তিনি ছিলেন ট্রাম্পের প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা। ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জন বোল্টন কিছু বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।
বিজ্ঞাপন
বছর শেষে অ্যামেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে। একই কথা বলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তারই মধ্যে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন জানালেন, প্রেসিডেন্ট হোয়াইটহাউসে কাউকেই বিশ্বাস করেন না।
বছরের গোড়াতেও দেশের সাধারণ মানুষের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু একের পর এক অভিঘাত ক্রমশ তাঁকে দেশের মানুষের কাছে অপ্রিয় করে তুলেছে। এক দিকে করোনা পরিস্থিতি, তার জেরে লকডাউন এবং কাজ চলে যাওয়া, অন্য দিকে জর্জ ফ্লয়েড হত্যা-- সব মিলিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে ট্রাম্প প্রশাসন। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, কোনও কিছুই সামলে উঠতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট। বিরোধীপক্ষও লাগাতার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন সম্প্রতি টুইট করে বলেছেন, 'ট্রাম্পের উচিত নিজের কাজ মন দিয়ে করা।'
এই পরিস্থিতিতেই ফের মুখ খুললেন প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্ঠা জন বোল্টন। ১৮ মাস হোয়াইহাউসে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন বোল্টন। সম্প্রতি একটি বইও লিখেছেন তিনি। যেখানে ট্রাম্পের একাধিক সমালোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট শুনানি পর্বেও বার বার বোল্টনের নাম সামনে এসেছে। সেনেটে গিয়ে সাক্ষ্য দিতেও রাজি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।
কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
চলতি বছরই অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ ডেমোক্রেটরা এরই মধ্যে নিজ দলের প্রার্থীতা পেতে লড়াই শুরু করেছেন৷
ছবি: Getty Images/S. Olson
মাইকেল বেনেট
৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ বর্তমানে কলোরাডোর সিনেটর৷ প্রগতিশীল ডেমোক্রেট হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে৷ ২০১৩ সালের অভিবাসী আইন প্রণয়নের পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তিনি তাদের একজন৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে গলা চড়ানোটাই নম্রভাষী এই রাজনীতিবিদের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
জো বাইডেন
জো বাইডেন বা জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়র৷ ওবামার শাসনামলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ পর্যন্ত দুইবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন৷ শেষবারের মত এই দৌড়ে নামার সুযোগ পাচ্ছেন ৭৭ বছর বয়সী ডেমোক্রেট৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
মাইকেল ব্লুমবার্গ
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এরইমধ্যে আলোচিত হয়েছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ৷ ট্রাম্পকে হারাতে ১০০ কোটি ডলার খরচে প্রস্তুত আছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এই বিলিওনেয়ার৷ গত অক্টোবরে রিপাবলিকান দলত্যাগ করে দুই যুগ পর আবারও ডেমোক্রেট শিবিরে ভিড়েছেন তিনি৷ তার বয়স ৭৭ বছর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
করি বুকার
ডেমোক্রেটদের মনোনয়নের দৌড়ে আছেন নিউ জার্সির সিনেটর ও নুয়ার্কের সাবেক মেয়র করি বুকারও৷ বৈষম্য দূরীকরণের ইস্যুকে তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন৷ ভালবাসা, ঐক্য আর সাম্যের প্রচারও চালাচ্ছেন পঞ্চাশ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: Reuters/L. Millis
পিট বুডিজেজ
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সর্বকনিষ্ঠ পিট বুডিজেজ৷ ইন্ডিয়ানার সাউথ বেন্ডের এই মেয়র সাবেক সামরিক কর্মকর্তা৷ বয়স মাত্র ৩৭ বছর৷ কিন্তু নির্বাচনের জন্য অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে আছেন সবার চেয়ে৷ অর্থনীতি আর জলবায়ু তার প্রচারের মূল বিষয়৷
ছবি: Reuters/R. Mummey
জন ডেলানি
সাবেক কংগ্রেসম্যান ও ব্যবসায়ী জন ডেলানি৷ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মরিয়া তিনি৷ ২০১৭ সাল থেকেই এজন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন৷ আইওয়ার প্রতিটি কাউন্টি এরইমধ্যে ভ্রমণ করেছেন তিনি৷ কিন্ত শেষ পর্যন্ত টিকিট পান কীনা সেটি দেখার বিষয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Bennett
তোলসি গ্যাবার্ড
২০১৬ সালের নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন দিয়েছিলেন তোলসি গ্যাবার্ড৷ ৩৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এবার নিজেই প্রার্থী হতে চাইছেন৷ পূর্বের সমকামী বিরোধী অবস্থানের জন্য এরই মধ্যে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমালোচিত হয়েছে৷ বিদেশে মার্কিন সামরিক আগ্রাসণের বিরুদ্ধে অবস্থান রয়েছে তার৷
ছবি: AFP
এমি ক্লোবুসার
৫৯ বছর বয়সী এমি ক্লোবুসার মিনেসোটার সিনেটর৷ মাদক, ঔষধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি৷ জো বাইডেনের পর উদারপন্থী ডেমোক্রেটদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Souffle
ডেভাল পেট্রিক
মেসাচুসেটস এর সাবেক গভর্নরও লড়ছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতে৷ অ্যামেরিকার ইতিহাসের দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর নির্বাচিত হন তিনি ২০০৬ সালে৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বন্ধু হিসেবে ডেভাল পেট্রিকের পরিচিতি রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Maturen
বার্নি স্যান্ডার্স
৭৮ বয়সী স্যান্ডার্স ২০১৬ সালেও লড়েছেন নির্বাচনের টিকেট পেতে৷ সেবার পিছিয়ে পড়েন হিলারির কাছে৷ তিনি নিজেকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন৷ সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বিনা পয়সায় পড়াশোনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে লড়তে চান এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
টম স্টেয়ার
৬২ বছর বয়সী এই বিলিওনেয়ার জলবায়ু কর্মী হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন৷ ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে তিনি কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
এলিজাবেথ ওয়ারেন
ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন৷ হার্বার্ডের সাবেক অধ্যাপক তিনি৷ ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদও আছেন ডেমোক্রেটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে৷
ছবি: AFP/F. J. Brown
ডনাল্ড ট্রাম্প
রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে আবারও নির্বাচনে লড়ছেন সেটি নিশ্চিত৷ তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কে আসছেন ডেমোক্রেট শিবির থেকে সেটিই এখন দেখার বিষয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Vucci
13 ছবি1 | 13
ডয়চে ভেলেকে বোল্টনজানিয়েছেন, ট্রাম্পের পড়ার বিশেষ অভ্যাস নেই। গুরুত্বপূর্ণ নথিও গোটাটা পড়ে দেখেন না তিনি। হোয়াইট হাউস অবশ্য দাবি করে, ট্রাম্পের কাছে সমস্ত তথ্য থাকে। কিন্তু বোল্টন তা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, নিরাপত্তা বিষয়ক নথিও পুরোটা পড়ে দেখেন না ট্রাম্প। তিনি চলেন নিজের মেজাজে। তাঁর যা ভালো মনে হয়, সেটাই করেন। এ প্রসঙ্গেই উত্তর কোরিয়ার প্রধান কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বোল্টন। জানান, ওই বৈঠকেও ট্রাম্প নিজেকে খুব তৈরি করে যাননি। তাঁকে যা যা নথি দেওয়া হয়েছিল, তার প্রায় কিছুই তিনি মন দিয়ে পড়েননি। এবং সে কারণেই কার্যত বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। শেষ মুহূর্তে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার ডিল মনে নিলে দেশে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে তাঁকে।
হোয়াইহাউসে তাঁর অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন বোল্টন। তাঁর বক্তব্য, কর্মীদের অধিকাংশকেই বিশ্বাস করেন না ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, হোয়াইটহাউসের মধ্যে একটা অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করে রাখেন তিনি। যাতে কেউ কাউকে বিশ্বাস না করেন। এটাই প্রেসিডেন্টের কাজের পদ্ধতি। এবং সে কারণেই কেউ ট্রাম্পের সমালোচনা করতে পারেন না। সমালোচনা করার অর্থ কাজ থেকে বিদায় নেওয়া। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে কেউ আর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না। ভুলও ধরিয়ে দেন না।
বোল্টনের বক্তব্য, চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং কিংবা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে ঈর্ষা করেন ট্রাম্প। তাঁদের একচ্ছত্র ক্ষমতাই এর কারণ বলে মনে করেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই সৌদি আরবের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের প্রসঙ্গে নিজের মতামত জানিয়েছেন বোল্টন। তাঁর বক্তব্য, সৌদির সঙ্গে ট্রাম্প সুসম্পর্ক না রাখলে পুটিন সেখানে অস্ত্র বিক্রি করতেন। পুটিনের কাছ থেকে এমনটাই জেনেছেন তিনি। সে কারণেই সৌদি আরবের সঙ্গে অ্যামেরিকার সুসম্পর্ক রাখা জরুরি ছিল।
ইমপিচমেন্ট নিয়েও নিজের মতামত জানিয়েছেন বোল্টন। তাঁর বক্তব্য, যে কায়দায় ট্রাম্প নিজেকে ইমপিচমেন্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, দেশের মানুষ তা খুব ভালো চোখে দেখেননি। তাঁর বক্তব্য, সেনেটে ইমপিচমেন্টের গোটা প্রক্রিয়াটাই পক্ষপাতপূর্ণ ছিল। সকলের চোখেই তা ধরা পড়েছে।