ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির আশা প্রকাশ করেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, তিনি অবশ্যই শান্তি আনবেন৷
বিজ্ঞাপন
‘ইটস ইজি' – ট্রাম্পের মুখে এই বুলি প্রায়ই শোনা যায়৷ তাঁর কাছে প্রেসিডেন্টের কাজ সহজ মনে হয়েছিল৷ বলেছিলেন, ‘ওবামাকেয়ার' স্বাস্থ্য বিমা বাতিল করে নতুন কাঠামো চালু করাও সহজ হবে৷ উত্তর কোরিয়া সংকটের সমাধানও সহজ বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি৷ পরে অবশ্য প্রতি বার বলেছেন, যতটা ভেবেছিলেন, বিষয়গুলি আসলে ততটা সহজ নয়৷ ‘এমনটা কেউ জানতো না' – বলে শ্লেষের পাত্র হয়েছেন তিনি৷
মধ্যপ্রাচ্য সংকটের ক্ষেত্রেও ডোনাল্ড ট্রাম্প একই রকম আশাবাদী৷ তিনি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মধ্যস্থতা করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন বলে মনে করেন৷ এর জন্য যা প্রয়োজন তিনি তা করতে প্রস্তুত৷ নিজের জামাই ও বিশ্বস্ত উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারকে এই উদ্যোগের দায়িত্ব দিয়ে তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন৷ তবে এতকাল স্তব্ধ থাকার পর শান্তি আলোচনা শুরু করতে তিনি ঠিক কী করবেন, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প৷ মোটকথা একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা পারেননি, তিনি সেই অসাধ্য সাধন করবেন বলে মনে করেন৷ তাছাড়া আগের মতোই তিনি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্র চাইছেন কিনা, তাও স্পষ্ট নয়৷
হোয়াইট হাউসে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে বেশ উৎসাহ দেখিয়েছেন৷ আব্বাসের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা – ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে হিংসার প্ররোচনা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ তাছাড়া ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের পরিবারগুলিকে অর্থ দেওয়াও বন্ধ করতে হবে, যেমনটা ইসরায়েল বহুদিন ধরে দাবি করে আসছে৷ উল্লেখ্য, মার্কিন সংসদ সদস্যরা এ কারণে ফিলিস্তিনিদের জন্য আর্থিক অনুদান বন্ধ করে দেবার হুমকি দিচ্ছেন৷
আব্বাস ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে নিজের প্রশংসা শুনতে বেশ ভালবাসেন, তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন৷ তাই তিনিও ট্রাম্পের প্রতি ‘পূর্ণ আস্থা' প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আপনার সাহসি নেতৃত্ব, আপনার বিচক্ষণতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসার ক্ষমতার ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিরা ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি চাইছে৷'' তবে আব্বাস অধিকৃত এলাকা থেকে ইসরায়েলের সরে যাবার দাবিতে অটল রয়েছেন৷
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প৷ বারাক ওবামার সঙ্গে চরম মনোমালিন্যের পর ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগে দেরি করেননি তিনি৷ আগামী ২২ ও ২৩শে মে ট্রাম্প ইসরায়েল এবং সম্ভবত পশ্চিম তীর সফর করবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত কোন পথে?
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি এলাকা জুড়ে যে সহিংসতার ঢেউ চলেছে, তা-তে দু’পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভ, অবিশ্বাস ও মারমুখি ভাব৷ এই প্রবণতা চলতে থাকলে একটি তৃতীয় ইন্তিফাদার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/M. Abu Turk
একটি পবিত্র স্থান
পুরনো জেরুসালেমের প্রাচীন অংশে আল-আকসা মসজিদ; ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা৷ ইসরায়েলিদের কাছে এই স্থানটি হল টেম্পল মাউন্ট৷ মাস খানেক আগে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গুজব ছড়ায় যে, ইসরায়েল প্রাঙ্গণটি দখল করে নেওয়ার কথা ভাবছে৷ সেই থেকেই দাঙ্গা-হাঙ্গামার শুরু৷ ১৭ই জুলাই, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
একটানা আক্রমণ
বিশেষ করে জেরুসালেমে ইসরায়েলিদের ওপর ছুরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ায় ইসরায়েলি সরকার চিন্তিত৷ প্রধানত জেরুসালেমবাসী ফিলিস্তিনি কিশোররাই এই সব আক্রমণ চালাচ্ছে ও নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে৷ তাদের কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় আবার দাঙ্গা বাঁধছে৷ অক্টোবরের সূচনায় বেথলেহেমের কাছে একটি উদ্বাস্তু শিবিরে এক ১৩ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি কিশোর এভাবে প্রাণ হারায়৷ বেথলেহেমে দাঙ্গার ছবি, ৫ই অক্টোবর, ২০১৫৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Coex
অন্যত্র, সর্বত্র
গাজা স্ট্রিপের দক্ষিণে খান ইউনুসেও একই দৃশ্য৷ ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে সংঘাতে ১৫ বছর বয়সি মোহাম্মেদ আল-রেকেব প্রাণ হারানোর পর তাকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় আত্মীয়স্বজন শোকার্ত৷ ৯ই অক্টোবর, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
গাজা স্ট্রিপে
২২ বছর বয়সি জিহাদ আল-ওবাইদের সমাধি অনুষ্ঠানে যোগদান করে আল-কাসাম ব্রিগেডের জঙ্গিরা৷ জিহাদ প্রাণ হারান গাজা স্ট্রিপের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, সীমান্তের কাছে, ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে৷ ছবিটি তোলা ১০ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে৷ ১৫ই অক্টোবর অবধি এই ‘তৃতীয় ইন্তিফাদায়’ এ যাবৎ প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন ইসরায়েলি ও অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি; দু’পক্ষে আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Khatib
বিজয় চিহ্ন
পশ্চিম জর্ডানের হেব্রনে মোহাম্মেদ ফারেস আল-জাবারিকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে দাঙ্গা বাঁধে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের৷ আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্টরি সাইন দেখাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী৷ ছবিটি ১০ই অক্টোবর, ২০১৫-র৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Bader
বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, দাঙ্গা
পশ্চিম জর্ডানের নাবলুসে হাওয়ারা চেকপয়েন্টে ইসরায়েলি সৈন্যদের দিকে ঢিল ছুঁড়ছে ফিলিস্তিনি কিশোর ও তরুণেরা৷ ১১ই অক্টোবর, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Reuters/A. Talat
যাত্রীবাহী বাসে আক্রমণ
১২ই অক্টোবর, ২০১৫-র ঘটনা৷ পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী জনৈক আরব একটি যাত্রাবাহী বাসের মধ্যে এক ইসরায়েলি সৈন্যকে ছুরিকাঘাত করার ও বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ অপর এক সৈন্যের গুলিতে আততায়ী নিহত হয়৷ ছবিতে পুলিশ কর্মকর্তারা বাসটির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Ziv
ইসরায়েলি সরকার নিরুপায়
ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হাজার চারেক পুলিশ ছাড়াও তিন’শ সৈন্য পথে নামানো হয়েছে৷ অস্থায়ী চেকপয়েন্ট সৃষ্টি করে গাড়ি ও ড্রাইভারদের পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ছবিতে পূর্ব জেরুসালেমের জাবাল মুকাবর এলাকায় কংক্রিটের ব্লক বসানোর কাজ চলেছে বুধবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/S. Scheiner
আরো একটি মৃতদেহ
পূর্ব জেরুসালেমের ‘ওল্ড সিটির’ প্রবেশমুখে দামাস্কাস গেটে বুধবার আরো একটি ছুরি আক্রমণের ঘটনা ঘটে৷ দৃশ্যত পশ্চিম জর্ডানের হেব্রন থেকে আগত এক ২০ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি তরুণ এক নিরাপত্তা কর্মীকে আক্রমণ করে ও নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে নিহত হয়৷ ছবিতে নিহত আততায়ীর লাশ অকুস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷