নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সরকারি বিদেশ সফর, অ্যামেরিকার ‘প্রথম দম্পতি’ বিমান থেকে নামছেন ইসরায়েলে৷ লাল গালিচার উপর হাঁটার সময় স্বামীর বাড়ানো হাত ছোট্ট একটি চাপড় মেরে সরিয়ে দিলেন মেলানিয়া৷
বিজ্ঞাপন
এই ইন্টারনেটের যুগে মুহূর্তটি ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগেনি৷
শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেন, বিশ্বের সব নৃপতি বা উঁচু পর্যায়ের রাজনীতিকদের স্ত্রী বা ক্ষেত্রবিশেষে স্বামীর জন্য সফর চলাকালীন একটি আলাদা অনুষ্ঠানসূচির ব্যবস্থা রাখা হয়৷ তা-ই হলো আদত৷ সেই অনুষ্ঠানসূচিতে সামাজিক দিকটাই প্রাধান্য পায়, যখন মূল রাজনীতিক বা নৃপতি রাজনীতি-কূটনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷
ইন্টারনেটের যুগ মানে মনোরঞ্জনের যুগ, তাই সাংবাদিক-ভাষ্যকাররা যখন ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এনে ফেললেন কিনা, তার বিশ্লেষণ করছেন, তখন পাপারাৎসি আর বিনোদনমূলক পত্রিকার সংবাদদাতাদের নজর থাকে মেলানিয়া ট্রাম্প কী পরলেন, তাঁকে কেমন দেখাচ্ছে, জ্যাকি কেনেডির চেয়ে ভালো দেখাচ্ছে না খারাপ দেখাচ্ছে, তিনি ক’বার হাসলেন বা হাসলেন না, এই সব অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে৷
ট্রাম্প সফরের এই সামাজিক দিকটাকে ছাড়িয়েও আছে প্রথম দম্পতির ব্যক্তিগত জীবন, বিবাহিত জীবন, এক কথায় দাম্পত্য জীবন, নয়তো দম্পতি বলেছে কেন৷
মেলানিয়া কয়েক মুহূর্তের জন্য রেড কার্পেটের বাইরে গিয়ে পরেছিলেন – তাতে হাইহিল পরে হাঁটার সুবিধাই হচ্ছিল! তারপর আবার লাল গালিচার উপর এসে প্রেসিডেন্টের ঠিক এক পা পিছনে থেকে হাঁটছিলেন৷ হঠাৎ ডোনাল্ড পিছন দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন, যেন মেলানিয়া এবার সেই হাত ধরবেন...
কোথায় কি, মেলানিয়া ছোট্ট একটি চাপড় মেরে – বাতাসে না ডোনাল্ডের হাতে, তা ঠিক বোঝা গেল না – প্রেসিডেন্টকে বুঝিয়ে দিলেন: না, রেড কার্পেটের ওপর হাত ধরাধরি করতে নেই৷ সেটা কি মেলানিয়া ডোনাল্ডের চেয়ে প্রোটোকল, অর্থাৎ, কূটনৈতিক রীতিনীতি বেশি ভালো বোঝেন বলে?
নাকি প্লেনেই কোনো দাম্পত্য কলহের সূচনা ঘটেছে? কিন্তু কী নিয়ে? কে বলবে, কে জানবে সেই কথা? প্রোটোকল না ভাঙতে চাওয়ার থিওরিটাই বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়, কেননা, পরে ‘চার্চ অফ দ্য সেপালকার’ বা যিশুর পূণ্যসমাধির গির্জায় যাওয়ার সময় মেলানিয়ার হাত ধরে ছিলেন ডোনাল্ড, বিশেষ করে যখন মেলানিয়া পাথরের সিঁড়ি ধরে নামছিলেন৷ সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর স্ত্রী সারা-র সঙ্গে ডিনারেও মেলানিয়াকে খোশমেজাজেই দেখা গেছে৷ তাহলে আর চিন্তা কী?
এসি/এসিবি
কয়েকজন বিখ্যাত ফার্স্ট লেডির কথা
স্বামীর কারণে ফার্স্ট লেডি হলেও অনেকে নিজেদের কাজের গুনেই বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত ছিলেন৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কয়েকজনের কথা৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
মেলানিয়া ট্রাম্প: নতুন ফার্স্ট লেডি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় তার স্ত্রী এখন মেলানিয়া ট্রাম্প এখন ফার্স্ট লেডি৷ স্লোভেনিয়ায় জন্ম নেয়া মেলানিয়া, ট্রাম্প প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত ইন্সটাগ্রামে বেশ সক্রিয় ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
হিলারি ক্লিন্টন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের স্ত্রী হিলারি এবার জিতলে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কার্লা ব্রুনি সার্কোজি
নিজে ইটালির মেয়ে৷ ছিলেন গায়িকা, মডেল৷ পরে ২০০৮ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজিকে বিয়ে করে হয়ে যান ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি৷ স্টাইল আইকন হিসাবে এখনও তিনি সক্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জর্ডানের রানি
চার সন্তানের জননী রানিয়া ১৯৯৯ সাল থেকে জর্ডানের রানি৷ নিজ দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়ে তিনি কাজ করছেন৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভেও তাঁকে সোচ্চার হতে দেখা গেছে৷ তাঁর অবদানের জন্য গত সেপ্টেম্বরে তিনি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের কাছ থেকে একটি পুরস্কার গ্রহণ করেন৷
ছবি: imago/Xinhua
ইনখোসিকাতি লামবিকিজা
তিনি সোয়াজিল্যান্ডের রাজার ১৩ স্ত্রীর একজন৷ তবে বেশিরভাগ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রাজার পাশে তাঁকেই দেখা যায়৷ এইডসের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচিতে তিনি যুক্ত আছেন৷
ছবি: Getty Images/C. Jackson
জ্যাকুলিন কেনেডি
বলা হয়, হোয়াইট হাউসে বাস করা সবচেয়ে আবেদনময়ী দম্পতি ছিলেন জ্যাকুলিন ও তাঁর স্বামী প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি৷ ১৯২৯ সালে নিউ ইয়র্কের এক অভিজাত পরিবারে জন্ম নেয়া জ্যাকুলিন ১৯৫৩ সালে কেনেডিকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৪ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফ্যাশন সচেতনতার জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images
গ্রেস কেলি
ছিলেন হলিউডের সফল অভিনেত্রী৷ পরে ১৯৫৬ সালে হয়ে যান মোনাকোর প্রিন্সেস৷ তবে তাঁর দাম্পত্য জীবন কখনও সুখের ছিল না বলে শোনা যায়৷ সে এমনও বলেছিলেন, বিয়ের দিনটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বাজে দিন৷ ১৯৮২ সালে ৫২ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কেলি৷
ছবি: AP
সোরাইয়া এসফানডিয়ারি-বখতিয়ারি
ইরানের শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন সোরাইয়া৷ ১৯৫১ সালে ১৯ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়৷ তবে সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা না থাকায় মাত্র সাত বছর পর তাঁদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছিল৷ জার্মান ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী সোরাইয়া ঘোড়ায় চড়া ও স্কিয়িং করতে পছন্দ করতেন৷ ১৯৪১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইরানের ক্ষমতায় ছিলেন পাহলভি৷
ছবি: picture alliance/Bildarchiv
ইমেলদা মার্কোস
সাবেক সুন্দরী ইমেলদা তাঁর ভোগ বিলাসী জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন৷ ফিলিপাইনের দশম প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোসের স্ত্রী ছিলেন তিনি৷ রেকর্ড পরিমাণ জুতার সংগ্রহের কারণে ইমেলদা মার্কোস বিশ্বে পরিচিত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
মিশেল ওবামা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট৷ হার্ভার্ড ল স্কুলেও তিনি পড়াশোনা করেছেন৷ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সরকারি অনেক সফরে তিনি গেছেন৷ পোশাক নির্বাচন ও ভদ্র ব্যবহারের কারণে তাঁকে অনেকেই পছন্দ করেন৷