আত্মপক্ষ সমর্থনে সরব হয়ে উঠলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন৷ আপাতত আইনি পদক্ষেপের আশঙ্কা না থাকলেও রাজনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার প্রাক্তন আইনজীবী মাইকেল কোয়েন আদালতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনা সত্ত্বেও হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো অপরাধ করেননি৷
ট্রাম্প এর আগেও বহুবার দাবি করেছেন যে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ করা দুই নারীর মুখ বন্ধ করতে প্রচারের তহবিল থেকে কোনো অর্থ দেননি৷ ব্যক্তিগত তহবিল থেকেই তিনি নাকি সেই অর্থ হস্তান্তর করেছিলেন৷ অপরাধ প্রমাণিত হলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷
ট্রাম্প নিজে আদালতে কোয়েনের বক্তব্যের ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন৷ এক টুইট বার্তায় তিনি দাবি করেন যে, নির্বাচনি প্রচারের অর্থায়নের ক্ষেত্রে কোয়েন নিয়ম লঙ্ঘনের যে অভিযোগ আদালতে মেনে নিয়েছেন, তা মোটেই কোনো অপরাধ নয়৷ ভালো আইনজীবীর প্রয়োজন হলে কোয়েনের কাছে না যাবার পরামর্শ দেন তিনি৷
আরেক টুইট বার্তায় ট্রাম্প তাঁর প্রচার টিমের প্রাক্তন ম্যানেজার পল ম্যানাফোর্টের প্রশংসা করেন৷ উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আরেক আদালতে প্রতারণার একাধিক অভিযোগে ম্যানাফোর্টকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা না করায় ট্রাম্প তাঁকে ‘ব্রেভ ম্যান' বা ‘সাহসী পুরুষ' হিসেবে বাহবা দিয়েছেন৷ ফক্স নিউজ নেটওয়ার্কের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ম্যানাফোর্টকে ক্ষমা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ ম্যানাফোর্ট নীরব থাকায় তিনিও এমন ক্ষমা প্রত্যাশা করছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের তদন্তের ফলে ম্যানাফোর্ট ও কোয়েনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এসেছে বলে গোটা বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে হোয়াইট হাউস৷ কোয়েনের আইনজীবী ল্যানি ডেভিস জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলের কাছে এমন তথ্য রয়েছে, যা তদন্তকারী দলের প্রধান রবার্ট মালারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে৷ প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করতে চাইলেও কোয়েন তা প্রত্যাখ্যান করবেন বলে ইঙ্গিত দেন ডেভিস৷
মার্কিন সংসদে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠলেও রিপাবলিকান সদস্যরা উল্লেখযোগ্যভাবে নীরব রয়েছেন৷ বিরোধীরা বর্তমান ঘটনাবলীকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে তুলনা করছেন, যার জের ধরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিচার্ড নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল৷ আগামী নভেম্বর মাসে অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনের উপর এই ঘটনার প্রভাব নিয়েও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে৷ এমনকি ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রসঙ্গ আবার আলোচিত হচ্ছে৷ তবে রবার্ট মালার শেষ পর্যন্ত কী করেন, তার উপর প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ তদন্তে অগ্রগতি বা চূড়ান্ত রিপোর্ট সম্পর্কে মালার কোনো মন্তব্য না করায় অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
ট্রাম্পের হাতে ‘যৌন হয়রানির’ শিকার যত নারী
খবরে এখন এক পর্ন তারকা৷ তাঁর সঙ্গে নাকি যৌন সম্পর্ক ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কেলেঙ্কারি আরো আছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের৷ অনেক নারীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ দেখুন কত নারী আছে সেই তালিকায়...
ছবি: picture-alliance/S. Moskowitz
স্টর্মি ড্যানিয়েলস
পর্ন স্টার স্টর্মির সাথে ট্রাম্পের সেক্স স্ক্যান্ডাল এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত৷ নির্বাচনের বছরে স্টর্মির সাথে যৌনমিলনের ব্যাপারটি গোপন রাখতে ট্রাম্পের কৌঁসুলিরা তাঁকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন৷ স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে যখন তাঁর বয়স ২৬ ছিল, তখন ট্রাম্পের সাথে তাঁর ১০ মাস প্রেম চলেছে এবং এর মধ্যে একবার তাঁদের যৌনমিলনও হয়৷ আর ঘটনাটি চাপা রাখতেই তাঁকে অর্থ দেওয়া হয়৷ ট্রাম্প অবশ্য এটা অস্বীকার করেন৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
জেসিকা লিডস
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি ভিডিও ব্লগে জেসিকা লিডস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন৷ বলেন, ১৯৮০ সালের কোনো একসময় নিউ ইয়র্কগামী একটি ফ্লাইটে ওঠার পর পাশের সিটে বসা ট্রাম্প তাঁর স্তন চেপে ধরেন এবং স্কার্টের ভেতর দিয়ে হাত ঢোকানোর চেষ্টা করেন৷ সেসময় জেসিকার বয়স ছিল ৩৮ বছর৷
ছবি: Getty Images/M. Schipper
র্যাচেল ক্রুকস
রিয়াল স্টেট কোম্পানির ‘রিসিপশনিস্ট’ হিসেবে কাজ করার সময় ট্রাম্প র্যাচেলকে বিনা অনুমতিতে সরাসরি ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন৷ ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তিনি এই অভিযোগ করে জানান যে, ঘটনাটি ২০০৫ সালের এবং তখন তাঁর বয়স ছিল ২২ বছর৷
ছবি: Getty Images/M. Schipper
সামান্থা হলভে
সামন্থা ২০০৬ সালে মিস ক্যারোলিনা হয়েছিলেন৷ অ্যামেরিকার বিউটি কনটেস্টেও তিনি অংশ নেন৷ এনবিসি টিভির ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৬ সুন্দরী প্রতিযোগিতা চলার সময় ট্রাম্প সরাসরি প্রতিযোগীদের পোশাক বদলের কক্ষে ঢোকেন৷ তখন তাঁদের বেশিরভাগই নগ্ন ছিলেন বা বাথরোব পরেছিলেন৷ সিএনএনকে সামান্থা বলেন, ‘‘ট্রাম্প আমাদের এমনভাবে দেখছিলেন যেন আমরা এক-একটি মাংসপিণ্ড!’’
ছবি: Getty Images/M. Schipper
সামার জারভোস
২০০৬ সালে ট্রাম্পের রিয়েলিটি শো ‘দ্য প্রিন্টিস’-এ কাজ করতেন সামার জারভোস৷ ২০০৭ সালে একটি কাজের ব্যাপারে ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পর ট্রাম্প তাঁকে বিছানায় যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন৷ সামারের অভিযোগ, তিনি বিছানায় যাওয়ার ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ‘‘ট্রাম্প আমার কাঁধে জোরে চাপ দিয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকেন৷ শুধু তাই নয়, আমার বুকে হাত দিয়ে পিষতে থাকেন তিনি৷’’
ছবি: Reuters/M. Blake
ক্রিস্টিন অ্যান্ডারসন
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে ক্রিস্টিন বলেন, ১৯৯০ সালে একটি নাইট ক্লাবে ট্রাম্প তাঁর স্কার্টের মধ্যে জোরপূর্বক হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন৷ ‘‘সে সময় তিনি আমার যোনি পর্যন্ত স্পর্শ করেছিলেন,’’ অভিযোগ ক্রিস্টিনের৷
ছবি: picture-alliance/S. Moskowitz
লিসা বয়ানে
ট্রাম্পের দেওয়া এক পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন লিসা, ১৯৯০ সালে৷ সেখানে ট্রাম্পের সামনে একটা টেবিলে তাঁকে নাচতে করতে বাধ্য করা হয়৷ নীচে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প পোশাকে উঁকি দিয়ে ভেতরটা দেখছিলেন আর ঠিক কী দেখতে পারছেন তা অশ্লীলভাবে বলছিলেন৷ ‘সিক্সটিন উইমেন অ্যান্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প’ নামের এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে এ সব কথা জানান লিসা৷
ছবি: picture alliance/dpa/F. May
জেসিকা ড্রেইক
পর্ন তারকা জেসিকা ড্রেইক ২০১৬ সালে লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত এক প্রেস কনফারেন্সে দাবি করেন যে, ১১ বছর আগে ট্রাম্প তাঁকে জোর করে ধর্ষণ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Nelson
জিল হার্থ
এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিজনেস পার্টনার’ ছিলেন জিল হার্থ৷ জিলের অভিযোগ, ট্রাম্প তাঁর দাঁতে জোর করে চুমু খেয়েছেন, নিজের ঠোঁট বুকে ঘষেছেন এবং যৌনাঙ্গে হাত দিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images for New York Weddings/L. Busacca
ক্যাথি হেলার
স্বামী, তিন সন্তান এবং শ্বাশুড়ির সামনে ট্রাম্প তাঁকে চুমু খেয়েছিলেন বলে ক্যাথির অভিযোগ৷ ১৯৯৭ সালে ট্রাম্পের রিয়ালিটি শোতে পরিচিত হওয়ার সময় ট্রাম্প নাকি সবার উপস্থিতিতেই ক্যাথির সাথে ঐ কাণ্ড ঘটান৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
নিনি লাকসোনেন
সাবেক মিস ফিনল্যান্ড নিনি লাকসোনেনের অভিযোগ, ডেভিড লেটারম্যানের সাথে ‘দ্য লেট শো’ নামের একটি অনুষ্ঠানের ঠিক আগে ফটোশুটের সময় ট্রাম্প তাঁর নিতম্বে চাপ দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Haavisto
মেলিন্ডা ম্যাকগিলিভ্রি
২০১৬ সালে মেলিন্ডা পাম বিচ পোস্ট পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৩ সালের জানুয়ারির ২৪ তারিখে একটি অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি৷ তখন ট্রাম্প তাঁর নিতম্বে হাত দেয়৷ ঘটনার সময় মেলিন্ডার বয়স ছিল ২৩ বছর৷
ছবি: Imago/Zumapress
নাতাশা স্টোয়নফ
২০০৫ সালে ‘পিপলস’ ম্যাগাজিনের ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে যান স্টোয়নফ ৷ সেসময় ট্রাম্প তাঁকে বিনা অনুমতিতে চুমু খান৷ সাংবাদিক নাতাশার অভিযোগ, ট্রাম্প তাঁকে দেয়ালের সাথে জোর করে চেপে ধরেন এবং জিভটা ঠোঁটের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Imago/Zumapress
টেম্পল ট্যাগার্ট
অ্যামেরিকার উটা রাজ্যের সাবেক ‘মিস উটা’-র অভিযোগ, ট্রাম্প জোর করে তাঁকে দু’বার চুমু খেয়েছেন৷ ১৯৯৭ সালের মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় একবার এবং আরেকবার ট্রাম্প টাওয়ারে ওই কীর্তি করেন তিনি, অভিযোগ ট্যাগার্টের৷ তখন তাঁর বয়স ২১ বছর ছিল৷
ছবি: Getty Images/M. Coppola
কারিনা ভার্জিনিয়া
১৯৯৮ সালে ইউএস ওপেন টেনিস খেলা দেখে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন কারিনা৷ তখন ট্রাম্প নিজের গাড়ি থেকে নেমে কারিনার বাহু ধরেন এবং বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন৷