২০ জানুয়ারির আগে দেশ জুড়ে ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভ শুরু হলো। অস্ত্র নিয়েও বিক্ষোভ দেখালেন কেউ কেউ।
বিজ্ঞাপন
দুই দিন বাদেই ওয়াশিংটনে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। তার আগে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করলেন ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। রোববার অ্যামেরিকার বেশ কিছু রাজ্যে তাঁরা প্রতিবাদ দেখিয়েছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, রোববারে সকলেই মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন। কোথাও কোনো অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। তবে কোনো কোনো অঞ্চলে প্রতিবাদীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সমর্থকদেরও রাস্তায় দেখা গিয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
বাস্তেই থেকে ক্যাপিটল: সরকারি ভবনে হামলার কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা
৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে হামলার ঘটনায় হতবাক বিশ্ব৷ কিন্তু এটাই প্রথম নয়৷ ইতিহাসে এমন আরও কয়েকটি ঘটনার কথা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: akg-images/picture alliance
১৭৮৯: ফরাসি বিপ্লব
১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসের বাস্তেই দুর্গ পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়৷ এই দুর্গে স্বাধীনতাকামী রাজনীতিবিদদের বন্দি করে নির্যাতন করা হত৷ বিক্ষুব্ধ মানুষ ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করতে দুর্গে চড়াও হয়৷ নিহত হয় দুই শতাধিক৷ ফ্রান্সে বর্তমানে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় ১৪ জুলাই৷
ছবি: akg-images/picture alliance
১৯১৭: অক্টোবর বিপ্লব
রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লব শুরু হয় যখন বলশেভিকরা উইন্টার প্যালেসে হামলা চালায়৷ প্রাদেশিক সরকারের অফিস ছিলো এটি৷ ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার জারের পতন ঘটে৷ ‘রেড অক্টোবরে’ বলশেভিকরা রাজধানী সেন্ট পিটার্সব্যর্গ থেকে সরকার উৎখাতে সফল হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg
১৯৫৮: ইরাকে সামরিক অভ্যুত্থান
সে বছরের জুলাইয়ে বাগদাদে বাদশাহ ফয়সালের প্রাসাদে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা৷ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় রাজতন্ত্রের৷ বাদশাহ ফয়সাল এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
১৯৭৩: চিলির সামরিক অভ্যুত্থান
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালভাতরে আলেন্দে তিন বছর ক্ষমতায় থাকার পর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী৷ ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবন দখল করে নেয় সামরিকবাহিনীর সদস্যরা৷ আলেন্দে আত্মহত্যা করেন এবং চিলিতে আগুস্তো পিনোশের নৃশংস সামরিক স্বৈরাচারী শাসন শুরু হয়৷
ছবি: OFF/AFP/Getty Images
১৯৮১: স্পেনে অভ্যুত্থানের চেষ্টা
ঐ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি লেফটেনেন্ট গভর্নর আন্তোনিও তেজেরো মলিনা ২০০ পুলিশ ও সেনা নিয়ে স্পেনের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পার্লামেন্ট সদস্যদের ১৮ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে৷ রাজা খুয়ান কার্লোসের মধ্যস্থতায় ফ্রাঙ্কো শাসনামলের শেষে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ হয় দেশটির৷ অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয় এবং মলিনাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
১৯৩৩: জার্মান পার্লামেন্ট
সে বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই ঘটনা ঘটে৷ চ্যান্সেলর হিসেবে হিটলারের শপথ নেয়ার চার সপ্তাহ পর এক বিদ্রোহী জার্মান পার্লামেন্ট ভবনের নীচতলায় আগুন দেয়৷ গত বছরের আগস্টে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কড়াকড়ি উঠিয়ে নেয়ার দাবিতে ভবনে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছিল বিক্ষোভকারীরা৷ এদের বেশিরভাগই ছিলো কট্টর ডানপন্থি দলের সমর্থক৷
ছবি: Reuters/C. Mang
২০২১: ক্যাপিটল ভবন
২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ৬ জানুয়ারি কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক কংগ্রেস ভবনের সামনে জড়ো হয়৷ এক পর্যায়ে ভবনে হামলা চালায় সহিংস বিক্ষোভকারীরা৷ নিহত হয় চারজন৷
ছবি: Shannon Stapleton/REUTERS
7 ছবি1 | 7
মার্কিন ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড আগে থেকেই ৫০টি রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। গত সপ্তাহে এফবিআই যে রিপোর্ট দিয়েছিল প্রশাসনকে, তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। শুধু তাই নয়, ক্যাপিটলের মতো ফের বড়সড় কাণ্ড ঘটাতে পারেন তাঁরা। উল্লেখ্য, গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলা চালিয়েছিল ট্রাম্প সমর্থকরা। চারজনের মৃত্যুও হয়েছিল। ওই দিনের ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। তারপরেই দেশ জুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীতে এবং ওয়াশিংটনে তাঁরা পাহারার দায়িত্ব নিয়েছেন। বেশ কিছু এলাকায় তাঁরা ফ্ল্যাগ মার্চ করেছেন।
ট্রাম্প সমর্থকদের এখনো দাবি, নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছেন। কারচুপি করে তাঁকে হারানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গোটা দেশের একাধিক আদালতে মামলা হয়েছিল। কিন্তু কোথাও কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেননি ট্রাম্প সমর্থকরা। তা সত্ত্বেও তাঁরা প্রতিবাদ বজায় রেখেছেন। রোববার ওহিয়ো, সাউথ ক্যারোলিনা, টেক্সাস এবং মিশিগানে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভকারীদের হাতে অস্ত্র ছিল। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, চরমপন্থি গোষ্ঠী বুগালুর সদস্যদের কোনো কোনো মিছিলে দেখতে পাওয়া গিয়েছে। তাদের হাতে অটোমেটিক রাইফেল ছিল। এই গোষ্ঠী অ্যামেরিকার আরো একটি গৃহযুদ্ধ ঘটিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে চায়।
রোববার থেকেই বিভিন্ন রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড ধরপাকড়ও শুরু করেছে। বেশ কিছু চরমপন্থি গোষ্ঠীর সদস্যদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। বাইরে বেরলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে। বেশ কয়েকটি রাজ্যে চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলি বিক্ষোভ কর্মসূচি বাতিল করেছে বলেও গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
অন্য দিকে ওয়াশিংটনকে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা না হয়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।