বিলম্ব হলে ক্ষতিপূরণ
১০ জানুয়ারি ২০১৪সম্প্রতি ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস এমন একটি রায় দিয়েছে, যার ফলে জার্মান রেলওয়েকে একটু নড়েচড়ে বসতে হচ্ছে৷ এতে বলা হয়েছে বড় রকমের বিলম্ব ঘটলে ট্রেনের যাত্রীরা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন৷ এমনকি রেল কর্তৃপক্ষ এ জন্য দায়ী না হলেও৷
এর আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দৈব দুর্বিপাকের কারণে ট্রেনের বিলম্ব ঘটলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের দাবি প্রত্যাখ্যান করতো৷ বলা হতো, এ কারণে তারা দায়ী নন৷ যেমন প্রচণ্ড ঝড়, তুষারপাত, বন্যা কিংবা ধর্মঘট বা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে এসবের দায়িত্ব নিতে চাইতো না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ৷
ইউরোপীয়ান কোর্টের রায়ে অবশ্য সমগ্র ইউরোপীয় রেলওয়ের কথা বলা হয়েছে৷ ভবিষ্যতে নিজেদের ত্রুটি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে কোনো কারণেই হোক না কেন, ভু্ক্তভোগী যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রেলকে৷
ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারিত
ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক বেশ কয়েক বছর আগেই নির্ধারিত করা হয়৷ ৬০ থেকে ১১৯ মিনিট দেরি হলে কোনো যাত্রী টিকিটের এক চতুর্থাংশ ফেরত পাওয়ার দাবি করতে পারেন৷ দুই ঘন্টা বিলম্ব হলে টিকেটের অর্ধেক দাম ফেরত পাওয়ার অধিকার আছে যাত্রীর৷ এই রায় অবশ্য শুধু ট্রেনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ বাস, ট্রাম বা প্লেনের বেলায় নয়৷
রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন
ভোক্তা সুরক্ষা সংস্থা ও রাজনীতিবিদরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন৷ কেননা এখন যাত্রীদের কোনটা নিজের দোষে আর কোন দৈব দুর্বিপাকে হয়েছে তা নিয়ে ঝগড়া বিবাদ করতে হবে না৷
এমনকি জার্মান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও তেমন উচ্চবাচ্য না করেই মেনে নিয়েছে এই রায়৷ যদিও তাঁদের ওপর একটা বিরাট ব্যয়ভার চাপতে পারে এবার৷ রেলওয়ের এক মুখপাত্র ডানিয়েলা বাল্স জানান, ‘‘এই রায় দ্রুততার সাথে কার্যকর করবো আমরা৷''
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সবুজ দলের পরিবহণ সংক্রান্ত মুখপাত্র মিশায়েল ক্রামার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রেলওয়ে এখন বুঝতে পেরেছে, যাত্রীদের সুবিধা অসুবিধার দিকে নজর দিলে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকাও সুবিধাজনক হবে৷'' ইউরোপের সরকারি ও বেসরকারি রেলওয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য৷
বৈষম্যমূলক আচরণ
ক্রামার ক্ষতিপূরণের ব্যাপার রেলওয়ের এতদিনের আচরণকে মৃদু সমালোচনা করলেও আসল অভিযোগটা তাঁর ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে৷ নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলতে পারেন যে, বেশির ভাগ প্লেনই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ওঠা নামা করে না৷ বিলম্বের সময় তিন ঘণ্টা ও তার বেশি হলেই কেবল ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়৷ এবং এব্যাপারে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই বিমানসংস্থাগুলোর৷ এমনটি মনে করেন জার্মানির পরিবেশবান্ধব পরিবহন ক্লাবের মুখপাত্র হাইডি টিশমান৷ রেলের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘‘কেউ যদি ট্রেনের সামনে পড়ে আত্মহত্যা করতে চান কিংবা আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ হয়ে ওঠে, তাহলে সমস্যাটা সমগ্র সমাজের৷ আর এই ব্যয়ভারও সামগ্রিভাবেই বহন করা উচিত৷
কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপানো ঠিক নয়৷ তাই এই ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া টিশমানের৷ রেল কর্তৃপক্ষ হয়তো বলবে ‘‘আমাদের খরচ বেড়ে গিয়েছে, আর তাই টিকেটের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি আমরা৷ আর এটা কারো জন্যই কাম্য নয়৷''
বিশেষ বিমা করা যেতে পারে
ক্রামার রেল কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন, দৈব দুর্বিপাক ও দুর্ঘটনার জন্য অতিরিক্ত বিমা করতে পারেন কিংবা অতিরিক্ত অর্থ মজুত রাখতে পারেন৷ যেমন বন্যা বা ধর্মঘট হলে৷ এসব কদাচিৎ ঘটে থাকে বলে প্রতিবছর খুব একটা খরচ পড়বে না৷ ‘‘তবে ‘মুশকিল আসানে'-র জন্য তো যাত্রীরাই রয়েছেন'', ঠাট্টাচ্ছলে বলেন তিনি৷
হাইডি টিশমান ও ক্রামার উভয়েই রেলওয়ের ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা করেন৷ তাঁরা পরিবেশ রক্ষার কারণে গাড়ি ও উড়োজাহাজের চেয়ে রেলওয়ে শক্তিশালী হোক, এটাই চান৷
অন্যদিকে রেলওয়ে টিকিটের দাম বাড়ানোর কারণে যাত্রীদের তেমনভাবে কাছে টানতে পারছে না৷ তাই আদালতের রায়ের ব্যাপারে বলা যায়, টিকেটের মূল্যবৃদ্ধির বিনিময়ে স্বল্পসংখ্যক মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো৷