মঙ্গলবারের ঐতিহাসিক বৈঠকের আগে দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তার চরম কড়াকড়ি চলছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও উত্তর কোরীয় নেতার বৈঠক উপলক্ষে দেশটির কিছু অংশ বলতে গেলে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বাসায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান ব্রডকাস্টিং সিস্টেম- কেবিএসের দুই সাংবাদিককে বহিষ্কার করেছে সিঙ্গাপুর৷ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ৷
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩০০০ সাংবাদিক মঙ্গলবারের বৈঠকের তথ্য সংগ্রহ করতে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন৷
‘‘এই দুই সাংবাদিকের সিঙ্গাপুরে অবস্থানের অনুমতিপত্র বাতিল করা হয়েছে৷ জুনের ৯ তারিখে তাদের দক্ষিণ কোরিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে'', এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে সিঙ্গাপুর পুলিশ৷
ঘটনার পর সাংবাদিকদের আবারও সতর্ক করে দিয়েছে সিঙ্গাপুর পুলিশ৷ আইন ভঙ্গ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে অনুমতিপত্র বাতিলের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বৈঠকের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ছাড়া, অন্যদের সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না৷ একজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনে ‘আত্মঘাতী বোমা' সার্চ করায় তাকেও সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করতে না দেয়ার কথা জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ট্রাম্প-কিম বৈঠক সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে ১২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইউরো অর্থাৎ প্রায় ১২৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে৷ এর বড় অংশই নিরাপত্তার পেছনে খরচ হচ্ছে বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং৷
ট্রাম্প-কিমের নিরাপত্তায় নেপালি পুলিশ কর্মকর্তা!
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে বহুল আলোচিত বৈঠক হবে৷ এতে নিরাপত্তায় থাকবেন নেপালি পুলিশ কর্মকর্তারা, যাঁরা গোর্খা বলে পরিচিত৷
ছবি: Reuters/E. Su
গোর্খা কন্টিনজেন্ট
সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অংশের নাম গোর্খা কন্টিনজেন্ট৷ নেপালের পাহাড়ি শহর গোর্খা থেকে আসা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত এই বাহিনী৷ এটি এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত৷ গোর্খা কন্টিনজেন্টের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১,৮০০৷ ১৯৪৯ সাল থেকে গোর্খারা সিঙ্গাপুর পুলিশের অংশ৷
ছবি: Reuters/E. Su
‘কষ্টসহিষ্ণু, সতর্ক, একনিষ্ঠ’
সিঙ্গাপুর পুলিশের ওয়েবসাইটে গোর্খাদের সম্পর্কে এই বিশেষণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে৷ গোর্খাদের এসব গুণের কারণে শুধু সিঙ্গাপুর নয়, ভারত, ব্রিটেন, নেপাল ও ব্রুনেই-র নিরাপত্তা বাহিনীতেও তাঁরা কাজ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karumba
হার থেকে শিক্ষা
উনিশ শতকে নেপাল দখল করতে গিয়েছিল ব্রিটিশরা৷ কিন্তু হেরে ফিরতে হয়েছে৷ সেই সময় ব্রিটিশরা গোর্খাদের শক্তিমত্তার পরিচয় পায়৷ ফলে তখন থেকে ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত গোর্খাদের নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে৷ বর্তমানে প্রতি বছর ২৬০ জন করে গোর্খা ব্রিটিশ বাহিনীতে নিয়োগ পাচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karumba
ট্রাম্প-কিম বৈঠক
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে বহুল আলোচিত বৈঠক হবে৷ প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন৷ এদের মধ্যে গোর্খারাও আছেন৷
ছবি: Reuters/E. Su
কুকরি
বাঁকানো এক চাকু দেখতে পাচ্ছেন? এর নাম ‘কুকরি’৷ গোর্খাদের ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র এটি৷ আজকের যুগে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা গোর্খাদের কাছে আধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে এখনও কুকরি থাকে৷ কুকরি ব্যবহারের প্রথা বলছে, কুকরি বের করলে অবশ্যই তাকে ‘রক্তের স্বাদ’ দিতে হবে! ‘গোর্খাস অস্ট্রেলিয়া’ ওয়েবসাইট বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই এই রীতি আর নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Kalnina
বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ
দুই বিশ্বযুদ্ধে প্রায় দুই লক্ষ গোর্খা অংশ নিয়েছেন৷ এছাড়া ফকল্যান্ড যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ, বসনিয়া, কসোভো ও আফগানিস্তানে গোর্খারা যুদ্ধ করেছে৷
ছবি: Ministry of Defence, India
দারিদ্র থেকে মুক্তি
বিদেশি বাহিনীতে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন অনেক গোর্খা৷ এর মাধ্যমে তাঁরা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে চান৷ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে প্রতিবছর যে ২৬০ জনকে নেয়া হয়, তার জন্য গড়ে প্রায় ১০ হাজার জন আবেদন করে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিয়োগ প্রক্রিয়া
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক গোর্খাদের যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তার একটি হচ্ছে ২৫ কেজি ওজনের বালুর বস্তা নিয়ে খাড়া হয়ে উঠে যাওয়া ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ দৌড়ানো৷