এএফডি মানে ‘অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড’৷ বাংলা করলে হয় ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’৷ গত কয়েক বছর ধরে দলটি জার্মান রাজনীতিতে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে৷ রাজ্য নির্বাচনে ভালো ফলও করেছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
শরণার্থী বিষয়ে আঙ্গেলা ম্যার্কেল সরকারের উদারনীতির সমালোচনা করে জার্মানদের একটি অংশের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এএফডি৷ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জার্মানির সংসদ নির্বাচনে ভালো ফল করার আশা করছে দলটি৷
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় খুশি এএফডির শীর্ষ নেতারা৷ ট্রাম্পের জয়ের পর জার্মানির যেসব রাজনৈতিক নেতা সবার আগে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন এএফডি’র দুই কো-চেয়ার ফ্রাউকে পেট্রি ও ইয়োর্গ ময়থেন৷ অভিনন্দন বার্তায় ট্রাম্পের উদ্দেশে তাঁরা লিখেছেন, এএফডি ‘তাঁর স্বাভাবিক মিত্র’ হবে৷
তবে জার্মানির দুজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও এএফডি দলের কার্যক্রমের বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, শিগগিরই ট্রাম্পকে নিয়ে এএফডির উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়তে পারে৷
ইউরোপের দক্ষিণপন্থিরা ঠিক কতটা উগ্র?
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন নীতি নিয়ে অসন্তোষ ও উদ্বাস্তু সংকটের ফলে ইউরোপ জুড়ে দক্ষিণপন্থি দলগুলির পালে হাওয়া লেগেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Frey
ফ্রাউকে পেট্রি, অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)
‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দলের নেত্রী ফ্রাউকে পেট্রির মতে সীমান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশ রোখার শেষ পন্থা হিসেবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে পারে, কেননা ‘‘সেটাই আইন’’৷ ইউরোনিন্দুক এএফডি দল ধীরে ধীরে সরকার তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধী একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছে৷ ২০১৬ সালের মার্চের রাজ্য নির্বাচনে এএফডি ২৫ শতাংশ অবধি ভোট পায় ও চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের নিজের প্রদেশের বিধানসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হয়৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
মারিন ল্য পেন, ন্যাশনাল ফ্রন্ট (ফ্রান্স)
ব্রেক্সিট ও যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় ফ্রান্সের ‘ফ্রঁ নাসিনাল’ বা ‘ন্যাশানাল ফ্রন্ট’-কে নতুন বেগ এনে দিতে পারে, বলে অনেকের ধারণা৷ জঁ-মারি ল্য পেন ১৯৭২ সালে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ মারিন তাঁর বাবার কাছ থেকে দলের ভার নেন ২০১১ সালে৷ ন্যাশানাল ফ্রন্ট বা জাতীয় ফ্রন্টকে একটি জাতীয়তাবাদী দল, যারা অভিবাসন ও ইইউ বিরোধী প্রচারণায় অনুরূপভাবে সোচ্চার৷
ছবি: Reuters
গের্ট উইল্ডার্স, পার্টি অফ ফ্রিডম (নেদারল্যান্ডস)
ওলন্দাজ স্বাধীনতা দলের নেতা গের্ট উইল্ডার্স ইউরোপের বিশিষ্টতম দক্ষিণপন্থি রাজনীতিকদের মধ্যে গণ্য৷ ২০১৪ সালে তিনি একটি প্রকাশ্য জনসভায় প্রশ্ন তোলেন, জনতা দেশে বেশি না কম মরক্কান চায়৷ এ জন্য তাঁকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও, কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি৷ তাঁর দল ইইউ ও ইসলাম বিরোধী বলে পরিচিত৷ আগামী বছর নেদারল্যান্ডসে সংসদীয় নির্বাচন৷ জরিপে আপাতত উইল্ডার্সের দল এগিয়ে৷ বর্তমানে তাদের সংসদে ১৫টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Koning
নিকোস মিচালোলিয়াকোস, গোল্ডেন ডন (গ্রিস)
নিকোস মিচালোলিয়াকোস গ্রিসের নিও-ফ্যাসিস্ট দল ‘সোনালি সকাল’-এর প্রধান৷ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে ও তাঁর দলের অন্যান্য বহু সতীর্থকে একটি অপরাধমূলক সংগঠন গঠনের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিকোস মিচালোলিয়াকোস-কে মুক্তি দেওয়া হয়৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সংসদীয় নির্বাচনে ‘সোনালি সকাল’ ১৮টি আসন জয় করে৷ দলটি অভিবাসন বিরোধী ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির পক্ষপাতী৷
ছবি: Angelos Tzortzinis/AFP/Getty Images
গাবোর ভনা, জবিক (হাঙ্গেরি)
হাঙ্গেরির অভিবাসন বিরোধী ও অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদী দল জবিক ২০১৮ সালের মধ্যে সরকারগঠনে সংশ্লিষ্ট হওয়ার আশা রাখে৷ তারা ইতিমধ্যেই হাঙ্গেরির তৃতীয় বৃহত্তম দল, ২০১৪-র নির্বাচনে তারা ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ জবিক দল ইইউ-এর সদস্যতা সম্পর্কে গণভোট চায়৷ ২০১২ সালে জবিক সমকামী বিরোধী একটি বিল উপস্থাপন করেছিল, কেননা জবিক ‘যৌন বিচ্যুতি’ বা ভিন্নতাকে অপরাধ বলে ঘোষণা করার পক্ষে৷
ছবি: picture alliance/dpa
জিমি অকেসন, সুইডেন ডেমোক্র্যাটস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর সুইডেন ডেমোক্র্যাটসদের নেতা জিমি অকেসন সুউডিশ টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয় স্থানেই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ করে একটি আন্দোলন চলেছে৷’’ সুইডেন ডেমোক্র্যাটস-রা অভিবাসন সীমিত করতে চায়, তারা তুরস্কের ইইউ-তে যোগদানের বিরোধী ও সুইডেনের ইইউ সদস্যতা সম্পর্কে একটি গণভোট কামনা করে৷
ছবি: AP
নর্বার্ট হোফার, ফ্রিডম পার্টি (অস্ট্রিয়া)
অস্ট্রিয়ার জাতীয়তাবাদী ‘স্বাধীনতা দল’-এর নর্বার্ট হোফার সাম্প্রতিক রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে মাত্র ৩০,০০০ ভোটে পরাজিত হয়েছেন সবুজ দলের প্রবীণ নেতা আলেক্সান্ডার ফান ডেয়ার বেলেন-এর কাছে৷ প্রথম পর্যায়ে হোফারই সর্বাধিক ভোট পেয়েছিলেন৷ ফ্রিডম পার্টির নেতা হোফার অস্ট্রিয়ার সীমান্ত আরো জোরদার করার জন্য আন্দোলন করছেন এবং অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করতে চান৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
মারিয়ান কোৎলেবা, পিপলস পার্টি – আওয়ার স্লোভাকিয়া
কট্টর দক্ষিণপন্থি ‘গণদল – আমাদের স্লোভাকিয়া’-র নেতা মারিয়ান কোৎলেবাকে বলতে শোনা গেছে, ‘একটি অভিবাসীও বড় বেশি৷’ আরেকটি উপলক্ষ্যে তিনি ন্যাটো জোটকে একটি ‘অপরাধী সংগঠন’ বলে অভিহিত করেন৷ দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরো মুদ্রা এলাকা থেকে স্লোভাকিয়াকে বার করে আনতে চায়৷ ২০১৬ সালের মার্চ মাসের নির্বাচনে ‘আমাদের স্লোভাকিয়া’ দল আট শতাংশ ভোট পায় ও ১৫০ সদস্যের সংসদে ১৪টি আসন দখল করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
ট্রাম্প ও এএফডির মধ্যে মিল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিশ্লেষক হেন্ড্রিক ট্র্যাগার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এএফডি আর ট্রাম্প দুজনই বলে থাকেন যে, তারা মানুষের মনের কথা শুনেছেন৷’’ আরেক বিশ্লেষক ভ্যার্নার পাটসেল্ট ডয়চে ভেলেকে বলেন, ট্রাম্পের জয়ে এএফডি মনে করছে, হোয়াইট হাউস এমন একজনকে পেল যিনি রাজনীতিবিদ যেমন হওয়া উচিত সেরকম কাজ করেন৷
তবে...
পাটসেল্ট মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের পক্ষে যা করা সম্ভব হয়েছে জার্মান রাজনৈতিক পরিবেশে সেটি সহজে করা যাবে না, কারণ, জার্মানির দল ও সংসদীয় সরকারব্যবস্থা বেশ পোক্ত৷ তাছাড়া ‘‘এএফডিতে ট্রাম্পের মতো কোনো ধনি ব্যক্তি নেই, যিনি দলের দায়িত্ব নিতে পারেন৷''
হেন্ড্রিক ট্র্যাগার আরেকটি পার্থক্যের কথা বললেন৷ ‘‘ট্রাম্প হচ্ছেন ওয়ান-ম্যান শো৷ কিন্তু এএফডির এমন অনেক সদস্য আছেন যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন,’’ বলেন তিনি৷ তাঁর আশঙ্কা, এএফডি এখন পর্যন্ত সদস্যদের মধ্যকার ভিন্নতা পাশ কাটিয়ে দল হিসেবে সফল হয়ে উঠতে পারলেও, ‘ট্রাম্প ইফেক্টের’ প্রভাবে দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হলে বিভেদ তৈরি হতে পারে৷
পাটসেল্টের বিশ্বাস, মার্কিন জনগণ একসময় বুঝতে পারবে যে, ট্রাম্প তাদের দেশকে খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন৷ তখন এএফডির কর্মীরাও ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁদের যে কতটা দূরত্ব তা সবাইকে বোঝাতে উঠেপড়ে লাগবেন৷
প্রতিবেদন: কায়-আলেকজান্ডার শলজ/জেডএইচ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
ট্রাম্পের কয়েকজন তারকা শত্রু-মিত্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব আলোচিত নাম৷ তখন থেকেই তারকাও তিনি৷ সেই সুবাদে অনেক সেলেব্রিটিই তাঁর বন্ধুর মতো, তবে ‘শত্রু’ও আছে অনেক৷ ছবিঘরে থাকছে সেরকমই কয়েকজন সেলিব্রেটির কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Jakwerth
মেরিল স্ট্রিপ
এক প্রতিবন্ধী সাংবাদিককে কটাক্ষ করায় ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিট৷ সঙ্গে সঙ্গেই টুইটারে তার জবাব দিয়েছেন ট্রাম্প৷ লিখেছেন,অস্কারজয়ী মেরিল স্ট্রিপ নাকি ‘‘অন্যতম সেরা ওভার রেটেড অভিনেত্রী’’৷ অর্থাৎ আসলে যত ভালো অভিনেত্রী, তার চেয়ে অনেক বেশি খ্যাতি নাকি অর্জন করে ফেলেছেন স্ট্রিপ৷ অথচ ২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে এই ট্রাম্পই কিন্তু বলেছিলেন মেরিল স্ট্রিপ তাঁর প্রিয় অভিনেত্রী৷
ছবি: Reuters/NBC/P. Drinkwater
কানইয়ে ওয়েস্ট
কয়েকদিন আগে গায়ক কানইয়ে ওয়েস্টের সঙ্গে কথোপকথন সবাইকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছিল৷ কথোপকথন শেষে ট্রাম্প বেশ হেসেই বলছিলেন, ‘‘আমাদের বন্ধুত্ব অনেক দিনের৷’’ অথচ ২০০৯ সালে বিষয়টি অন্যরকম ছিল৷ টেলর সুইফটের মিউজিক ভিডিও নিয়ে ঝামেলায় জড়ানোয় ক্যানে ওয়েস্টকে ‘বিরক্তিকর’ বলে তাঁকে ‘বর্জন’ করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/AFP/T.A. Clary
আর্নল্ড শোয়ারৎসেনেগার
হালে হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ারৎসেনেগারের সঙ্গেও ট্রাম্পের সম্পর্ক ভালো নয়৷ হবে কী করে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শোয়ারৎসেনেগার যে হিলারি ক্লিন্টনকে সমর্থন দিয়েছেন!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Trinh
আন্দ্রেয়া বোচেলি
এতদিন ইটালির শিল্পী বোচেলিকে খুব পছন্দ করতেন ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠানে তাই ধ্রুপদী শিল্পীকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট৷ কিন্তু বোচেলি জানিয়ে দিয়েছেন, এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি আগ্রহী নন৷ বলা বাহুল্য, বিষয়টি ট্রাম্পকে মনক্ষুণ্ণ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Szigetvary
মবি
বোচেলি, এল্টন জন, সেলিন ডিয়নদের মতো তারকারা অভিষেক অনুষ্ঠানে আসতে অস্বীকৃতি জানানোয় অনুষ্ঠানের আয়োজকরা খুব বিপদে পড়েছেন৷ নতুন করে আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে হচ্ছে অনেকের কাছে৷ এমন অনেককেই আমন্ত্রণ পাঠানো হচ্ছে, যাঁরা খুব বড় তারকা নন৷পশু অধিকার কর্মী, গায়ক এবং ডিজে মবিকেও পাঠানো হয়েছে চিঠি৷ টুইটারে মবি লিখেছেন, ‘‘হা হা হা হা... আচ্ছা, ট্রাম্প যদি আয়করের হিসেব দেন, তাহলে আমি বিবেচনা করে দেখতে পারি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Lp/Yann Foreix
জ্যাকি ইভাঙ্কো
ক্লাসিক্যাল ক্রসওভার গায়িকা জ্যাকি ইভাঙ্কোর বয়স মাত্র ১৭ বছর৷ এই বয়সেই তিনি বড় তারকা৷ ট্রাম্পের অভিষেকে অনেক তারকাই আসছেন না, কিন্তু জ্যাকি থাকছেন৷