অ্যামেরিকায় বর্ণবাদ বিরোধী প্রতিবাদে নতুন মোড়। পোর্টল্যান্ডে ট্রাম্পপন্থী ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ। মৃত এক।
বিজ্ঞাপন
জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পরই বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছিল পোর্টল্যান্ডে। জেকব ব্লেককে বর্ণবাদী পুলিশের সাতটি গুলির পর বিক্ষোভ বাড়ে। শনিবার সেখানে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স আওয়াজ তুলে বিক্ষোভ হচ্ছিল। তখন শুরু হয় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পপন্থীদের পাল্টা বিক্ষোভ। দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কয়েক হাজার ট্রাম্পপন্থী বিক্ষোভ দেখিয়ে চলে যাওয়ার পরে দেখা যায়, এক জনের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ এর বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি। তারা বলেছে, ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী থাকলে তাঁরা যেন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, তদন্ত প্রাথমিক স্তরে আছে। তাই তদন্তকারীদের সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। তবে ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তি অতি দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী প্যাট্রিয়ট প্রেয়ার-এর টুপি পরে ছিলেন। সম্প্রতি ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স-দের সঙ্গে পোর্টল্যান্ডে বেশ কয়েকবার ঝামেলায় জড়িয়েছে।
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এর অজানা কিছু কথা
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট দিনটি অ্যামেরিকার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে৷ সেদিন ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, যিনি অ্যামেরিকায় আফ্রিকান-অ্যামেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা৷
ছবি: AP
লক্ষ্য বর্ণবাদের অবসান
এই সেই বিখ্যাত ছবি৷ ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে প্রায় আড়াই লক্ষ সমর্থকের উদ্দেশ্যে ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবাদ দূর করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তারই অংশ হিসেবে ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট আয়োজিত ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ ছবিতে সামনের সারিতে বাম থেকে দ্বিতীয়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
যেভাবে আন্দোলনের শুরু
ছবির এই নারীর নাম রোজা পার্কস৷ বাস চালকের নির্দেশের পরও বাসের পেছনে বসতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তার প্রতিবাদেই শুরু হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলন - যাঁর অন্যতম নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ মার্কিন কংগ্রেস পরবর্তীতে রোজা পার্কসকে ‘দ্য ফার্স্ট মিনিস্টার অফ সিভিল রাইটস’ উপাধি দিয়েছিল৷
ছবি: AP
বাস বয়কটের দায়ে অভিযুক্ত
রোজা পার্কসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাস বয়কট আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৬ সালের ২২ মার্চ তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিংকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কোরেটা স্কট কিং৷ এটা আদালত ছাড়ার সময়কার ছবি৷ মন্টগোমারি শহরের বাসে চালু থাকা নিয়ম ভঙ্গের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল লুথার কিং এর বিরুদ্ধে৷ তবে তাঁর আপিলের পর বিচারক ৫০০ ডলারের জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকার
১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চের এই ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্যদের৷
ছবি: William Lovelace/Express/Getty Images
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবি নিয়ে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
জন্ম
১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জর্জিয়ার অ্যাটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৫ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি৷ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৫৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ৷ ছবিটি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের৷
ছবি: picture-alliance/akg
জার্মান মার্টিন লুথার
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর নাম কিন্তু শুরুতে ছিল মাইকেল কিং৷ পরবর্তীতে তাঁর বাবা ষোড়শ শতকে যে জার্মান ক্যাথলিক যাজক প্রোটেস্টান্ট গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন, সেই মার্টিন লুথারের নামে তাঁর ছেলে ও নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মার্টিন লুথার কিং৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
মৃত্যু
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তাঁকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জেমস আর্ল রে’কে (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রে একবার জেল থেকে পালিয়ে যাবার পর এফবিআই তাঁকে ধরতে এই পোস্টারটি ছাপিয়েছিল৷ তিনটি ছবিই রে’র৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
9 ছবি1 | 9
ট্রাম্প-বাইডেন তরজা
এই ঘটনার পরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থী ডনান্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন-এর মধ্যে কথার লড়াই শুরু হয়ে গেছে। একগুচ্ছ টুইট করে ট্রাম্প বলেছেন, 'পোর্টল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট মেয়র প্রশাসক হিসেবে ব্যর্থ। তিনি থাকলে পোর্টল্যান্ড আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। মেয়র তো নিজের বেসমেন্টে গিয়ে বসে আছেন। নেতৃত্ব দেয়া দূরে থাক, তিনি একটা কথাও বলতে পারছেন না।'
আর বাইডেন বিবৃতিতে বলেছেন, আইন ও শৃঙ্খলারক্ষার কথা বলে ট্রাম্প দেখাতে চান, তিনি খুব শক্তিশালী নেতা।
কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থকরা ঝামেলা চাইছিল। তিনি তো তাঁদের কিছুই বললেন না। এটাই দেখিয়ে দিচ্ছে তিনি কতটা দুর্বল। ট্রাম্পের প্রচারে এ বার খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি।
বিক্ষোভের পর গুলি
পুলিশ বলছে, শনিবারের গুলিচালনার ঘটনা ঘটেছে ট্রাম্পের সমর্থকদের চলে যাওয়ার পর। প্রায় ছয়শ গাড়ি নিয়ে ট্রাম্পের সমর্থকরা এসেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা চলে যাওয়ার পর গুলি চলে। মৃত ব্যক্তির বুকে গুলি লাগে।
ট্রাম্পের প্রায় দুই হাজার ৫০০ জন সমর্থক এসেছিলেন বিক্ষোভ দেখাতে। তাঁদের সঙ্গে বামপন্থী গোষ্ঠীগুলির সংঘর্ষ হয়। বর্ণবাদ ও পুলিশি অত্যাচার নিয়ে পোর্টল্যান্ডে বহুদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। ফ্লয়েডের হত্যার পর বিক্ষোভ শুরু। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
সম্প্রতি কেনোশায় বিক্ষোভে গুলি চলেছিল। তাতে দুইজন মারা গেছেন। এ বার চলল পোর্টল্যান্ডে। ফলে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।