ছুটি না পাওয়ায় বাংলাদেশে এক নারী কর্মীর টয়লেটে সন্তান প্রসবের ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সাড়া জাগিয়েছে৷ স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন পেশ করতে বলেছে আদালত৷ কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রকৃত ঘটনা অন্যরকম৷
বিজ্ঞাপন
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার কারখানায় কাজ করার সময়ই যন্ত্রণা শুরু হয় হামিদা আক্তার নামের এক নারী কর্মীর৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চাওয়া সত্ত্বেও তিনি ছুটি পাননি৷ বাধ্য হয়ে তিনি টয়লেটে যান এবং সেখানেই সন্তান প্রসব করেন হামিদা৷ তবে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই মারা যায়৷
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার কর্তৃপক্ষ অবশ্য ছুটি না দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে৷ কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকার কারখানাটির ঘটনাটি তদন্ত করে ইউএনওকে আগামী ২৪শে মের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ পাশাপাশি ঐ প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তাকে তলবও করা হয়েছে৷
মূত্রাশয়ে ‘ইনফেকশন’, যা নিয়ে কেউ কথা বলে না
নারী, পুরুষ, ছোট-বড় অনেককেই দেখা যায় বারবার টয়লেটে যাচ্ছেন বা নার্ভাস বোধ করছেন৷কাছাকাছি টয়লেট না থাকায় বিরক্তও হচ্ছেন৷মূত্রাশয়ে সংক্রমণের কারণে সাধারণত যা হয়ে থেকে৷এ থেকে মুক্তি পেতে ছবিঘরে থাকছে সচেতনতামূলক কিছু তথ্য৷
ছবি: Fotolia/Doruk Sikman
নারীরাই ভোগেন বেশি
মূত্রাশয়ের সংক্রমণের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় নারীদেরই বেশি৷ জার্মান একটি জরিপের ফলাফলে জানানো হয়েছে, এ দেশে প্রতি দু’জনের একজন মহিলা জীবনে অন্তত একবার মূত্রাশয়ের সংক্রমণে আক্রান্ত হন৷ এই সংক্রমণ সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণেই হয়ে থাকে আর একবার যে নারীর এই ইনফেকশন হয়, পরবর্তীতেও তাঁর এই সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ মূত্রনালি পুরুষদের ২০ এবং নারীদের ৪ সেন্টিমিটার হওয়ার ফলে পরিষ্কার রাখা কষ্টসাধ্য হয়৷
সকলেরই হতে পারে
এ সমস্যা নারী, পুরুষ সবারই হতে পারে এবং তা যে কোনো বয়সে৷ মূত্রাশয়ের সমস্যা মানুষকে নার্ভাস করে ফেলে, বিশেষ করে অপরিচিত কোথাও গেলে বা ভ্রমণকালে অথবা অচেনা মানুষ সাথে থাকলে তো কথাই নেই! এই সমস্যায় মানুষ সংকোচ বা লজ্জা বোধ তো করেনই, এমনকি এ সমস্যা নিয়ে সরাসরি কারুর সাথে কথাও বলতে চান না৷ মূত্রাশয়ের এই ‘ইনফেকশন’ বা সংক্রমণ বেশিদিন ধরে বয়ে বেড়ালে এর থেকে কিন্তু জটিল অসুখও হতে পারে৷ তাই সাবধান!
ছবি: DW/A. Induchova
যৌনমিলনে সংক্রমণ
জীবাণুমুক্ত মূত্রনালি ও মূত্রাশয় ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হলে মূত্রাশয়ে জ্বালা এবং ব্যথা হয়৷ জীবাণু সাধারণত পাকস্থলী ও অন্ত্রের নীচের অংশে থাকে, যা যৌনমিলনের সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ জীবাণু মূত্রনালি দিয়ে মূত্রাশয়ে ঢুকলে সাধারণত প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়৷ তবে জীবাণু বংশবিস্তার শুরু করলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটে৷ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, সহবাসের পর জীবাণু ধুয়ে ফেলার জন্য প্রস্রাব করা এবং পরিষ্কার করা উচিত৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ
একমাত্র কোনো জীবাণু ঢোকার পরই সংক্রমণ ঘটে এবং প্রস্রাবের সময় ব্যথা এবং জ্বালা অনূভব হয়৷ তখন তাঁর সারাক্ষণই মনে হতে থাকে যে টয়লেটে যেতে হবে৷ সমস্যাটা আরো মারাত্মক হয় যখন জীবাণু কিডনিতে প্রবেশ করে৷ তখন শুধু জ্বালা নয়, পাশাপাশি জ্বর হয়৷ তাই এমনটা হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷
ছবি: Colourbox
ডালিম বা বেদানা খান
মূত্রনালির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দরকার শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ তাছাড়া সুস্থ ব্লাডারের জন্য প্রয়োজন বিশেষ ব্যায়াম৷ এছাড়া ব্লাডার বা মূত্রাশয়কে ঠিক মতো পরিষ্কারের জন্য দিনে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান প্রয়োজন৷ ভিটামিন সি, জিংক এবং সেলেনিউম ব্লাডারের রোগের প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ এক্ষেত্রে বেদানায় থাকা উপাদানও ‘ইউরেনারি ইনফেকশন’ হওয়া থেকে দূরে রাখে৷
ছবি: Fars
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিশেষ জরুরি, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে৷ পরনের প্যান্টি বা আন্ডার প্যান্টস, স্লিপ হওয়া উচিত অবশ্যই সুতির, যাতে বাতাস চলাচল করতে সুবিধা হয়৷ পলিয়েস্টার কাপড়ের তৈরি অন্তর্বাস সহজেই গোপন জায়গায় জীবাণু ছড়াতে পারে, হতে পারে ছত্রাকও৷ বলেন স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডোরোথি স্ট্রুক৷ তাছাড়া প্রস্রাবের বেগ হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখা এ রোগ হওয়ার আরো একটি কারণ, তাই আর চেপে রাখা নয়!
ছবি: Fotolia
বেশি ওষুধ নয়
তলপেটে ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে থাকা দরকার এবং তার সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট পানি পান করুন৷ মনে রাখবেন খাবারে সরিষার তেলের ব্যবহার মূত্রাশয়ে সক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়৷ রোজমেরির মতো নানা ভেষজ উদ্ভিদও অত্যন্ত কার্যকর এক্ষেত্রে৷ তবে যাঁরা ডায়াবেটিস, ব্যথানাশক ওষুধ বেশি সেবন করেন, তাঁদের কিন্তু মূত্রাশয়ের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়৷
ছবি: Fotolia/Doruk Sikman
7 ছবি1 | 7
এদিকে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, ঘটনার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে৷
তবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই কারখানার এক কর্মকর্তার বক্তব্য ঘটনাটিকে রহস্যাবৃত করেছে৷ আব্দুল আজিজ নামের সেই কর্মকর্তার দাবি, তাঁদের কারখানায় কোনো নারী শ্রমিক গর্ভধারণ করলে তাঁর নিয়মিত চিকিৎসার জন্য কারখানার হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে তাঁর নাম তালিকাভুক্তির নিয়ম রয়েছে৷ হামিদা তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করেননি৷ চার বছর ধরে অ্যাপেক্সে কর্মরত হামিদা গত বছরের ২১শে এপ্রিল মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি৷ তখন পুত্র সন্তান হওয়ার পর ছুটি শেষে গত সেপ্টেম্বর মাসেই হামিদা আবার কাজে যোগ দেন৷ কর্মকর্তা আরো জানান, হামিদা এবার গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি চেপে রেখেছিলেন৷ ঐ দিন লাস্টিং সেকশনের সুপারভাইজারের কাছে পেট ব্যথার কথা বললেও গর্ভধারণের বিষয়টি স্পষ্ট করেননি – এ কথা জানিয়ে তিনি আরো দাবি করেন, হামিদাকে তখন কারখানার চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি ছুটি চাননি৷
অ্যাপেক্স-এর চিকিৎসকও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘‘তিনি (হামিদা) গর্ভবতী ছিলেন, তা কাউকে বলেননি৷ ব্যথার ওষুধ নিয়ে তিনি ফ্লোরে নিজের কাজে যোগ দিতে ফিরে গিয়েছিলেন৷ দুপুরে টয়লেটে তাঁর অপরিণত (আনুমানিক ১৬ সপ্তাহ বয়সি) বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয়৷ গর্ভপাতের পর তাঁর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল৷ সেজন্য তাঁকে স্থানীয় ক্লিনিকে পাঠানো হয়৷ তাঁর দাবি অনুযায়ী, জরায়ু পরিষ্কারের পর হামিদাকে ছাড়পত্র দেয় স্থানীয় সেই ক্লিনিক৷