ট্রাম্প-প্রস্তাবিত বিল হাউসে খারিজ, শাটডাউনের মুখে সরকার
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
সরকারি খরচ চালাবার জন্য ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত প্যাকেজ-সহ বিল খারিজ। শাটডাইনের মুখে ফেডারেল সরকার।
বিজ্ঞাপন
সাময়িকভাবে সরকারি খরচ চালাতে এবং সরকারি শাটডাউন এড়াতে এই বিল পাস করার দরকার ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান সংখ্যাধিক্য থাকা সত্ত্বেও মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে তা পাস করানো সম্ভব হলো না। ৩৮ জন রিপাবলিকান সদস্য বিরুদ্ধে ভোট দিলেন। অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট সদস্যও বিরুদ্ধে ভোট দেন। শুক্রবার রাতের মধ্যে নতুন প্রস্তাব পাস না করলে শনিবার থেকে শাটডাউনের মুখে পড়বে সরকার।
এই শাটডাউনের অর্থ, সীমান্ত সুরক্ষা, হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মতো জরুরি বিষয়গুলি চালু থাকবে। কিন্তু অনুমোদিত অর্থ না থাকায় জরুরি নয় এমন সব ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক সরকারি কর্মী বেতন পাবেন না।
আগের পরিকল্পনা খারিজ করেন ট্রাম্প ও মাস্ক
এর আগে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের সম্মতিতে খরচ চলাবার একটি সাময়িক প্যাকেজ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার সহযোগী ইলন মাস্ক গত বুধবার তা খারিজ করে দেন।
ওভাল কার্যালয়ে যিনি বসেন, তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন- সাধারণ মানুষের ধারণা এমনই৷ আসলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত৷ কারণ, সরকারের অন্যান্য বিভাগেরও বলার সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Ken Cedeno/abaca/picture alliance
মার্কিন সংবিধান যা বলছে
একজন প্রেসিডেন্ট চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না৷ তিনি রাষ্ট্র এবং সরকারের প্রধান৷ কেন্দ্রীয় নির্বাহী বিভাগ তার দায়িত্বে থাকে, যার কর্মীসংখ্যা চল্লিশ লাখের বেশি৷ তাদের মধ্যে সেনা সদস্যরাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন৷ কংগ্রেসে অনুমোদিত আইন প্রয়োগ করা তার দায়িত্ব৷
ছবি: bildagentur-online/picture alliance
ভারসাম্য রক্ষা
নির্বাহী, বিচার বিভাগ এবং আইনসভা নামে সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে৷ এরা একে অপরের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে৷ প্রেসিডেন্ট চাইলে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং কেন্দ্রীয় বিচারপতিদের নিয়োগ দিতে পারেন৷ তবে সেগুলো নিশ্চিত করতে সিনেটের অনুমোদন লাগবে৷ সিনেটের অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও নিয়োগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Evelyn Hockstein/File Photo/REUTERS
কংগ্রেসকে জানাতে হয়
দেশ কেমন চলছে তা পর্যায়ক্রমে কংগ্রেস জানানোর দায়িত্ব রয়েছে প্রেসিডেন্টের৷ বাৎসরিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তব্যে এটা করেন তিনি৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
চাইলেই ‘না’ বলতে পারেন না
রাষ্ট্রপতি চাইলে একটি বিল অনুমোদন না করে কংগ্রেসে ফেরত পাঠাতে পারেন৷ কিন্তু কংগ্রেসের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য যদি চান, তাহলে বিলটি প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়াও কার্যকর করতে পারেন৷ এখন অবধি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভেটো দেয়া এক হাজার পাঁচশ ত্রিশটি বিলের মধ্যে মাত্র ১১২টি কার্যকর করেছে সিনেট৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP/Getty Images
ক্ষমতার ধূসর দিক
সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টে সিদ্ধান্তগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি পুরোপুরি বোঝাতে পারে না৷ ‘পকেট ভেটো’ নামের একটি চর্চা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রচলিত আছে, যেটির প্রয়োগ কোনো বিলের ক্ষেত্রে করা হলে কংগ্রেসের কিছু করার থাকে না৷ সহস্রাধিকবার এই পন্থার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা৷
ছবি: Jacquelyn Martin/AP Photo/picture alliance
নির্দেশনা আইন হিসেবে কাজ করে
সরকারি কর্মীদের কোনো কাজ নির্দিষ্ট পরিধি অবধি করার নির্দেশনা দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷ ‘নির্বাহী নির্দেশগুলো’ আইনের মতোই৷ এগুলোর প্রয়োগে অন্য কোনো অনুমতির দরকার হয় না৷ এক্ষেত্রে কংগ্রেস চাইলে পাল্টা আইনের অনুমোদন দিতে পারে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আগের প্রেসিডেন্টের জারি করা নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে পারেন৷
ছবি: Ronen Tivony/ZUMA Press/IMAGO
কংগ্রেসকে পাশ কাটানোর উপায়
প্রেসিডেন্ট চাইলে অন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে৷ কিন্তু সেগুলো সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন পেতে হবে৷ তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে ‘নির্বাহী সমঝোতার’ মাধ্যমে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারেন৷ কংগ্রেস আপত্তি না তোলা অবধি এ ধরনের সমঝোতা কার্যকর থাকে৷
ছবি: Evan Vucci/AP Photo/picture alliance
মার্কিন সেনা কোথায় যাবে নির্ধারণের ক্ষমতা
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট৷ তবে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে৷ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই অবশ্য সশস্ত্র সংঘাতে সামরিক বাহিনীকে যুক্ত করতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: HORST FAAS/AP/picture alliance
চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ
যদি একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অপব্যবহার বা কোনো অপরাধ করেন, তাহলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস তাকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে৷ মার্কিন ইতিহাসে তিনজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমনটা ঘটেছিল৷ তবে তারা কেউই অভিযুক্ত হননি৷ প্রেসিডেন্টের উপর চাপ প্রয়োগে কংগ্রেসের নানাবিধ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। তাদের ২১৯ জন সদস্য আছে, বিরোধী সদস্যদের সংখ্যা ২১১।
চাপ দিয়েছিলেন ট্রাম্প ও মাস্ক?
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা এর আগে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত জাতীয় সরকারের খরচ চালাবার জন্য একটা অন্তর্বর্তী বিল নিয়ে সম্মত হয়েছিলেন।
কিন্তু ট্রাম্পের ধনকুবের সহযোগী ইলন মাস্ক এক্স হ্যান্ডেলে এই বিলের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সেখানে প্রচুর ব্যয়বহুল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পরে ট্রাম্পও ওই বিলের সমালোচনা করেন এবং হুমকি দেন, এই বিল যে সব রিপাবলিকান সদস্য সমর্থন করবেন, তাদের আবার প্রার্থী হওয়া কঠিন হবে। প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট দাবি করেন, বিলে ঋণের সীমা বাড়াতে হবে বা সেই সীমাই রাখা যাবে না।
নতুন প্যাকেজে কী ছিল?
রিপাবলিকানরা তাড়াহুড়ো করে নতুন বিল নিয়ে আসে। সেখানে বলা হয়, তিন মাসের জন্য ফেডারেল সরকারের খরচ চালাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ১০ হাজার কোটি ডলার, কৃষি ও খাদ্যে সাহায্যের জন্য এক হাজার কোটি ডলার রাখা হয়।
কিন্তু এই বিলে ২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণ নেয়ার সীমা তুলে দেয়ার কথা বলা হয়। এর ফলে সরকারের হাজার হাজার কোটি ডলারের ঋণ নেয়ার পথ প্রশস্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এখন বিপুল পরিমাণ ঋণ রয়েছে। এই বিল অনুমোদিত হলে সেই ঋণের পরিমাণ আরো অনেকটা বাড়ার সম্ভাবনা ছিল।।