/picture alliance
অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো
ট্রাম্প বলেছেন, এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু এটা করা দরকার। বেআইনিভাবে অভিবাসন-প্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেও প্রস্তুত।
ছবি: Heather Khalifa/AP Photo/picture alliance
বাণিজ্যিক মাসুল নিয়ে
ট্রাম্প জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে যে সব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছে, সেগুলির উপর চড়া হারে মাসুল বসানোর বিষয়টি নিয়ে তিনি এখনই কিছু বলবেন না। ট্রাম্পের বক্তব্য, ''আমি কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছি না। আগামিকালও কোনো গ্যারান্টি দিতে পারব না।''
ছবি: Brandon Bell/Pool via REUTERS
ক্যাপিটল নিয়ে
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ২০২১ সালে ক্যাপিটলে যারা ঢুকে পড়েছিল এবং শাস্তি পয়েছে, ক্ষমতায় আসার পরেই তাদের দ্রুত ক্ষমার প্রক্রিয়া শুরু করে দেবেন। ট্রাম্পের কয়েকশ সমর্থক এখন বন্দি আছেন। তাদেরই ক্ষমা করার কথা বলেছেন ট্রাম্প।
ছবি: Stephanie Keith/Getty Images
গর্ভধারণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ
গর্ভধারণ ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি গর্ভপাতের ওষুধের উপর নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা করবেন না।
ছবি: FREDERIC J. BROWN/AFP
ইউক্রেনকে সাহায্য়ের পরিমাণ কমবে
গত শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। রোববার তিনি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটা চুক্তি করতে চাইছে। ট্রাম্প পুটিনকে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্য়োগাী হন। আরেকটি প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, খুব সম্ভবত তিনি ইউক্রেনকে দেয়া সাহায্য়ের পরিমাণ কম করবেন।
ছবি: Ludovic Marin/AFP via Getty Images
ন্য়াটোয় থাকা নিয়ে
ট্রাম্প এর আগে একাধিকবার ন্যাটোর সমালোচনা করেছেন। এখন তিনি বলেছেন, ন্যাটোর সব সদস্য দেশ যদি তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ খরচ করে, সবাইকে পরিবারের অংশ মনে করে, অ্যামেরিকার সঙ্গে ন্যায্য ব্যবহার করে, তা হলে ঠিক আছে, না হলে তিনি ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাববেন।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
8 ছবি1 | 8
এই ক্যাপিটলেই ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থকরা তাণ্ডব করেছিলেন। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন, ক্যাপিটলে ভাঙচুর করেছিলেন এবং কংগ্রেস সদস্যদের তাড়া করেছিলেন।
বিক্ষোভও হবে
আগামী শনিবার থেকে সোমবারের মধ্যে ওয়াশিংটনে একাধিক ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ হতে পারে। মেট্রোপলিটান পুলিশ প্রধান পামেলা স্মিথ জানিয়েছেন, শনিবার ২৫ হাজার মানুষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারেন।
শনি থেকে সোমবারের মধ্যে আরো অনেকগুলি মিছিল বা বিক্ষোভ হতে পারে। ট্রাম্পের পক্ষেও মিছিল হতে পারে।