বিশেষ কৌঁসুলির গ্র্যান্ড জুরি আহ্বানের ঘটনা দায়রা অভিযোগের দিকে প্রথম পদক্ষেপ বলে গণ্য করছে মার্কিন মিডিয়া৷ এর ফলে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচার অভিযানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্ভাব্য যোগসাজস নিয়ে তদন্তের পরিধি আরো বাড়তে পারবে৷
বিজ্ঞাপন
স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মালারের গ্র্যান্ড জুরি আহ্বানের খবরটি দেয় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা৷ গ্র্যান্ড জুরি বিগত কয়েক সপ্তাহে তাদের কাজ শুরু করেছে৷ দু'টি অনামা কিন্তু ওয়াকিবহাল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে পত্রিকাটি৷
এর পর পরই রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানায় যে, ২০১৬ সালের জুন মাসে ট্রাম্পের পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও একজন রুশ আইনজীবীর মধ্যে সাক্ষাতের ব্যাপারে একাধিক সাবপুয়েনা – আদালতে বাধ্যতামূলক ভাবে হাজির হওয়ার নোটিস – জারি করা হয়েছে৷
হোয়াইট হাউস প্রত্যক্ষভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন না করলেও, ট্রাম্পের এক আইনজীবী জন ডাউড মন্তব্য করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট স্বয়ং কোনো ফেডারাল তদন্তের লক্ষ্য বলে ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই৷
৬ মাস গেল, ৪ বছর টিকতে পারবেন তো ট্রাম্প?
ক্ষমতার প্রথম ৬ মাস কাটলো বিতর্ক, কেলেঙ্কারি, অভিযোগ ও সংকটের মধ্যে৷ অবশ্য রিপাবলিকান দলের মধ্যে এখনো তাঁর প্রতি অটুট সমর্থন রয়েছে৷ সব প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে বাকি সাড়ে তিন বছর টিকে থাকতে পারবেন কি ডোনাল্ড ট্রাম্প?
ছবি: picture-alliance/dpa/Consolidated/R. Sachs
নির্বাহী আদেশই পছন্দ
প্রথম ছ’মাসে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলের বিশেষ করে পরিবেশ ও শিল্প সংক্রান্ত ১৪টি নিয়মকানুন বাতিল করে দিয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে সংসদের উভয় কক্ষে রিপাবলিকান দলের নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও তাদের উপর ভরসা না করে নির্বাহী আদেশ জারি করতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Consolidated/R. Sachs
সংসদে ব্যর্থতা
রিপাবলিকান দলের সংসদ সদস্যরা আনুগত্য দেখিয়ে চললেও প্রথম ছ’মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংসদে কোনো উল্লেখযোগ্য আইন পাশ করাতে পারেন নি ট্রাম্প৷ এমনকি দু’বার চেষ্টা চালিয়ে ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল করে স্বাস্থ্য বিমার সংস্কার সংক্রান্ত আইনও অনুমোদন করাতে পারেন নি তিনি৷
ছবি: Getty Images/Chip Somodevilla
উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা
স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে হাত পুড়িয়েও কর ও জনকল্যাণ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে বদ্ধপরিকর ট্রাম্প প্রশাসন৷ প্রথম এক বছরে প্রধান নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করে ভোটারদের বাহবা কুড়াতে চান ট্রাম্প৷ তবে জটিল এই আইন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও ঐকমত্যের অভাব দেখছেন সমালোচকরা৷
ছবি: Getty Images
অবকাঠামোর উন্নয়ন
নির্বাচনি প্রচারের সময় অ্যামেরিকার বিপর্যস্ত অবকাঠামো ঢেলে সাজাতে এক লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ রাস্তাঘাট, সেতু, পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা বা সংস্কারের কাজে সেই অর্থ ব্যয় করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ অথচ ২০১৮ সালের বাজেটে এই খাতে কত বরাদ্দ পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/R.Beck
আবার ভোটের পরীক্ষা
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কংগ্রেসের প্রায় অর্ধেক আসনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ততদিনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করতে না পারলে রিপাবলিকান সংসদ সদস্যদের পক্ষে ভোটারদের মন জয় করা কঠিন হবে৷ সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে না পারলে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে বাকি দু’বছর দেশ শাসন করা কঠিন হয়ে উঠবে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Goldman
ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা?
প্রতীকী প্রতিরোধ হিসেবে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমর্থন পাওয়া কঠিন৷ মারাত্মক কোনো ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যদিও আগেভাগে তার পূর্বাভাষ পাওয়া কঠিন৷
ছবি: Picture alliance/newscom/J. Ruymen/UPI Photo
6 ছবি1 | 6
ট্রাম্পের স্পেশাল কাউন্সেল টাই কব বলেন যে, গ্র্যান্ড জুরির প্যানেল সৃষ্টির ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না, তবে বিশেষ কৌঁসুলির কাজ যাতে শীঘ্র সম্পন্ন হতে পারে, হোয়াইট হাউস তেমন সব পদক্ষেপের সপক্ষে৷
গ্র্যান্ড জুরি নিয়োগের তাৎপর্য
গ্র্যান্ড জুরি ব্যবহার করার ফলে বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মালার সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুসন্ধান করার বাড়তি ক্ষমতা পাবেন এবং মামলার সঙ্গে যুক্ত সাক্ষী ও ব্যক্তিবর্গের নামে সাবপুয়েনা – অর্থাৎ হাজিরার নির্দেশ – জারি করতে পারবেন৷ এছাড়া তিনি সাক্ষীদের শপথ নিয়ে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করতে পারবেন৷
জুরির সদস্যরা সাধারণ নাগরিক ও এই জুরি লোকচক্ষুর আড়ালে কাজ করে৷ জুরির কাজ হলো, তদন্তকারীদের পেশ করা সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া, ঘটনাটি দায়রা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে কিনা এবং কী ধরনের অভিযোগ আনা হবে৷
কাজেই একটি গ্র্যান্ড জুরি গঠনের অর্থ এ-ও হতে পারে যে, মালারের তদন্ত ট্রাম্পের নিবাচনি প্রচার অভিযানের এক বা একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে দায়রা অভিযোগ আনার কথা চিন্তা করছে৷
মালার কি ট্রাম্পের রোষ থেকে বাঁচবেন?
পালটা পদক্ষেপ হিসেবে প্রেসিডেন্ট মালারকে বরখাস্ত করতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকে মার্কিন সেনেটররা বৃহস্পতিবার দু'টি বাইপার্টিজান – অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান, উভয় দলের সমর্থিত বিল আনেন, যার উদ্দেশ্য হলো মালারের অবস্থানকে সুরক্ষিত করা৷ ট্রাম্প সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে গত মে মাসে বরখাস্ত করেছিলেন৷
‘বিদায় হোন’ – ট্রাম্প প্রশাসনে উইকেট পতন
ট্রাম্প প্রশাসনে যত দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ছে, ততটা আর কখনো কোথাও হয়নি৷ চলুন দেখা যাক, এ যাবৎ কার কার বিদায় ঘণ্টা বেজেছে৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
রেক্স টিলারসন
১৩ই মার্চ, ২০১৮৷ টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল৷ টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
অ্যান্টনি স্কারামুচি
‘দ্য মুচ’ বলে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সি সাবেক এই পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী ট্রাম্প প্রশাসনে টিকতে পেরেছেন মাত্র দশদিন৷ ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ তাঁর যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘদিন এই পদটি খালি ছিল৷ চিফ অফ স্টাফ পদে সাবেক মেরিন প্রধান জেনারেল জন কেলির যোগ দেয়ার দিনেই বিদায় হন অ্যান্টনি৷ প্রশাসনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি হারান তিনি৷
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল এই জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.S. Applewhite
রিন্স প্রাইবাস
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি
হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমত করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. S. Applewhite
মাইকেল ফ্লিন
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷
ছবি: Reuters/C. Barria
9 ছবি1 | 9
উভয় দলের সেনেটররা বলেন যে, বিলগুলি হোয়াইট হাউসকে স্পষ্ট বার্তা দেবে যে, সেনেটররা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার নাক গলানোর ব্যাপারে মালারের তদন্তকে বানচাল করার কোনো ধরনের প্রচেষ্টা সহ্য করবেন না৷
এই পদক্ষেপের তাৎপর্য মালারের সুরক্ষায় সীমিত নয়, বরং তার চেয়ে অনেক সুদূরপ্রসারী, বলে রিপোর্টারদের কাছে মন্তব্য করেছেন নর্থ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান সেনেটর থর্ন টিলিস৷ তাঁর মতে, এ থেকে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা পুনঃ-প্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু হবে৷ ইতিপূর্বে আইনমন্ত্রী জেফ সেসনস যখন সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাতকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে রাশিয়া তদন্ত থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন, ট্রাম্প তখন তাঁকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছিলেন: সে সময় রিপাবলিকান দলের যে সব বিধায়ক সেসনস-এর পক্ষ সমর্থন করেন, তাদের প্রথম সারিতে ছিলেন থর্ন টিলিস৷
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার হান্টিংডনে সংঘটিত একটি সমাবেশে ট্রাম্প মালারের গ্র্যান্ড জুরি নিয়োগের ব্যপারে প্রত্যক্ষভাবে কিছু না বললেও, মার্কিন ডেমোক্র্যাটরা রাশিয়া তদন্তে যেভাবে উসকানি দিয়েছেন, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ ট্রাম্প রাশিয়া সংক্রান্ত অভিযোগগুলিকে ‘‘নিছক মনগড়া’’ ও স্রেফ ‘‘মার্কিন ইতিহাসে বৃহত্তম (নির্বাচনি) পরাজয়ের কৈফিয়ৎ’’ বলে অভিহিত করেন৷
পরিবর্তে ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনি প্রচার অভিযানের ভঙ্গিমায় কৌঁসুলিদের হিলারি ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে তাঁর ‘‘ক্রীত রাশিয়া ভাষণগুলির’’ জন্য তদন্ত করার আহ্বান জানান – ও ট্রাম্পের সমর্থকরা গতবছরের মতোই ‘লক হার আপ’ ধ্বনি দেয়৷