সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়ছে, যখন সবার অস্তিত্ব রক্ষায় বিভেদ ভোলা খুব জরুরি, তখন এ কী করলেন ট্রাম্প? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করতেই পারেন, তাই বলে এমন সময়ে অর্থায়ন বন্ধের নির্দেশ!
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্টের হঠকারী বক্তব্য বা একপেশে সিদ্ধান্তের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ৷ এর আগে জলবায়ু পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা অগ্রাহ্য করে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, পরমাণু চুক্তি বাতিল করে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ বাড়ানোতেও ভূমিকা রেখেছেন৷ তখন সমালোচনা হয়েছে, এখনো হচ্ছে৷ কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিলে তো!
সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেই পায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)৷ গতবছর ডব্লিউএইচও-র মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ (৪০০ মিলিয়ন ডলার) দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷
পপুলিজম বা জটিল সমস্যার চটজলদি সমাধান বাতলে দেবার প্রবণতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু পপুলিস্ট নেতারা করোনা সংকটের সামনে অসহায় হয়ে পড়ছেন৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
ডনাল্ড ট্রাম্পের দুশ্চিন্তা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে সাফল্যের আশায় ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ প্রথমে করোনা সংকট লঘু করে দেখিয়ে চাপের মুখে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি৷তবে বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের অবজ্ঞা করে ইস্টারের আগেই পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ করে তুলতে চান ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
বরিস জনসনের উভয় সংকট
সবে ব্রেক্সিট কার্যকর করে জনপ্রিয়তা উপভোগ করছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ করোনা সংকট তাঁর ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে৷ প্রথমদিকে পরস্পরবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান নেবার পর জনসনও কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবকাঠামো পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে জনসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/I. Vogler
নরেন্দ্র মোদীর বিড়ম্বনা
ভারতে করোনা সংকট এখনো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি৷ কিন্তু সমালোচকরা সরকারের অনেক ‘লোক দেখানো’ পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন৷ তাঁদের মতে, লকডাউন ঘোষণা ও জনমোহিনী ভাষণ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংক্রমণ কমাতে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ভারতকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
বেপরোয়া বোলসোনারো
অন্যান্য পপুলিস্ট বিশ্বনেতার মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো করোনা সংকট যতটা সম্ভব উপেক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন৷ তিনি বিষয়টিকে নিয়ে ‘অকারণ ত্রাস’ সৃষ্টির সমালোচনা করে থাকেন৷ এমনকি অবিলম্বে দেশে সব বাধানিষেধ তুলে নেবার ডাক দিচ্ছেন তিনি৷ বয়স্কদের ভিত্তিহীন আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/A. Borges
সীমান্ত বন্ধ রাখতে চান ল্য পেন
ইউরোপের পপুলিস্ট নেতারা ভাঙলেও মচকাতে প্রস্তুত নন৷ ফ্রান্সের জাতীয় ফ্রন্ট নেত্রী মারিন ল্য পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের ‘সীমন্তহীনতার ধর্ম’-কে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন৷ তাঁর মতে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই সীমান্ত মানুষকে সুরক্ষা দেয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরামর্শ যে দেয়নি, ল্য পেনের অনুগামীরা সেই খবর রাখেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
বিশেষজ্ঞদের পছন্দ নয়
ট্রাম্প, জনসন, বোলসোনারোর মতো নেতারা কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য করতে চান না৷ বিশেষজ্ঞরাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠুন, সেটাও তারা চান না৷ নিজেদের ভিত্তিহীন ধারণাকে জনমোহিনী মোড়কে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তাঁরা যথেষ্ট সফল হয়েছেন৷ ফলে করোনা সংকটের সময় সাধারণ মানুষের বিপদের আশঙ্কা আরো যাচ্ছে৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
6 ছবি1 | 6
ঘোষণাটা এলো এমন সময়ে যখন কিনা ১৮৫ টি দেশে মোট এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে৷ ডাব্লিউএইচও বলছে এখনো সবচেয়ে খারাপ সময়টা আসেনি, আরো সতর্ক না হলে, আরো জোরদার লড়াই না করলে সংক্রমণ ছড়াবে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হবে অনেক, ট্রাম্পের ঘোষণা এলো তখন৷
এমন নয় যে, ডাব্লিউএইচও সব কাজ ঠিক করেছে৷ গতবছর চীনে প্রথম যখন সংক্রমণ দেখা দেয়, ডাব্লিউএইচও সক্রিয় হলে সেই তথ্য সবার জানা হতো, সব দেশ সতর্ক হলে বিপর্যয় এতটা হয়তো হতো না৷
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তা স্বীকার করেই ট্রাম্পের অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণার সমালোচনা করেছেন৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘ, নোবেল কমিটি, ওপেক, ওআইসি, আইএমএফ- বলতে গেলে সবারই কিছু-না-কিছু বড় সমালোচনা আছে৷ ভালো কাজও আছে সবার৷ ডাব্লিউএইচও-র জন্য এটা ভালো কাজ দেখানোর সময়৷ এমন সময়ে বাগড়া দিয়ে, ‘শত্রুর’ ভূমিকায় নেমে কার উপকার করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প?
দেশে ট্রাম্প প্রশাসনের একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা৷ শুরুতে করোনা ভাইরাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এখন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ৷ মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে৷ ট্রাম্প নিজেও মনে করেন, সংখ্যাটা এক লাখ ছাড়াতে পারে৷ বেসামাল হয়ে, বড় দেশের ছোট মনের নেতা হয়ে সেই বিপর্যয় এড়াতে পারবেন না ট্রাম্প৷ দেশে ভোট বাড়তেও পারে, তবে সারা বিশ্বে তার প্রতি শ্রদ্ধা আরো কমবে৷
করোনা: এসব গুজবে কান দেবেন না
পুরো বিশ্বে নভেল করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে গুজবের শেষ নেই৷ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমনই কয়েকটি গুজবের জবাব দিয়েছে৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Geisler-Fotopress
১. ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কে করোনা ছড়ায়?
রেডিও তরঙ্গ বা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোন ভাইরাস ছড়ায় না৷ এমন অনেক দেশেই করোনা’র সংক্রমণ হয়েছে, যাদের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
২. রোদের তাপ কি করোনা প্রতিরোধ করে?
তাপমাত্রা যত বেশিই হোক না কেনো, যেকোন তাপমাত্রায় আপনি সংক্রমিত হতে পারেন৷ ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা আছে এমন অনেক দেশেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. van den Bergh
৩. একবার সংক্রমণ, সারাজীবনের সংক্রমণ?
করোনা আক্রান্ত যেকোন মানুষ পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন৷ আপনার লক্ষণ চিনতে হবে এবং সেই বুঝে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে৷ আপনার যদি জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে ডাক্তারকে ফোন দিন৷
ছবি: AFP/B.R. Smith
৪. ১০ সেকেন্ডের নাই ভরসা
অনেকে মনে করেন কোনো ধরনের কষ্ট বা কাশি ছাড়া ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় শ্বাস আটকে রাখতে পারলে তার করোনা নেই৷ এই ধারণা ভুল৷ করোনা ভাইরাসের খুব সাধারণ একটি লক্ষণ হল শুকনো কাশি, ক্লান্তি এবং জ্বর৷ কারো কারো ক্ষেত্রে ভয়াবহ ধরনের নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা যায়৷ আপনার উচিত এসব লক্ষণ থাকলে আগে পরীক্ষা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Campodonico
৫. মদে মুক্তি?
বেশি বেশি মদ বা অ্যালকোহল খেলে করোনা প্রতিরোধ হয় না বরং তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.-P. Muller
৬. তীব্র শীতে করোনা মরে?
এটা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে তীব্র শীত বা বরফে করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারে না৷ কারণ বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেনো আপনার শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Ozdil
৭. হ্যান্ড ড্রায়ার করোনা মারে?
না৷ হাত শুকানোর যে মেশিন, করোনা ভাইরাসের উপর তার কোন প্রভাব নেই৷ আপনার যা করণীয় তা হল: বার বার সবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া৷ এরপর টিসু, তোয়ালা বা গরম ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/NIAID-RML
৮. নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন কি করোনায় কার্যকর?
না৷ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন যেমন: নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন বা হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি ভ্যাকসিন করোনার ক্ষেত্রে কার্যকর নয়৷ এই ভাইরাস একেবারে নতুন এবং ভিন্ন ধরনের, যার জন্য চাই আলাদা ভ্যাকসিন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় গবেষকরা এ বিষয়ে কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/B. Guan
৯. নাকের ড্রপ কি সংক্রমণ থেকে বাঁচায়?
না৷ এমন কোন তথ্য-প্রমাণ এখনো মেলেনি যে নিয়মিত স্যালাইন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়৷
ছবি: Imago Images/Panthermedia/A. Guillem
১০. করোনা প্রতিরোধে বিশেষ কোন ওষুধ?
করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন ওষুধ নেই৷ কেবল লক্ষণ অনুযায়ী এ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকেরা৷