নির্বাচনে হিলারি ক্লিন্টনকে হারাতে ভোট পিছু মাত্র পাঁচ ডলার ব্যয় করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ মজার ব্যাপার হলো, ২০১২ সালের পুনর্নির্বাচনে বারাক ওবামা যা ব্যয় করেছিলেন, তার এক-তৃতীয়াংশেই কাজ সেরেছেন এই সুচতুর ব্যবসায়ী৷
বিজ্ঞাপন
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে জানেন ট্রাম্প৷ সেই সঙ্গে ছিল তাঁর বাগাড়ম্বর৷ তার ওপর নিখর্চায় টিভি টাইম জোগাড় করায় তিনি সিদ্ধহস্ত৷ এই তিনের সংমিশ্রণে ক্লিন্টনের প্রায় অর্ধেক খরচে নির্বাচন সাঙ্গ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সফলভাবে৷ অন্তত রয়টার্সের বিশ্লেষণ তাই বলছে৷
ট্রাম্পের ‘মিডিয়া-স্যাভি ক্যামপেইন' আর ‘কস্ট-এফেক্টিভ' জয়ের ফলে অ্যামেরিকায় এখন নির্বাচন জেতার নতুন মডেল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ তবে ট্রাম্পের জয়ের একটা বড় উপাদান ছিলেন তিনি নিজেই৷ তাঁর নিজের নামের নানা লাক্সারি হাইরাইজ, হোটেল ও ক্যাসিনো; তিনি রিয়্যালিটি টিভির স্টার; এছাড়া তাঁকে নিয়ে সর্বক্ষণ বিতর্ক চলার ফলে তিনি সবসময়েই নিউজে রয়েছেন – এ সব করার ক্ষমতা না থাকলে শুধু প্রচারণার খরচ কমিয়ে ট্রাম্প পার পেতেন না৷
কোন কোন রাজ্যে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প ও হিলারি
সিএনএন-এর দেওয়া তথ্যমতে, শেষ পাওয়া ভোটের ফলাফলে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৮৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট৷ আর হিলারি পেয়েছেন ২১৮টি৷ সর্বমোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ২৭০ ভোট৷
ছবি: Reuters/A. Wroblewski
ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি৷ তিনি পেয়েছেন ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট আর ট্রাম্প ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
টেক্সাস (৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে ট্রাম্প জয়ী৷ ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প, ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন হিলারি৷
ছবি: picture-alliance /newscom/M. Graff
নিউ ইয়র্ক (২৯টি ইলেকটোরাল ভোট)
এখানেও হিলারি জিতেছেন৷ পেয়েছেন ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট৷ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Lee
ফ্লোরিডা (২৯টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী ট্রাম্প৷ তিনি পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট এবং হিলারি পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/A. Wroblewski
পেনসিলভেনিয়া (২০টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প৷ তার পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং হিলারির পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইলিনয় (২০টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট, অন্যদিকে ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/M. Anzuoni
ওহায়ো (১৮টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী ট্রাম্প পেয়েছেন ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট এবং হিলারি পেয়েছেন ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
জর্জিয়া (১৬টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী ট্রাম্প পেয়েছেন ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট এবং হিলারি পেয়েছেন ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
নর্থ ক্যারোলাইনা (১৫টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী ট্রাম্প পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট৷ অন্যদিকে হিলারি পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
নিউজার্সি (১৪টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট৷ আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪২ শতাংশ৷
ছবি: REUTERS/B. Snyder
ভার্জিনিয়া (১৩টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট, ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
ওয়াশিংটন (১২টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট, ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/C. Barria
ম্যাসেচুসেটস (১১টি ইলেকটোরাল ভোট)
এই রাজ্যে জয়ী হিলারি পেয়েছেন ৬১ শতাংশ ভোট এবং ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷
ছবি: Reuters/A. Latif
অ্যারিজোনা (১১টি ইলেকটোরাল ভোট)
ট্রাম্প এই রাজ্যে জয়ী৷ তিনি পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ আর হিলারি পেয়েছেন ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট৷
ছবি: Reuters/A. Wroblewski
14 ছবি1 | 14
২০১৫ সালের জুন মাসে তাঁর প্রচার অভিযান শুরু করা যাবৎ ট্রাম্প অন্তত ২৭ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছেন, যা কিনা বারাক ওবামা ২০১২ সালে তাঁর পুনর্নির্বাচনের জন্য যা খরচ করেছিলেন, তার এক-তৃতীয়াংশ৷ ট্রাম্প যদি সব মিলিয়ে প্রায় ছয় কোটি ভোট পেয়ে থাকেন, তবে তাঁর ভোট পিছু খরচ হয়েছে কম-বেশি পাঁচ ডলার৷
অপরদিকে ডাটা অ্যানালিটিক্স সংস্থা মিডিয়াকোয়ান্ট বলছে, ট্রাম্প প্রায় ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের মিনি মাগনার মিডিয়া কভারেজ পেয়েছেন তাঁর ক্যামপেইন চলাকালীন, যা কিনা ক্লিন্টনের দ্বিগুণ৷ বার বার নিউজটাইম জুড়ে থেকেছেন তাঁর নানা প্ররোচনামূলক মন্তব্য দিয়ে – কখনো মহিলাদের সম্পর্কে; কখনো মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষেধের ডাক দিয়ে; কখনো মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের ধুয়ো তুলে৷
ক্লিন্টন প্রায় ৫২ কোটি ডলার অনুদান সংগ্রহ করেন৷ তার মধ্যে প্রায় ২৪ কোটি ডলার যায় টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিতে৷ এছাড়া বাইরে থেকে একাধিক পিএসি বা পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি তাঁকে সাহায্য করেছে৷ কিন্তু শেষমেষ জিতেছেন ট্রাম্প৷ কাজেই মার্কিন নির্বাচনে অর্থসংগ্রহের প্রসঙ্গটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে আর বেশি দেরি নেই, বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এপি)
ট্রাম্পের জয়ে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
প্রথমে বিমূঢ়তা, পরে পরিস্থিতি সামাল দেবার প্রচেষ্টা, এই ছিল ইউরোপের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, তবে দক্ষিণপন্থি মহল ট্রাম্পের জয়ে উৎসাহিত বোধ করছে৷ অপরদিকে মুসলিম দেশগুলিতে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
মুসলিম দেশগুলিতে উদ্বেগ
পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া অথবা বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলিতে ট্রাম্পের এই জয় ইসলামি দুনিয়ার পক্ষে কী তাৎপর্য বহন করছে, তাই নিয়েই দুশ্চিন্তা৷ বিশেষ করে ট্রাম্প যে মুসলিমদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার হুমকি দিয়েছেন, তা নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন কেননা অ্যামেরিকায় তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন আছেন৷ এছাড়া ট্রাম্পের নীতি ইসলামি চরমপন্থিদের উসকে দিতে পারে, বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Indahono
বাংলাদেশ: আমন্ত্রণ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উভয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ শেখ হাসিনা তাঁর পত্রে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ও তাঁর ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশে এসে দেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন দেখে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও ট্রাম্পকে একটি বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
ছবি: imago/Xinhua
জার্মানি: ‘একটা বড় ধাক্কা’
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হবার পর পরই টেলিভিশনে তাঁর প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটা বড় ‘শক’ পাওয়ার কথা বলেন৷ অপরদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেছেন, ‘‘আমাদের (ট্রাম্পের জয়) মেনে নিতে হবে’’৷ তাঁর মতে আগামীতে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি আগের মতো ভবিষ্যৎবাচ্য থাকবে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Schwarz
ব্রিটেন: ‘বিশেষ সম্পর্ক’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে উভয় দেশের ‘‘বিশেষ সম্পর্কের’’ কথা বলেছেন৷ ‘‘আমরা বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় আগের মতোই জোরালো ও ঘনিষ্ঠ অংশীদার থাকব’’, বলে মে তাঁর বিবৃতিতে মন্তব্য করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
ভারত: ‘ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছে বলেছেন, ‘‘আপনি আপনার নির্বাচনি প্রচার অভিযানে ভারতের প্রতি যে বন্ধুত্ব দেখিয়েছেন, আমরা তা উপলব্ধি করি৷ ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটা নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবার আশা রাখি৷’’
ছবি: picture-alliance/Xinhua
ইসরায়েল: ‘প্রকৃত বন্ধু’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রকৃত বন্ধু’’ বলে অভিহিত করেছেন৷ অপরদিকে কট্টরপন্থি ইহুদি স্বদেশ দলের প্রধান শিক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনেট মন্তব্য করেছেন, ‘‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণার এখানেই অবসান৷’’ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একটি বিবৃতিতে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘তাঁর কর্মকালে শান্তি অর্জিত হবে’’, বলে আব্বাস আশা করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sultan
রাশিয়া: ‘গঠনমূলক সংলাপ’
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ডেনাল্ড ট্রাম্পকে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ পুটিন একটি বিবৃতিতে বলেন, তিনি রুশ-মার্কিন সম্পর্ককে বর্তমান ‘‘সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি’’ থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার আশা রাখেন৷ মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে ‘‘গঠনমূলক সংলাপ’’ গড়ে উঠবে, বলে তাঁর আস্থা আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.Schreiber
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: গভীর সম্পর্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি একটি টুইটে বলেছেন যে, ইইউ-মার্কিন সম্পর্ক রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেয়ে বেশি গভীর৷ আমরা একত্রে কাজ করে ইউরোপের শক্তি পুনরাবিষ্কার করব’’, লিখেছেন মোঘেরিনি৷ অপরদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলৎস ট্রাম্পকে ‘‘লক্ষ লক্ষ মার্কিনির ভয়ভীতির প্রতিনিধি’’ বলে অভিহিত করেছেন৷
ছবি: DW/B. Riegert
হাঙ্গেরি: ‘গণতন্ত্র আজও বেঁচে’
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়কে ‘‘দারুণ খবর’’ বলে অভিহিত করেছেন৷ এর থেকে বোঝা যায় যে, ‘‘গণতন্ত্র আজও বেঁচে’’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ইতিপূর্বে ওর্বানের সমালোচনা করা হয়েছে, তিনি হাঙ্গেরিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে দুর্বল করছেন বলে – পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনও যে সমালোচনায় যোগ দিয়েছিলেন৷ ওর্বান তাঁর ফেসবুক পেজে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷