ম্যার্কেল শুরু করলেন৷ তাঁর সুরে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন একের পর এক জার্মান নেতা৷ রাখঢাক না করেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে তাঁদের কড়া মনোভাব প্রকাশ করছেন৷ সেইসঙ্গে ইউরোপীয় ঐক্যের ডাক জোরদার হচ্ছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Skolimowska
বিজ্ঞাপন
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এসপিডি দলের নেতা সিগমার গাব্রিয়েল স্পষ্টবক্তা হিসেবে নিজের স্বভাব এতকাল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপ সফর শেষ করার পর তিনিও কড়া ভাষায় তাঁর সমালোচনা করলেন৷ উল্লেখ্য, এর আগে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলও নিজের ক্ষোভ উগরে দেন৷
এক সাক্ষাৎকারে গাব্রিয়েল বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অদূরদর্শী নীতির ফলে পশ্চিমা জগত সামগ্রিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং ইউরোপের স্বার্থের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে৷ এর কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরে গাব্রিয়েল বলেন, যদি কেউ পরিবেশ সুরক্ষা দুর্বল করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও তরান্বিত করে, সংকটপূর্ণ এলাকায় আরও অস্ত্র বিক্রি করে এবং রাজনৈতিকভাবে ধর্মীয় সংঘাত নিরসনের চেষ্টা না করে – সে ইউরোপের শান্তি ঝুঁকির মুখে ফেলছে৷ এই অবস্থায় ইউরোপীয়দের একজোট হয়ে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য লড়াই করতে হবে, অস্ত্র বিক্রি কমাতে হবে এবং ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে বলে মনে করেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে পারদের মাত্রা আরও একধাপ চড়িয়ে গাব্রিয়েল বলেন, ‘‘যে এই মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে না, সে নিজেও তার পরিণতির জন্য দায়ী হবে৷''
ট্রাম্প ও তাঁর নীতি সম্পর্কে ইউরোপে হতাশা ও ক্ষোভের মাত্রা যথেষ্ট আন্তরিক৷ সেইসঙ্গে জার্মানির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দলের রাজনীতিকরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷ এসপিডি দলের এক নেতা ম্যার্কেল সম্পর্কে বলেছেন, ট্রাম্প ফিরে যাবার পর কড়া কথা শোনানোর বদলে সরাসরি তাঁর সামনেই বিরোধিতা করা উচিত ছিল৷ দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান তুলে ধরেন৷
সোমবারও ম্যার্কেল ট্রাম্প সম্পর্কে নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন৷ বার্লিনে এক ভাষণে সেইসঙ্গে তিনি বলেন, বার্লিন ও ওয়াশিংটন অবশ্যই ঘনিষ্ঠ সহযোগী থাকবে৷ তবে ইউরোপকে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷
বন্ধুদের কাছে শত্রুর মতো এলেন ট্রাম্প
নির্বাচনি প্রচারে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর তোপ দেগেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের প্রতি এমন বৈরি মনোভাব দেখাবেন, তেমনটা কেউ ভাবতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
সৌদি আরবে স্বাচ্ছন্দ্য
নির্বাচনি প্রচারে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কড়া কথা শোনালেও প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়ে সে দেশকে বিশেষ মর্যাদা দিলেন ট্রাম্প৷ সেখানকার নেতাদের সঙ্গে তাঁকে বেশ খোশমেজাজে দেখা গেছে৷ ইসরায়েলেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ
অ্যামেরিকায় নির্বাচনি প্রচারের সময় পোপ ফ্রান্সিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প পরস্পরের সম্পর্কে বেশ কটু কথা বলেছেন৷ তাই ভ্যাটিকান সিটিতে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতকে ঘিরে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল৷ সদা হাস্যময় ও রসিকতার জন্য পরিচিত পোপ ফ্রান্সিসের মুখচ্ছবিই তাঁর মনোভাব প্রকাশ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Vucci
ন্যাটো সম্মেলনে কড়া সুর
ভ্যাটিকান থেকে ব্রাসেলসে পৌঁছেই বদলে গেল ট্রাম্পের কণ্ঠ ও শরীরের ভাষা৷ ন্যাটো শীর্ষ নেতাদের সামনে এই সামরিক জোটের প্রতি সংহতি পুনর্ব্যক্ত করার বদলে তিনি ‘বকেয়া চাঁদা’ ও ‘মার্কিন করদাতাদের স্বার্থ’ নিয়ে সোচ্চার হয়ে পড়লেন৷
ছবি: Getty Images/M.Ngan
সৌজন্যবোধের অভাব
ন্যাটোর সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও নেতাদের ভিড়ে নিজেকে জাহির করতে পিছপা হননি ট্রাম্প৷ সবাইকে পেছনে ফেলে, প্রয়োজনে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে সামনের সারিতে পৌঁছতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Dunham
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অবজ্ঞা
রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইইউ সম্পর্কেও তাঁর অবজ্ঞা এখনো দূর হয়নি৷ মুক্ত বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা, রাশিয়ার দৌরাত্ম্যের মতো বিষয় সম্পর্কে ইইউ’র মনোভাব তিনি পছন্দ করেন না৷ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পর সেকথা সাফ জানিয়েও দিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
জার্মানির প্রতি বিদ্বেষ
‘জার্মানরা খারাপ, খুবই খারাপ’ – ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকারের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন৷ অ্যামেরিকা ও জার্মানির মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ট্রাম্প শুরু থেকেই বিরক্ত৷ তবে মুক্ত বাণিজ্যের উপকার ও সার্বিক সুবিধার বদলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে চান তিনি৷
ছবি: Getty Images/M.Medina
জি-সেভেন বৈঠক
ন্যাটো ও ইইউ-র অনেক নেতার সঙ্গে আবার দেখা জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে৷ সেখানেও অ্যাজেন্ডা নিয়ে খুশি নন ট্রাম্প৷ বাকিদের সঙ্গে মতপার্থক্য বজায় রেখেই ট্রাম্প আবার ফিরে গেলেন ওয়াশিংটন৷