মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর এই প্রথম জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ করতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে৷
বিজ্ঞাপন
সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা নিয়মিতভাবে এমন কৌশলপত্র প্রকাশ করে থাকেন৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শেষবার ২০১৫ সালে কৌশলপত্র প্রকাশ করেছিলেন৷
সোমবার ওয়াশিংটন সময় দুপুর দু'টোয় এই কৌশলপত্র প্রকাশ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ তার আগে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা রবিবার কৌশলপত্রের কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন৷ এতে জানা গেছে, ঐ কৌশলপত্রে চারটি বিষয়কে মূল হিসেবে ধরা হয়েছে৷ এগুলো হচ্ছে, দেশ ও অ্যামেরিকার জনগণের নিরাপত্তা, অ্যামেরিকার সমৃদ্ধির প্রচার, শক্তিমত্তা দিয়ে শান্তি বজায় এবং অ্যামেরিকার প্রভাবের প্রসার৷ ‘‘নতুন কৌশলপত্র এই বিশ্বাস নিশ্চিত করবে যে, অ্যামেরিকার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা,'' জানান ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাটিসকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে আমাদের শক্তিশালী জিডিপি৷''
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত টুইট বার্তা
হোয়াইট হাউস ও নিজের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে শলাপরামর্শ না করেই ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ টুইট বার্তা প্রকাশ করে বার বার বিতর্কের মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
বার্সেলোনা হামলা, সন্ত্রাসবাদের দাওয়াই
স্পেনে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প চরম ইসলামপন্থিদের শায়েস্তা করতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এক মার্কিন জেনারেলের নৃশংস পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নেবার পরামর্শ দেন৷ শুকরের মাংসে ডোবানো বুলেট দিয়ে জেনারেল পার্শিং ফিলিপাইন্সে ইসলামি বিদ্রোহীদের কীভাবে শায়েস্তা করেছিলেন, ট্রাম্প পরোক্ষভাবে সেই কাহিনির উল্লেখ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Barrena
শার্লটসভিলে তাণ্ডব
নব্য নাৎসি ও চরম দক্ষিণপন্থি গোষ্ঠীগুলির হিংসাত্মক তাণ্ডবের পর অ্যামেরিকাসহ গোটা বিশ্বে যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ ট্রাম্প তখন তাণ্ডবকারী ও প্রতিবাদকারীদের ঢালাওভাবে হিংসার জন্য দায়ী করেন৷ চরম বিতর্কিত কনফেডারেট নেতাদের মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও প্রবল সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
নিজের শিবিরই যখন লক্ষ্যবস্তু
শুধু ‘ফেক নিউজ’ নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের রিপাবলিকান দলের একাধিক নেতা ও সংসদ সদস্যদের সমালোচনা বরদাস্ত করতে প্রস্তুত নন৷ শ্লেষাত্মক ও অপমানজনক টুইট বার্তার মাধ্যমে তিনি তাঁদের সরাসরি আক্রমণ করে আসছেন৷ ঘরের মধ্যেই অভাবে শত্রু বাড়িয়ে চললে চরম দুর্দিনে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বেন বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
শিল্প-বাণিজ্য মহলের সঙ্গে সংঘাত
শার্লটসভিল কাণ্ডের পর দু’টি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নব্য নাৎসিদের প্রতি নরম মনোভাবের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে ওঠেন৷ তাঁরা পরিষদ ভেঙে দেবার উপক্রম করলে ট্রাম্প নিজেই টুইট বার্তায় সেই ঘোষণা করে লেখেন, তিনি ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ফেলতে চান না৷
ছবি: Imago/ZumaPress/O. Douliery
বেপরোয়া পররাষ্ট্র নীতি
নিজের প্রশাসনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক কর্মকর্তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই অন্য দেশের বিরুদ্ধে তর্জন-গর্জন করতে ওস্তাদ ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি ও ভেনেজুয়েলায় সামরিক হস্তক্ষেপের হুঙ্কার করে তিনি চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সষ্টি করেছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
5 ছবি1 | 5
উল্লেখ্য, নির্বাচনি প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতির কথা বারবার বলেছেন৷ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তাঁর নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেয়া বেশ কিছু পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছেন৷ যেমন জলবায়ু পরিবর্তনকে ওবামা জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি মনে করলেও ট্রাম্পের নতুন কৌশলপত্রে সেটিকে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি মনে করা হবে না৷ এছাড়া বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে অ্যামেরিকাকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প৷ এছাড়া মুক্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি থেকেও সরে এসেছেন তিনি৷
প্রেসিডেন্ট হয়েই যা যা বললেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে জনতার প্রশংসা করেন ট্রাম্প৷ বলেন, ‘‘আজ ওয়াশিংটন থেকে ক্ষমতা তুলে দেয়া হচ্ছে আপনাদের হাতে৷’’
ছবি: Reuters/C. Barria
জনগণের হাতেই ক্ষমতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই দিনটিকে স্মরণ করা হবে জনগণের জয় হিসেবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
বিক্ষোভ সত্ত্বেও ভিড়
ট্রাম্পের শপথগ্রহণের দিনেও যুক্তরাষ্ট্র শান্ত ছিল না৷ এমনকি ওয়াশিংটন ডিসিতেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে৷ তারপরও তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লাখো মানুষ৷ ট্রাম্প তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
সবার জন্য শিক্ষা, সুরক্ষা, চাকরি
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে সবার জন্য উন্নত শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
প্রেসিডেন্টের কাছে জনতাই সব
‘‘আপনার-আমার সবারই এক দেশ, আপনাদের সাফল্যই আমার সাফল্য, আপনাদের হৃদয়ই আমার হৃদয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
শুধু দেশের জন্য কাজ
ধনকুবের থেকে রাজনীতির ময়দানে এসেই রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যাওয়া ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘এখন থেকে আমার লক্ষ্য শুধু দেশের ভবিষ্যৎ গড়া৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার’
ট্রাম্প ভাষণ শুরু করেছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ধন্যবাদ জানিয়ে৷ এ সময় ওবামা দম্পতির প্রশংসা করেছেন৷ ওবামা ও মিশেলের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার৷’’
ছবি: Reuters/B. Snyder
অ্যামেরিকায় উগ্রবাদীদের জায়গা নেই
‘‘অ্যামেরিকার মানুষের আর ভয়ের কারণ নেই৷’’ এ কথা বলে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, উগ্রবাদী ইসলামপন্থিদের সমূলে উৎপাটন করা হবে৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
দেখুন বড় স্বপ্ন
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের এখন আগামীর পথে এগিয়ে যেতে হবে৷ বড় কাজের জন্য দেখতে হবে বড় স্বপ্ন৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক স্মরণীয় দিন
২০ জানুয়ারি, ২০১৭ – এই তারিখটিকে অ্যামেরিকা চিরকাল স্মরণ করবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/C. Barria
‘অ্যামেরিকা উইল বি গ্রেট এগেইন’
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আজ থেকে এ দেশ চলবে নতুন দৃষ্টভঙ্গি নিয়ে আর তা হবে ‘অ্যামেরিকা প্রথম’৷’’ পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় থেকে বলে আসা ‘আমরা আবার একসঙ্গে অ্যামেরিকাকে মহান জাতির উচ্চতায় নিয়ে যাবো’ অঙ্গিকারেরও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/R. Carr
10 ছবি1 | 10
মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবশ্য এতদিন বলে এসেছেন, অ্যামেরিকা ফার্স্ট' মানে ‘অ্যামেরিকা অ্যালোন' নয়৷ তবে নতুন কৌশলপত্র লেখা থাকবে, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসনবিষয়ে অ্যামেরিকা একাই তার সিদ্ধান্ত নেবে৷
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা গত সপ্তাহে চীনের বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক আগ্রাসন'-এর অভিযোগ আনলেও কৌশলপত্রে চীনকে ‘কৌশলগত প্রতিযোগী' বলে উল্লেখ করা হবে৷
মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে কৌশলপত্রে লেখা থাকবে, ‘‘কয়েক প্রজন্ম ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাতকে ঐ অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে প্রধান কাঁটা হিসেবে মনে করা হয়েছে৷ তবে এখন মৌলবাদী জিহাদি সন্ত্রাসী সংগঠন ও ইরানের পক্ষ থেকে আসা হুমকি সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে,ইসরায়েল অত্র অঞ্চলের সমস্যার কারণ নয়৷''