প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সংশয় দেখালেও তাঁর দলের নেতারা ভিন্নমত পোষণ করছেন৷ এফবিআই সংশয়ের কারণ দেখছে না৷ বিরোধীরা ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গেলে ডনাল্ড ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা, সে বিষয়ে তিনি নিজেই সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে ঘিরে খোদ প্রেসিডেন্টের সন্দেহ ও এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের কারণে সে দেশে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হচ্ছে৷ দুই রাজনৈতিক শিবিরের নেতারাই নির্বাচনি প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা দেখিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের বিরোধিতা করছেন৷
প্রায় সব বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এলেও রিপাবলিকান দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে ট্রাম্পের মনোভাবের সঙ্গে একমত নন৷ উচ্চ কক্ষ সেনেটে সংসদীয় দলের প্রধান মিচ ম্যাককনেল সরাসরি ট্রাম্পের সমালোচনা না করলেও এক টুইট বার্তায় লেখেন, যে ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে যার জয় হবে, ২০শে জানুয়ারি তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করবেন৷ ১৭৯২ সাল থেকে প্রতি চার বছর অন্তর যেমনটা হয়ে এসেছে, এবারও নিয়ম মেনে তেমনভাবেই ক্ষমতার হস্তান্তর হবে৷
সংসদের নিম্ন কক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ট্রাম্পকে এ কথা মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি যে তিনি উত্তর কোরিয়া, তুরস্ক বা রাশিয়ায় নেই৷
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেলেই ম্যাকএনানি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন৷ তবে ট্রাম্প আসন্ন নির্বাচনকে আদৌ ‘মুক্ত ও অবাধ’ মনে করছেন কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি তিনি৷ উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট বার বার ডাকযোগে ব্যালটের ক্ষেত্রে কারচুপির সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন৷ তাঁর অভিযোগ, সেই লক্ষ্যেই বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল ভোটারদের ‘মেল ইন’ ভোট দিতে উৎসাহ দিয়ে চলেছে৷
সেনেটে ডেমোক্র্যাটিক সংসদীয় দলের প্রধান চাক শুমার বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনি স্বৈরাচারি শাসক নন এবং অ্যামেরিকা আপনাকে সেটা হতে দেবে না৷'' শুমার ট্রাম্পকে অ্যামেরিকার গণতন্ত্রের জন্য চূড়ান্ত হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেন৷
অ্যামেরিকার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই মেল-ইন ব্যালটের কারণে বিশাল কারচুপির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে৷ তবে বিষয়টিকে ঘিরে ভুয়া খবর সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে এই সংস্থা৷
আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গেলে এবং দুই প্রার্থীর মধ্যে সমর্থনের ব্যবধান কম হলে ট্রাম্প ফেডারেল কোর্টে সেই ফলাফল চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, এমন আশঙ্কা বাড়ছে৷ সে ক্ষেত্রে ইলেক্টোরাল কলেজের যথেষ্ট সংখ্যক ভোটের দৌলতে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করতে পারেন৷ উল্লেখ্য, অ্যামেরিকার ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত শুধু ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছিল৷ রিপাবলিকান দলের প্রার্থী জর্জ ডাব্লিউ বুশ ও ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী অ্যাল গোরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর সুপ্রিম কোর্ট বুশকেই জয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
কমলা হ্যারিস: প্রথম নারী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলা হ্যারিস৷ জেনে নিন এই মার্কিন নারীর সাফল্যের গল্প৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
কমলার ইতিহাস
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকে নারীর জন্য একটি ঐতিহাসিক মোড় হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন অনেকে৷ নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অনেক বাঁকের রচয়িতা হয়েছেন তিনি৷ প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট - সবই যোগ করা যায় তার নামের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’
কমলা হ্যারিসের জয় মার্কিনিদের এক নতুন ভাবনায় ফেলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে বলা হয় সেকেন্ড লেডি৷ কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্টের স্বামী ডগলাস এমহফেরকেতো সেকেন্ড লেডি বলার সুযোগ নেই৷ তাই তার জন্য লাগবে হবে নতুন পদবি৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস অবশ্য ইতিমধ্যে তাঁকে ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’ বলে সম্বোধন করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
জন্ম ও পরিবার
৫৫ বছর বয়সি কমলার বাবার জন্ম জ্যামাইকায় এবং মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান৷ অর্থনীতিবিদ বাবা ও জীববিজ্ঞানী মায়ের সন্তান কমলার রয়েছে মায়া নামের এক বোন৷ কমলার জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকল্যান্ড শহরে৷ কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় দীর্ঘদিন থাকার পাশাপাশি তামিল মা ও জ্যামাইকান বাবার মিশ্র ঐতিহ্যকে সাথে নিয়েই বেড়ে ওঠা কমলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
স্কুল জীবন
ক্যালিফোর্নিয়ার শহর বার্কলের কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় বাস করলেও কমলা পড়তেন অভিজাত থাউজেন্ড ওকস স্কুলে৷ সেই স্কুলে এক সময় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিলেন শ্বেতাঙ্গ৷ বর্ণভিত্তিক পৃথকীকরণের নীতি রদ হবার পর এই চিত্র বদলে যায়৷ কমলা যখন সেই স্কুলে ভর্তি হন, তখন সেখানে মোট শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ৷ কিছুদিন মায়ের সাথে ক্যানাডায় ছিলেন কমলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক হবার সময়ে নানা ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন কমলা হ্যারিস৷ ছবিতে বান্ধবী গোয়েন ভিটফিল্ডের সাথে তাকে দেখা যাচ্ছে অ্যাপারথাইড বা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে৷ ছবিটি ১৯৮২ সালের৷ ১৯৮৬ সালে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন তিনি৷
ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবী ডগলাস এমহফকে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন কমলা৷ ডগলাসের আগের পক্ষের দুই সন্তান রয়েছে, কোল ও এলা, যাদের কমলা হ্যারিসের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশেও দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
রাজনীতিতে প্রবেশ
২০০৩ সালে প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন তিনি৷ তখন থেকেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে তার সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে৷ পরে ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়ার সেনেটর পদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও জয়ী হন৷
ছবি: Tasos Katopodis/Getty Images
উত্তরণ
সেনেটর হিসাবে তার ধারালো প্রশ্ন করার ক্ষমতা বারবার আলোচিত হয়েছে সংবাদমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায়৷ টানা দুই টার্ম ধরে সফল অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে তার কাজও আলোচিত হয়েছে এতদিন৷ শুধু তাই নয়, বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে নিজের মিশ্র ঐতিহ্য বিষয়ে সাবলীল আলাপ তাঁকে জনসাধারণের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তোলে৷ এছাড়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তাঁর প্রতি সমর্থনও সাহায্য করেছে বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Risberg
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
সেনেটর পদে নির্বাচিত হবার পর কমলা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন৷ সমকামীদের বিবাহের অধিকারের পক্ষে, মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে থাকার পাশাপাশি কমলা বিভিন্ন সময়ে পুলিশনীতিতে বদলের দাবি তুলেছেন৷ বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ও পুলিশের অনৈতিকতা যেভাবে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আলোচনায় উঠে আসছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি অংশগ্রহণ যথাযথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷