হুমকি ও পালটা হুমকির পালা চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মারাত্মক সামরিক আঘাতের হুমকি দেওয়ার পর উত্তর কোরিয়া অ্যামেরিকার গুয়াম দ্বীপের উপর পালটা হামলার হুমকি দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রশান্ত মহাসাগরে গুয়াম দ্বীপের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা ভাবছে উত্তর কোরিয়া৷ সেখানে এক মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে৷ বুধবার সে দেশের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে৷ দেশের সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন সিদ্ধান্ত নিলেই হামলা চালানো হবে৷
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া নতুন করে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আরও হুমকি দিলে সে দেশের উপর এমন মারাত্মক হামলা চালানো হবে, যেমনটা গোটা বিশ্বে কেউ কখনো দেখে নি৷ মার্কিন প্রশাসন অবশ্য আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে বর্তমান সংকটের সমাধান করতে চায় বলে জানিয়েছে৷ প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপের পথও খোলা রাখা হয়েছে৷
এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ অ্যামেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার পুঁজিবাজারে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্যও কিছুটা পড়ে গেছে৷ ‘ব্ল্যাক সোয়ান' বা বড় মাপের অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য বাজার এখনো প্রস্তুত নয় বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷
ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী উত্তর কোরিয়া সাফল্যের সঙ্গে ছোট আকারের ‘মিনিয়েচার' পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে, যা তাদের ক্ষেপণাস্ত্রে বসানো যেতে পারে৷ তবে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ করে পরমাণু হামলার ক্ষমতা আয়ত্ত করলেও জটিল এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামেরিকায় হামলা চালানো কঠিন হবে৷ বিশেষ করে মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার স্তরটি অত্যন্ত জটিল৷
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷