আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন আইএসএস-এ পৌঁছেছেন জার্মান মহাকাশচারী আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট৷ রাশিয়ার মাক্সিম সুরাইয়েভ ও অ্যামেরিকার রিড ওয়াইজম্যান-এর সঙ্গে সোইয়ুজ মহাকাশযানে করে আইএসএস-এ পৌঁছান জার্মানির একাদশতম মহাকাশচারী৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় ৮ ঘণ্টা যাত্রার জন্য সোইয়ুজ মোটেই আরামদায়ক নয়৷ প্রশিক্ষণের সময় ওয়াইজম্যান বলেছিলেন, ‘‘এ যেন তিন জনে মিলে টেলিফোন বুথে আটকে থাকা৷’’ এমন যাত্রার পর আইএসএস-এর ভিতরটা বেশ বড় মনে হয়৷ সেই সঙ্গে ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে মাধ্যাকর্ষণহীনতার রোমাঞ্চ তো আছেই৷
আইএসএস-এ গেয়ার্স্ট-এর আগে আরও দু’জন জার্মান মহাকাশচারী সময় কাটিয়ে গেছেন৷ নিজে আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ হলেও ১৬৬ দিন ধরে তিনি বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাবেন এবং কমপক্ষে একবার ‘স্পেস ওয়াক’ করতে বেরোবেন৷ তবে একেবারে প্রথম কাজটি কিন্তু বেশ অভিনব৷ যাত্রার আগে নিজের ইন্টারনেট ব্লগে গেয়ার্স্ট লিখেছিলেন, টয়লেটে প্রস্রাবের আধারটি বদলানো দিয়েই তাঁর কাজ শুরু হবে৷
মহাশূন্যে হাত বাড়াচ্ছে ইউরোপ
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
তারা থেকে তারায়
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷ ক্যাপসুলটি প্রথমে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করবে৷ তারপর মহাশূন্যে অবস্থান নেবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হিসেবে৷ হয়তো মঙ্গলগ্রহ যাত্রার পথে তা কাজে লাগবে৷
ছবি: ESA-D. Ducros, 2012
মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় অভ্যস্ত হওয়া
প্রথমে ইউরোপের নভচারীদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস’এ যাত্রা করার পালা৷ এসা’র অ্যাস্ট্রোনট ইটালির লুকা পার্মিতানো একটি জলের চৌবাচ্চায় স্পেস ওয়াক অভ্যেস করছেন৷ স্থান: কোলোনের কাছে ইউরোপীয় নভচারী কেন্দ্র (ইএসি)৷
ছবি: ESA/H. Rueb, 2010
আইএসএস’র জন্য তিন ইউরোপীয় নভশ্চর
লুকা পার্মিতানো আইএসএস’এ থাকবেন এ’বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি৷ ২০১৪ সালে এ’ভাবেই যাবেন জার্মানির আলেক্সান্ডার গের্স্ট৷ তারপরে যাবেন একজন মহিলা, ইটালির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেত্তি৷
ছবি: dapd/NASA
মানুষের বদলে মাল পরিবহণ
তিন ইউরোপীয় নভশ্চর আইএসএস’এ যাবেন রুশ সোয়ুজ রকেটে চড়ে৷ এসা ইতিমধ্যে তথাকথিত অটোম্যাটিক ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি’র মাধ্যমে আইএসএস’এ মালপত্র পাঠায়৷ পরের যাত্রা আগামী ১৮ই এপ্রিল৷ এটিভি’তে সাত টন খাদ্য ও সরঞ্জাম পাঠানো যায়৷
ছবি: ESA/S.Corvaja/dapd
চন্দ্রবাসের স্বপ্ন
চন্দ্রপীষ্ঠে এ’ধরনের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন থেকে এসা এখনও অনেক দূর৷ সেখানে জন পাওয়া গেলে, তা’তে চাঁদের ধুলো মিশিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা যেতে পারে৷ এবং চাঁদে জল আছে কিনা, চীনের চাঙ-ই ৩ রোভার চন্দ্রযান তা এ’বছরেই জানতে পারবে৷ চন্দ্রে অবতরণের পর এসা ঐ রোভারে তথ্য পাঠানোর ভার নেবে এবং তার গতিবিধি পরিচালনা করবে৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
ডার্মস্টাট থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা
এসা’র ইউরোপীয় মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা এসক থেকে চাঙ-ই ৩’এর আগের চীনা মহাকাশযানগুলিতে তথ্য পাঠানোয় সাহায্য করা হয়েছিল৷ চীনের আগের মহাকাশযানগুলি চন্দ্র প্রদক্ষিণ করেছে কিন্তু চন্দ্রপীষ্ঠে অবতরণ করেনি৷ এসক থেকে অপরাপর বহু গবেষণা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত স্যাটেলাইটের যাত্রার উপর নজর রাখা হয়৷
ছবি: ESA - J. Mai
থ্রি-ডি’তে আমাদের ছায়াপথ
এ’বছরের অক্টোবর মাসে স্পেস প্রোব বা মহাশূন্য অভিযাত্রী যান ‘গাইয়া’ তার যাত্রা শুরু করবে৷ ইন্টারোফেরোমিটারের সাহায্যে আলোকতরঙ্গ থেকে আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের একটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করবে এবং ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের অনেক রহস্য উদঘাটন করবে৷ এসা’র গবেষকরা অন্তত এক বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করার আশা করছেন৷ এমনকি তিন বিলিয়নও হতে পারে৷
ছবি: ESA/Medialab
গ্রহাণুর সন্ধানে
রোজেট্টা স্পেস প্রোব’টি ২০০৪ সাল যাবৎ ৬৭/পি চুরজুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিমুখে যাত্রা করছে৷ ২০১৪ সালের সূচনায় মহাকাশযানটি ধূমকেতুটির কক্ষপথে যোগদান করবে৷ তবে ধূমকেতু অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে রোজেট্টা অনেক কিছু দেখবে: নাসা’র ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোজেক্টাইলটি কিভাবে টেম্পল ওয়ান ধূমকেতুতে আঘাত করবে৷ এচাড়া রোজেট্টা দেখবে মঙ্গলগ্রহ এবং স্টাইনস ও লুটেশিয়া নামের দ’টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমকেতুর উপর অবতরণ
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রোজেট্টা ফিলি নামের এই রোবোটটিকে ধূমকেতুর উপরে নামাবে৷ কোলোনে অবস্থিত জার্মান বিমান ও মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র ডিএলআর থেকে সেই অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ কাজটা শক্ত হবে, কেনান ধূমকেতুটির মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি নয়৷ রোজ্ট্টা ধূমকেতুটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA/AOES Medialab
স্যাটেলাইটের রিসাইক্লিং সম্ভব নয়
অর্ধশতাব্দী ধরে মহাকাশে রকেট ও স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় প্রায় ছ’লাখ নানা ধরনের ও আকারের স্ক্র্যাপ এ’ভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ এসা চাপ দিচ্ছে মহাশূন্যে আবর্জনা কমানোর জন্য: অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিতভাবে ভূপাতিত করতে হবে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
৩৮ বছর বয়স্ক আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট-এর মূল কাজগুলির মধ্যে রয়েছে শরীরের ত্বকের বয়স হওয়ার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা৷ ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার একটি পরিবহন যান আইএসএস-এ এলে সেটিকে ‘পার্ক’ করার দায়িত্বও তাঁকে পালন করতে হবে৷ জার্মানির একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানে শিশুদের প্রশ্নের জবাবও তাঁকে দিতে হবে৷ তিনি নিজেও শৈশব থেকেই মহাকাশে যাবার স্বপ্ন দেখতেন৷
তবে মহাকাশ যাত্রার গুরুত্ব গেয়ার্স্ট-এর কাছে শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়৷ তাঁর মতে, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট কিছু দেশের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, একটা টিম হিসেবেই যাত্রা শুরু করেছি৷’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউক্রেন-সংকটের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কে যে চিড় ধরেছে, তা নিয়ে চিন্তিত গেয়ার্স্ট-ও৷ রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছে, ২০২০ সালের পর সে দেশ আর আইএসএস-প্রকল্পে সহযোগিতা করতে চায় না৷ অথচ সেখানে মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে গোটা বিশ্ব এই মুহূর্তে শুধু রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল৷