যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ ট্রাসের শুরু হয়েছে অত্যন্ত খারাপ ভাবে৷ তার প্রধান নীতিগুলো অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে৷ মেয়াদের শুরুতেই তার অবস্থান নিয়ে দেখা দিয়েছে সন্দেহ৷
বিজ্ঞাপন
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকরা গত কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাজ্যে চলমান বিশৃঙ্খল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন৷ তবে নতুন করে সৃষ্ট সংকট হয়ত সব কিছুকে ছাড়িয়ে যাবে৷
লিজ ট্রাসের নতুন সরকার গত মাসের ২৩ তারিখে সংক্ষিপ্ত বাজেট ঘোষণা করে৷ দেশকে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে টেনে তোলার জন্য এটা ছিল তার সরকারের অন্যতম পদক্ষেপ, যেখানে নতুন অর্থমন্ত্রী কাওয়াসি কোয়ারতেং ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কর ছাড়ের ঘোষণা দেন৷ কাওয়াসি মোট ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ড কর ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেন৷
এই কর ছাড় ধনীদের বিভিন্নভাবে উপকৃত করবে বলে অভিযোগ ওঠে৷
সংক্ষিপ্ত এই বাজেটের অন্যতম বিতর্কিত দিক হল যুক্তরাজ্যের যেসব মানুষের বার্ষিক আয় এক লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডের ওপরে তাদের আয়কর হ্রাস করা এবং ব্যাংকারদের বোনাসের উপর থেকে ক্যাপ তুলে নেয়া৷
তবে যে বিষয়টি বেশি বিতর্কিত মনে করা হচ্ছে তা হলো এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারকে নতুন করে ঋণ নিতে হবে৷ ফলে সরকারের ঋণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা আর্থিক খাতের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে৷
এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্য রেকর্ড হারে হ্রাস পায়৷
ট্রাসের সরকারের এসব নীতি যুক্তরাজ্যেকে বড় কোন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য ফেলে দিতে পারে এমন শংকায় এরইমধ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়েছে৷ ঘোষণা দিয়েছে ৬৫ বিলিয়ন বন্ড কেনার কর্মসূচি৷
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নতুন সরকারের এই নীতির সমালোচনা করে৷ তাদের মতে, বড় একটি অর্থনীতির জন্যে পদক্ষেপগুলো অস্বাভাবিক৷ এসব নীতির ফলে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বৈষম্যও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশংকা সংস্থাটির৷
নতুন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা করতে দেরি করেনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা৷ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও বিরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷
এমন পরিস্থিতিতে লিজ ট্রাস ও কাওয়াসি কোয়ারতেং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ধনীদের করহার ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে তারা আর নাও আগাতে পারেন৷
লিজ ট্রাস : ছয় বছরে ব্রিটেনের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী
ছয় বছরে মেয়াদ শেষ হবার আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন তিনজন ৷ ব্রিটেনের ৫৬তম প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস কি পারবেন মেয়াদ শেষ করতে? যেভাবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাতে এ আশা করা যেতেই পারে৷ ছবিঘরে লিজ ট্রাসের বিস্ময়কর উত্থানের গল্প...
ছবি: Dylan Martinez/REUTERS
প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে যেখানে আলাদা
বেলফাস্টের দেয়ালে ব্রিটেনের ইতিহাসের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাকের ম্যুরাল৷ শিল্পী চিয়ারান গ্যালাঘারের আঁকা ছবিতে দুজনকে দেখা যাচ্ছে বক্সারের রূপে৷ঋষি কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করলেও ট্রাস এক সময় ছিলেন লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলে৷ ২০১০ সালে কনজারভেটিভদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ট্রাস ১২ বছরের মধ্যেই হয়ে গেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: Clodagh Kilcoyne/REUTERS
মিডিয়ার মুখোমুখি
নির্বাচনি প্রচারের বিভিন্ন পর্যায়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন দুজনই৷ ওপরের ছবিতে বিবিসির মুখোমুখি লিজ ট্রাস৷ ছবিটি গত ৪ সেপ্টেম্বরের৷
ছবি: Jeff Overs/BBC/REUTERS
গাড়ি কারখানায় প্রচার
কনজারভেটিভ দলের প্রায় দুই লাখ সদস্যের কাছে ভোট চাইতে বিভিন্ন অফিস-আদালতেও ঢুঁ মেরেছেন লিজ ট্রাস এবং ঋষি সুনাক৷ ছবিতে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কারখানায় ভোটের প্রচারে ৪৭ বছর বয়সি ট্রাস৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
পুল খেলোয়াড় ট্রাস
গত ৮ আগস্ট ভোটের প্রচারে লন্ডনের অনসাইড ফিউচার ইয়োথ জোনে গিয়েছিলেন ট্রাস৷ পুল টেবিলটা দেখে একটু খেলে নেয়ার লোভ সামলাতে পারেননি৷
ছবি: Dylan Martinez/REUTERS
বিজয়ী ট্রাস
ডেভিড ক্যামেরনকে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়তে হয় ২০১৬ সালে৷ তারপর টেরেসা মে, বরিস জনসনকেও সরতে হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগে৷ ৫ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে প্রায় ২০ হাজার ভোটে হারিয়ে মার্গারেট থ্যাচার এবং টেরেসা মে -র পর তৃতীয় নারী হিসেবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হন লিজ ট্রাস৷ ছবিতে ভোটের ফল ঘোষণার পর মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ট্রাস আর হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ঋষি সুনাক৷
ছবি: Stefan Rousseau/REUTERS
বরিসের বিদায়
নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের জন্য ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট ছেড়ে যাচ্ছেন বরিস জনসন৷ উপস্থিত সবাই হাসিমুখে, হাত তালি দিয়ে বিদায় জানাচ্ছেন তাকে৷ জনসনের স্ত্রী ক্যারিও আছেন তাদের কাতারে৷
ছবি: Kevin Coombs/REUTERS
রানির অভ্যর্থনা
নিয়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরের দিন, অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর রানি এলিজাবেথের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন বরিস জনসন৷ তারপর রানির কাছে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করার প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সারেন ট্রাস৷
ছবি: Jane Barlow/REUTERS
স্বামীর সঙ্গে...
গত ৫ সেপ্টেম্বরের ছবি৷ কুইন এলিজাবেথ সেন্টারে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে লিজ ট্রাসকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে একটু আগে৷ জানা হয়ে গেছে ট্রাসই হচ্ছেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী৷ সেই আনন্দে স্ত্রীর পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন হিউ ও’লেয়ারি৷
ছবি: Stefan Rousseau/REUTERS
8 ছবি1 | 8
অক্সফোর্ডের অর্থনীতিবিদ আন্দ্রে গুডউনের মতে, এমন সময়ে ধনীদের জন্য কর কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে যখন গরীবরা উচ্চ মূল্যস্ফীতির সাথে লড়াই করছে৷ সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন করলেও আর্থিক খাতের কোন পরিবর্তন ঘটবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না৷ নিছক রাজনৈতিক সমস্যার প্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
কর ছাড় নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিতের পর ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ অন্যদিকে জাতীয় বীমার বাজারও অনেকটা পুনরুদ্ধার হয়েছে৷
তবে আর্থিক পদক্ষেপগুলোর প্রেক্ষিতে ট্রাস সরকারের উপর মানুষের আস্থা এরইমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷