এবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নৈতিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের অযোগ্য৷ ট্রাম্প মহিলাদের ‘মাংসের টুকরো’ হিসেবে গণ্য করেন বলেও দাবি করেছেন কোমি৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার এবিসি নিউজ টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে কোমি এসব মন্তব্য করেন৷ ট্রাম্প কোমিকে বরখাস্ত করেন গতবছর৷ এফবিআই তখন ট্রাম্পের ২০১৬ সালের নির্বাচনি অভিযানের সঙ্গে রুশযোগাযোগের অভিযোগ তদন্ত করছিল৷
ট্রাম্প কোমি ও তাঁর ‘এ হায়ার লয়ালটি’ বা ‘উচ্চতর আনুগত্য’ বইটির ক্রুদ্ধ সমালোচনা করে টুইটারে কোমিকে ‘স্লাইমবল’ বা ‘নোংরার হদ্দ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তাঁকে ‘‘ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট এফবিআই প্রধান’’ আখ্যা দিয়েছেন৷ রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি বলেছে যে, কোমি তাঁর ‘‘বই বিক্রির জন্য যা খুশি বলতে রাজি’’ এবং তাঁর সাক্ষাৎকারটি প্রমাণ করে যে, ‘‘তাঁর উচ্চতর আনুগত্য একমাত্র নিজের প্রতি৷’’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ‘অযোগ্যতা’
কোমি বলেছেন, ‘‘তাঁর মানসিক অদক্ষতা বা বয়সের কারণে মতিভ্রম সম্পর্কে যা বলা হয়, তা আমি বিশ্বাস করি না৷ শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে উনি প্রেসিডেন্ট হবার অযোগ্য বলে আমি মনে করি না৷ উনি নৈতিকভাবে প্রেসিডেন্ট হবার অযোগ্য বলে আমি মনে করি৷ নৈতিকভাবে উনি প্রেসিডেন্ট হবার অযোগ্য৷’’
‘‘আমাদের প্রেসিডেন্টকে শ্রদ্ধার প্রতিমূর্তি হতে হবে এবং দেশের অন্তরতম মূল্যবোধকে মেনে চলতে হবে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সত্যবাদিতা৷ এই প্রেসিডেন্ট তা করতে সমর্থ নন৷’’
আইনের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি
ট্রাম্প যে কোমিকে হোয়াইট হাউসের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন সম্পর্কে এফবিআই-এর তদন্ত সমাপ্ত করতে বলেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে ‘‘বাস্তবিক আইনের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির কিছু হদিশ আছে,’’ বলে কোমির ধারণা৷ ট্রাম্প উভয়ের মধ্যে এ ধরনের কোনো বার্তালাপের কথা অস্বীকার করলেও তা বাস্তবিক ঘটেছিল বলে কোমি বারংবার দাবি করেছেন৷ তবে ফ্লিন মামলায় তিনি তদন্তকারী বা সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন না, শুধুমাত্র সাক্ষী ছিলেন, কোমি এ কথাও উল্লেখ করেছেন৷
রাশিয়া প্রসঙ্গ
রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সংযোগের ব্যাপারে গুপ্তচর বিভাগের অপ্রক্রিয়াজাত খবরাখবর সম্বলিত একটি ‘ডসিয়ের’ বা দলিল আছে বলে কোমির বিশ্বাস৷ তিনি বলেন যে, তিনি গোড়া থেকেই ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার স্টিলের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রতীত ছিলেন৷
নারীর প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি
‘‘যে ব্যক্তি মহিলাদের সম্পর্কে এমনভাবে কথাবার্তা বলেন ও তাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন যেন তাঁরা শুধুমাত্র মাংসের টুকরো; যিনি গুরুত্বপূর্ণ বা অকিঞ্চিৎকর বিষয়ে একটানা মিথ্যাভাষণ করে থাকেন, এমন একজন ব্যক্তি নৈতিক বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবার উপযোগী নন৷ এবং এটা (আমার) নীতিগত মন্তব্য নয়,’’ বলেন কোমি৷
আনুগত্য
‘‘উনি এফবিআই প্রধান হিসেবে আমার ব্যক্তিগত আনুগত্য দাবি করেছিলেন৷ আমার আনুগত্য মার্কিন জনগণ ও সংবিধানের প্রতি হওয়ার কথা,’’ কোমি মন্তব্য করেন৷ উত্তরে ট্রাম্প টুইটার করেন, ‘‘আমি কোনোদিন কোমির কাছ থেকে ব্যক্তিগত আনুগত্য চাইনি৷ এমনকি আমি এই মানুষটাকে প্রায় চিনি না বলা চলে৷ ওঁর অন্যান্য নানা অসত্যের মধ্যে আরো একটি৷’’
এসি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
ট্রাম্পের হাতে ‘যৌন হয়রানির’ শিকার যত নারী
খবরে এখন এক পর্ন তারকা৷ তাঁর সঙ্গে নাকি যৌন সম্পর্ক ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কেলেঙ্কারি আরো আছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের৷ অনেক নারীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ দেখুন কত নারী আছে সেই তালিকায়...
ছবি: picture-alliance/S. Moskowitz
স্টর্মি ড্যানিয়েলস
পর্ন স্টার স্টর্মির সাথে ট্রাম্পের সেক্স স্ক্যান্ডাল এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত৷ নির্বাচনের বছরে স্টর্মির সাথে যৌনমিলনের ব্যাপারটি গোপন রাখতে ট্রাম্পের কৌঁসুলিরা তাঁকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন৷ স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে যখন তাঁর বয়স ২৬ ছিল, তখন ট্রাম্পের সাথে তাঁর ১০ মাস প্রেম চলেছে এবং এর মধ্যে একবার তাঁদের যৌনমিলনও হয়৷ আর ঘটনাটি চাপা রাখতেই তাঁকে অর্থ দেওয়া হয়৷ ট্রাম্প অবশ্য এটা অস্বীকার করেন৷
ছবি: Reuters/E. Munoz
জেসিকা লিডস
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি ভিডিও ব্লগে জেসিকা লিডস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন৷ বলেন, ১৯৮০ সালের কোনো একসময় নিউ ইয়র্কগামী একটি ফ্লাইটে ওঠার পর পাশের সিটে বসা ট্রাম্প তাঁর স্তন চেপে ধরেন এবং স্কার্টের ভেতর দিয়ে হাত ঢোকানোর চেষ্টা করেন৷ সেসময় জেসিকার বয়স ছিল ৩৮ বছর৷
ছবি: Getty Images/M. Schipper
র্যাচেল ক্রুকস
রিয়াল স্টেট কোম্পানির ‘রিসিপশনিস্ট’ হিসেবে কাজ করার সময় ট্রাম্প র্যাচেলকে বিনা অনুমতিতে সরাসরি ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন৷ ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তিনি এই অভিযোগ করে জানান যে, ঘটনাটি ২০০৫ সালের এবং তখন তাঁর বয়স ছিল ২২ বছর৷
ছবি: Getty Images/M. Schipper
সামান্থা হলভে
সামন্থা ২০০৬ সালে মিস ক্যারোলিনা হয়েছিলেন৷ অ্যামেরিকার বিউটি কনটেস্টেও তিনি অংশ নেন৷ এনবিসি টিভির ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ করেন, ২০০৬ সুন্দরী প্রতিযোগিতা চলার সময় ট্রাম্প সরাসরি প্রতিযোগীদের পোশাক বদলের কক্ষে ঢোকেন৷ তখন তাঁদের বেশিরভাগই নগ্ন ছিলেন বা বাথরোব পরেছিলেন৷ সিএনএনকে সামান্থা বলেন, ‘‘ট্রাম্প আমাদের এমনভাবে দেখছিলেন যেন আমরা এক-একটি মাংসপিণ্ড!’’
ছবি: Getty Images/M. Schipper
সামার জারভোস
২০০৬ সালে ট্রাম্পের রিয়েলিটি শো ‘দ্য প্রিন্টিস’-এ কাজ করতেন সামার জারভোস৷ ২০০৭ সালে একটি কাজের ব্যাপারে ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পর ট্রাম্প তাঁকে বিছানায় যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন৷ সামারের অভিযোগ, তিনি বিছানায় যাওয়ার ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ‘‘ট্রাম্প আমার কাঁধে জোরে চাপ দিয়ে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে থাকেন৷ শুধু তাই নয়, আমার বুকে হাত দিয়ে পিষতে থাকেন তিনি৷’’
ছবি: Reuters/M. Blake
ক্রিস্টিন অ্যান্ডারসন
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে ক্রিস্টিন বলেন, ১৯৯০ সালে একটি নাইট ক্লাবে ট্রাম্প তাঁর স্কার্টের মধ্যে জোরপূর্বক হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন৷ ‘‘সে সময় তিনি আমার যোনি পর্যন্ত স্পর্শ করেছিলেন,’’ অভিযোগ ক্রিস্টিনের৷
ছবি: picture-alliance/S. Moskowitz
লিসা বয়ানে
ট্রাম্পের দেওয়া এক পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন লিসা, ১৯৯০ সালে৷ সেখানে ট্রাম্পের সামনে একটা টেবিলে তাঁকে নাচতে করতে বাধ্য করা হয়৷ নীচে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প পোশাকে উঁকি দিয়ে ভেতরটা দেখছিলেন আর ঠিক কী দেখতে পারছেন তা অশ্লীলভাবে বলছিলেন৷ ‘সিক্সটিন উইমেন অ্যান্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প’ নামের এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে এ সব কথা জানান লিসা৷
ছবি: picture alliance/dpa/F. May
জেসিকা ড্রেইক
পর্ন তারকা জেসিকা ড্রেইক ২০১৬ সালে লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত এক প্রেস কনফারেন্সে দাবি করেন যে, ১১ বছর আগে ট্রাম্প তাঁকে জোর করে ধর্ষণ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Nelson
জিল হার্থ
এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিজনেস পার্টনার’ ছিলেন জিল হার্থ৷ জিলের অভিযোগ, ট্রাম্প তাঁর দাঁতে জোর করে চুমু খেয়েছেন, নিজের ঠোঁট বুকে ঘষেছেন এবং যৌনাঙ্গে হাত দিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images for New York Weddings/L. Busacca
ক্যাথি হেলার
স্বামী, তিন সন্তান এবং শ্বাশুড়ির সামনে ট্রাম্প তাঁকে চুমু খেয়েছিলেন বলে ক্যাথির অভিযোগ৷ ১৯৯৭ সালে ট্রাম্পের রিয়ালিটি শোতে পরিচিত হওয়ার সময় ট্রাম্প নাকি সবার উপস্থিতিতেই ক্যাথির সাথে ঐ কাণ্ড ঘটান৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
নিনি লাকসোনেন
সাবেক মিস ফিনল্যান্ড নিনি লাকসোনেনের অভিযোগ, ডেভিড লেটারম্যানের সাথে ‘দ্য লেট শো’ নামের একটি অনুষ্ঠানের ঠিক আগে ফটোশুটের সময় ট্রাম্প তাঁর নিতম্বে চাপ দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Haavisto
মেলিন্ডা ম্যাকগিলিভ্রি
২০১৬ সালে মেলিন্ডা পাম বিচ পোস্ট পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৩ সালের জানুয়ারির ২৪ তারিখে একটি অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি৷ তখন ট্রাম্প তাঁর নিতম্বে হাত দেয়৷ ঘটনার সময় মেলিন্ডার বয়স ছিল ২৩ বছর৷
ছবি: Imago/Zumapress
নাতাশা স্টোয়নফ
২০০৫ সালে ‘পিপলস’ ম্যাগাজিনের ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে যান স্টোয়নফ ৷ সেসময় ট্রাম্প তাঁকে বিনা অনুমতিতে চুমু খান৷ সাংবাদিক নাতাশার অভিযোগ, ট্রাম্প তাঁকে দেয়ালের সাথে জোর করে চেপে ধরেন এবং জিভটা ঠোঁটের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Imago/Zumapress
টেম্পল ট্যাগার্ট
অ্যামেরিকার উটা রাজ্যের সাবেক ‘মিস উটা’-র অভিযোগ, ট্রাম্প জোর করে তাঁকে দু’বার চুমু খেয়েছেন৷ ১৯৯৭ সালের মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় একবার এবং আরেকবার ট্রাম্প টাওয়ারে ওই কীর্তি করেন তিনি, অভিযোগ ট্যাগার্টের৷ তখন তাঁর বয়স ২১ বছর ছিল৷
ছবি: Getty Images/M. Coppola
কারিনা ভার্জিনিয়া
১৯৯৮ সালে ইউএস ওপেন টেনিস খেলা দেখে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন কারিনা৷ তখন ট্রাম্প নিজের গাড়ি থেকে নেমে কারিনার বাহু ধরেন এবং বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন৷