সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷শিগগিরই নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নাম ঘোষণা করবেন ট্রাম্প৷
বিজ্ঞাপন
আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ পদত্যাগ করবেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে তিনি তাঁর পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন৷ তবে ট্রাম্প টুইটারে সেটিকে ‘অবসর' বলে দাবি করেছেন৷
ম্যাটিসের এই সিদ্ধান্তের কারণ সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের ঘোষণা, কেননা, ট্রাম্প তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের অগ্রাহ্য করে নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এছাড়া আফগানিস্তান থেকেও ৭ হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প৷
পদত্যাগের চিঠিতে ম্যাটিস লিখেছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রক্ষা করা এবং তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো৷ পাশাপাশি রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর কাছে তার অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত৷ আমাদের সমাজ, সম্পদ এবং মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত৷''
‘বিদায় হোন’ – ট্রাম্প প্রশাসনে উইকেট পতন
ট্রাম্প প্রশাসনে যত দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ছে, ততটা আর কখনো কোথাও হয়নি৷ চলুন দেখা যাক, এ যাবৎ কার কার বিদায় ঘণ্টা বেজেছে৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
রেক্স টিলারসন
১৩ই মার্চ, ২০১৮৷ টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল৷ টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
অ্যান্টনি স্কারামুচি
‘দ্য মুচ’ বলে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সি সাবেক এই পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী ট্রাম্প প্রশাসনে টিকতে পেরেছেন মাত্র দশদিন৷ ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ তাঁর যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘদিন এই পদটি খালি ছিল৷ চিফ অফ স্টাফ পদে সাবেক মেরিন প্রধান জেনারেল জন কেলির যোগ দেয়ার দিনেই বিদায় হন অ্যান্টনি৷ প্রশাসনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি হারান তিনি৷
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল এই জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.S. Applewhite
রিন্স প্রাইবাস
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি
হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমত করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. S. Applewhite
মাইকেল ফ্লিন
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷
ছবি: Reuters/C. Barria
9 ছবি1 | 9
এরপর তিনি লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের এমন কাউকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা উচিত, যাঁর সাথে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত মেলে৷
রিপাবলিকান নেতাদের অনেকেই ম্যাটিসের এই পদত্যাগে মনক্ষুন্ন হয়েছেন৷ রিপাবলিকান সেনেটর মার্কো রুবিডো টুইটারে লিখেছেন, ‘‘জেনারেল ম্যাটিসের পদত্যাগের চিঠি পড়লাম৷ এটা থেকে স্পষ্ট যে, আমাদের নীতি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে, যা রাষ্ট্রের জন্য বিপদ ডেকে আনবে৷ পাশাপাশি আমাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে৷''
ট্রাম্প জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই তিনি ম্যাটিসের উত্তরাধিকারীর নাম ঘোষণা করবেন৷ ট্রাম্পের অবিরাম পরিবর্তিত মন্ত্রিসভার শক্তিশালী সদস্য ছিলেন চার তারকার অধিকারী এই জেনারেল, যিনি একসময় নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন৷ গত পাঁচ মার্কিন প্রেসিডেন্টের তুলনায় ট্রাম্পের শাসনামলে মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বেশি রদবদল হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রুকিংস ইন্টটিটিউশন৷