সম্ভবত জুলাই মাসেই আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হতে চলেছেন মার্কিন ও রুশ প্রেসিডেন্ট৷ তবে ট্রাম্প অ্যামেরিকা ও তার জোটসঙ্গীদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এর আগেও মিলিত হয়েছেন, তবে দুই নেতার মধ্যে আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক হয়নি৷ বুধবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন মস্কোয় পুটিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে বোঝাপড়ায় এসেছেন৷ পুটিন তাঁকে বলেছেন, রুশ-মার্কিন সম্পর্ক এই মুহূর্তে মোটেই সেরা অবস্থায় নেই৷ তবে রাশিয়া কখনোই সংঘাত চায়নি৷
আগামী জুলাই মাসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ট্রাম্প ব্রাসেলস যাচ্ছেন৷ তারপরই সম্ভবত ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে দুই নেতার সাক্ষাৎ হতে পারে৷ রাশিয়া সম্ভবত অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এই বৈঠক চাইছে৷ বৃহস্পতিবার এই শীর্ষ বৈঠকের দিনক্ষণ জানানো হবে বলে শোনা যাচ্ছে৷
ট্রাম্প ও পুটিন কী বিষয়ে আলোচনা করবেন? ট্রাম্প নিজে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি সিরিয়া ও ইউক্রেনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে চান৷ তবে অ্যামেরিকায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাশিয়ার সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের আশঙ্কা নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি যে সাবধানবাণী প্রকাশ করেছে, সেই বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ বোল্টন অবশ্য এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি৷ উল্লেখ্য, ট্রাম্প টিমের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগের অভিযোগে তদন্ত চলছে৷ ট্রাম্প অবশ্য শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন৷ গত নভেম্বর মাসে ভিয়েতনামে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোষ্ঠী অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনে পুটিনের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি বলেই তিনি বিশ্বাস করেন৷ বুধবারও তিনি পুটিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে আশা প্রকাশ করেন৷
ট্রাম্প ও পুটিনের ঘনিষ্ঠতা অ্যামেরিকার অনেক জোটসঙ্গীর মাথাব্যথার কারণ৷ বিশেষ করে যারা পুটিনের নেতৃত্বে রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে চাইছে, তারা এই শীর্ষ বৈঠকের দিকে কড়া নজর রাখবে৷ ব্রিটেন ছাড়াও সামরিক জোট ন্যাটো পুটিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উষ্ণতা ও সখ্যতা ভালো নজরে দেখছে না৷ ক্যানাডায় জি-সেভেন বৈঠকে জোটসঙ্গীদের প্রতি ট্রাম্প যে আচরণ করেছেন, ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনেও তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছে কিছু মহল৷ এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্কের উন্নতির প্রচেষ্টা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে৷ বিশেষ করে ইউক্রেন ও সিরিয়ায় রাশিয়া তার নীতির কোনো পরিবর্তন না করেই আন্তর্জাতিক সমাজে ‘পুনর্বাসিত’ হলে তা এক মারাত্মক দৃষ্টান্ত হবে বলে মনে করছে অনেক দেশ৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, মার্কিন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই ট্রাম্প পুটিনের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেন, ইউক্রেন ও জর্জিয়ায় রাশিয়ার দখলদারি নীতিকে মার্কিন প্রশাসন বেআইনি মনে করে৷
ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের কথা জানা গেল যেভাবে
গতবছর মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণার সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ক্রেমলিনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা চলছে৷ সম্প্রতি একাধিক তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও জানিয়েছে যে, মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চেয়েছিল রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
২০১৩: রাশিয়ায় ট্রাম্প
২০১৩ সালের ১৮ জুন ট্রাম্প টুইট করেন, ‘‘নভেম্বরের ৯ তারিখ মিস ইউনিভার্স প্যাজেন্ট রাশিয়ার মস্কো থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে৷ একটি বড় চুক্তি যা আমাদের দেশগুলোর মিলন ঘটাবে৷’’ পরবর্তীতে তিনি আরো লেখেন যে, ‘‘আপনাদের কি মনে হয় পুটিন (অনুষ্ঠানে) আসবে, যদি আসেন, তাহলে কি তিনি আমার নতুন বেস্ট ফ্রেন্ড হবেন?’’ সেবছর এক চ্যাট শোতে ট্রাম্প জানান যে, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর অনেক ব্যবসা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Prokofyev
সেপ্টেম্বর ২০১৫: হ্যাকিংয়ের অভিযোগ
এক এফবিআই এজেন্ট ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) এক তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা দেয়া কন্ট্রাক্টরকে জানান যে, ডিএনসি সম্ভবত হ্যাকড হয়েছে৷ ২০১৬ সালের ১৪ জুন, ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায় যে, রাশিয়ার হ্যাকাররা কাজটা করেছে৷
ছবি: picture alliance/MAXPPP/R. Brunel
জুলাই ২২, ২০১৬: আসাঞ্জ জানালেন আরো বিস্তারিত
জুলিয়ান আসাঞ্জের উইকিলিক্স ডিএনসি থেকে চুরি যাওয়া ২০,০০০ ইমেল প্রকাশ করে যাতে দেখা যায় যে সিনেটর বার্নি সেন্ডারসের চেয়ে হিলারি ক্লিন্টনকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/N. Hall
জুলাই ২৫, ২০১৬: তদন্তে এফবিআই
এফবিআই ঘোষণা দেয় যে ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনা তদন্ত করছে সংস্থাটি৷ হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেয়ার কারণ রয়েছে বলেও জানায় এফবিআই৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
নভেম্বর ৮, ২০১৬: জিতলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই খবর শুনে রাশিয়ার সংসদের আনন্দের বন্যা বয়ে যায়৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
নভেম্বর ১০, ২০১৬: রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার
রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের যোগাযোগ ছিল বলে জানান রাশিয়ার উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিবাকভ৷ তবে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন একথা অস্বীকার করে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্চ ২০, ২০১৭: ট্রাম্প-ক্রিমলিন যোগাযোগ তদন্তে করছে এফবিআই
এফবিআই পরিচালক জেমস কমি ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত হাউস সিলেক্ট কমিটিকে নিশ্চিত করেন যে রাশিয়া এবং ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/J. S. Applewhite
মে ৯, ২০১৭: কমিকে চাকুরিচ্যুত করলেন ট্রাম্প
কমিকে দেয়া ইস্তফা পত্রে ট্রাম্প লিখেছিলেন: ‘‘যদি আমি এটার প্রশংসা করি যে, আপনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে জানিয়েছেন যে, আমাকে নিয়ে কোন তদন্ত হচ্ছে না, তাসত্ত্বেও আমি জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে একমত হয়েছি যে, আপনি এফবিআই কার্যকরভাবে পরিচালনায় সক্ষম নন৷’’
ছবি: Reuters/J. Ernst/K. Lamarque
সেপ্টেম্বর ২০১৭: সিনেট কমিটির সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প জুনিয়র
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিকে জানান যে, বিদেশি কোনো সরকারের সঙ্গে কোনো আঁতাত করেননি তিনি৷ কমিটির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২০১৬ সালের জুনে ট্রাম্প জুনিয়র এবং তাঁর ভগ্নিপতি জেরড কুশনার ও ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পাউল মানাফোর্টের সঙ্গে রাশিয়ান আইনজীবী নাটালিয়া ভেসেলনিৎসকায়ার সাক্ষাতের বিষয়ে আলোচনা হয়৷
ফেসবুক, টুইটার এবং গুগল মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়া এ সব প্লাটফর্মের অপব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে৷ কোম্পানি তিনটি নভেম্বরে সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির মুখোমুখি হতে পারে৷