ট্রুডোর সাথে সম্পর্ক ছেদ এনপিডির, ক্যানাডায় আগাম নির্বাচন?
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ‘নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি' বা এনডিপির সমর্থন হারানোয় দেশটিতে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ দলটির নেতারা বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
ট্রুডোর মধ্যবামপন্থি উদার সরকার থেকে বুধবার সমর্থন প্রত্যাহারের পর দলটির নেতা জগমিত সিং এই বিষয়ে মুখ খোলেন৷ প্রধানমন্ত্রীকে তার কার্যালয় ধরে রাখতে হলে নতুন কোনো জোট গড়তে হবে৷ দেশটিতে ২০২৫ সালের অক্টোবরে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷
জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে দেশটির আনুষ্ঠানিক বিরোধীদল মধ্য-ডানপন্থি রক্ষণশীলরা বিপুল ভোটে জিততে পারেন, কারণ, ট্রুডোর প্রতি ভোটারদের হতাশা বাড়ছে৷ ২০১৫ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন৷ কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং গৃহসংকট তার জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিয়েছে৷
ট্রুডোর ঘনিষ্ট সহযোগী জেরোমি ব্রডহার্স্টও বৃহস্পতিবার উদারপন্থিদের নির্বাচনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন৷ এক্সে দেয়া এক বার্তায় তিনি পরিবারের সঙ্গে আরো সময় কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু টরন্টো স্টার উদারপন্থিদের এক সূত্রের বরাতে লিখেছে যে, ব্রডহার্স্ট মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে ট্রুডোর জয়ের সম্ভাবনা নেই৷
জাস্টিন ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবন
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০১৩ সালে দলের নেতা নির্বাচিত হন৷ দুবছর পর তার দল সরকার গঠনে সমর্থ হয়৷ বর্তমানে ট্রুডোর দলের প্রতি সমর্থন অনেক কমে গেছে৷ ছবিঘরে ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা থাকছে৷
ছবি: Sean Kilpatrick/The Canadian Press/AP/picture alliance
অক্টোবর, ২০১৩
লিবারেল দলের নেতা নির্বাচিত হন৷ সেই সময় দলটি জনপ্রিয়তার বিচারে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল৷ কারণ, দুই বছর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে লিবারেলরা প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে নেমে গিয়েছিল৷ লিবারেল দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর ছেলে জাস্টিন ট্রুডো৷
ছবি: picture alliance/empics/A. Vaughan
অক্টোবর, ২০১৫
দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ট্রুডোর দল সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়৷ প্রথমবারের মতো হাউস অফ কমন্সে তিন নম্বরে থাকা একটি দল নির্বাচনে জয়ী হয়৷
ছবি: Reuters/C. Wattie
ডিসেম্বর ২০১৭
২০১৬ সালে আগা খানের কাছ থেকে ভ্রমণ, উপহার ও ফ্লাইট সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে ট্রুডো স্বার্থের দ্বন্দ্ব আইন ভঙ্গ করেছেন বলে রায় দিয়েছিল ক্যানাডার এথিকস কমিশনার৷ কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন রায় ওটাই প্রথম ছিল৷
ছবি: Reuters/C. Wattie
ফেব্রুয়ারি ২০১৯
সাবেক বিচারমন্ত্রী জোডি উইলসন-রেবোল্ড (ছবি) অভিযোগ করেন, এসএনসি-লাভালিন কোম্পানির বিরুদ্ধে যেন দুর্নীতির অভিযোগে বিচার করা না হয় সেজন্য তাকে চাপ দিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা৷ এই ঘটনায় পদত্যাগ করেছিলেন তিনি৷ পাবলিক ওয়ার্কস মন্ত্রী জেন ফিলপটও ট্রুডোর প্রতি আস্থা হারানোর অভিযোগে পদত্যাগ করেন৷ ট্রুডো সবসময় নিজেকে ফেমিনিস্ট হিসেবে উপস্থাপন করেন৷ তাই তাদের পদত্যাগ ট্রুডোর জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর ছিল৷
ছবি: picture-alliance/H. Ruckemann
সেপ্টেম্বর, ২০১৯
ট্রুডো যখন তরুণ ছিলেন তখন কৃষ্ণাঙ্গর রূপ ধারণ করতে মুখে কালো রং লাগিয়েছিলেন৷ ২০১৯ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের আগে এমন কিছু ছবি প্রকাশ হয়ে গেলে বিতর্ক শুরু হয়৷ ট্রুডো ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, তিনি একজন সব সুবিধা পাওয়া ছেলে হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন এবং সে কারণে একটি ‘কালো দাগ’ ছিল৷
ছবি: Reuters/CBC
অক্টোবর, ২০১৯
নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও মেজরিটি সরকার গঠনের মতো আসন পায়নি ট্রুডোর দল৷ সে কারণে তাকে জোট সরকার গঠন করতে হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
আগস্ট, ২০২০
করোনা মহামারি থেকে ক্যানাডারে উদ্ধার করতে কত অর্থ প্রয়োজন তা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পদত্যাগ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী বিল মরনৌ (ছবি)৷
ছবি: picture-alliance/J. Tang
সেপ্টেম্বর, ২০২১
ক্যানাডায় প্রতি চার বছর পর পর নির্বাচন হওয়ার কথা৷ তবে ট্রুডো ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ তার আশা ছিল, করোনা মোকাবিলায় সরকার ভালো করায় নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি মেজরিটি সরকার গঠন করতে পারবেন৷ কিন্তু তা হয়নি৷
ছবি: Carlos Osorio/REUTERS
সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ট্রুডোর দলের জনপ্রিয়তা অনেক কমছে৷ সবশেষ জরিপ বলছে, এখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি মাত্র ২১ শতাংশ ভোট পাবে৷ বর্তমানের বিরোধী দল কনজারভেটিভরা পাবে ৪৩ শতাংশ ভোট৷ আর নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি এনডিপি পাবে ১৯ শতাংশ৷ এই অবস্থায় বুধবার সরকারের উপর থেকে স্বয়ংক্রিয় সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে এনডিপি৷ তাই ট্রুডোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷
ছবি: Sean Kilpatrick/The Canadian Press/AP/picture alliance
9 ছবি1 | 9
সিং জানিয়েছেন যে, এনডিপি ২০২২ সাল থেকে ট্রুডোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমর্থন দিয়ে যাওয়া থেকে সরে এসেছে, কেননা, দলটি সামাজিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি সংক্রান্ত যে প্রত্যাশা নিয়ে তাকে সমর্থন জানিয়েছিল, তার অনেকটাই পূরণ হয়ে গেছে৷
ভবিষ্যতে তিনি ট্রুডোর বিপরীতে রাজনীতিতে লড়বেন কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি জগমিত সিং৷ তবে বলেছেন যে, তার দল এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ হাউস অব কমন্সের নির্বাচিত নিম্নকক্ষে এনডিপি চতুর্থ বৃহত্তম দল৷
জগমিত সিংয়ের জন্য আগামী মাসগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি যদি আস্থা ভোটে ট্রুডোকে আবার সমর্থন দেন বা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন তাহলে তা তার দলের দুর্বলতা হিসেবে বিবেচিত হবে৷ আবার তিনি যদি ট্রুডোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তার বিরুদ্ধে ভোট দেন তাহলে আগাম নির্বাচনেও তার দল সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না৷ কারণ দলটির প্রতি বর্তমানে জনসমর্থন বেশ কম৷