জার্মানদের মধ্যে এমনিতেই কেনাকাটা করে বাড়িতে মজুদ করে রাখার প্রবণতা রয়েছে৷ মার্চের লকডাউনে অতিরিক্ত পণ্য কিনে রাখা মারাত্মক আকার নিয়েছিলো৷ তা এড়াতে জার্মান কৃষি মন্ত্রী জনগণের প্রতি আগেভাগেই অনুরোধ জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/xim.gs
বিজ্ঞাপন
করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে নানা বিষয়ে উদ্বেগের মাত্রা৷ লিডল, আলডি বা এডেকার মতো বড়বড় চেইন সুপার মার্কেটগুলো টয়লেট পেপারের মতো কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদার কথা জানিয়েছে, যা গত লকডাউনের সময় ঘটেছিলো৷
জার্মান কৃষি মন্ত্রী ইউলিয়া ক্ল্যোকনার রোববার ফ্রাংকফুর্টার আলগেমাইন পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘অতিরিক্ত পণ্য কিনে বাড়িতে মজুদ করে রাখা শুধু অযৌক্তিকই নয়, সহানুভূতির অভাব রয়েছে৷ কিনে রাখা অতিরিক্ত পণ্যের অনেকটাই হয়তো শেষ পর্যন্ত আবর্জনায় ফেলতে হয়৷'' তিনি এই গতবারের সে পরিস্থিতি এড়ানোর অনুরোধ করেছেন সকলকে৷
মার্চ এপ্রিল মাসে কত মানুষ যে সোশ্যাল মিডিয়ায় দোকানে টয়লেট পেপারের খালি তাকের ছবি পোস্ট করছেন! আসলে কোনো বিপদ আপদে আমাদের চিন্তা থাকে বাসায় যথেষ্ট খাবার- দাবার আছে কিনা সেদিকে? আর জার্মানদের আতঙ্ক ছিলো টয়লেট পেপার নিয়ে৷ টয়লেট পেপার নিয়ে অবশ্য সেসময় জার্মনরা নিজেরাও অনেক মজার মজার জোক করেছেন৷ তখন দোকান ছাড়াও আমার জার্মান প্রতিবেশিদের বিভিন্ন পণ্যের বাড়তি কেনাকাটা এবং গাড়ি থেকে বিশাল বড় বড় টয়লেট পেপারের রোলগুলো বের করতে দেখেছি৷ তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক মধুর থাকলেও কেন যেন তখন এ বিষয়ে তাদের কিছু বলতে পারিনি৷ শুধু মনে হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ কত দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যচ্ছে আর জার্মানদের চিন্তা টয়লেট পেপার নিয়ে৷ সত্যিই বলতে কি, টয়লেট পেপার নিয়ে মাতামাতি একটু বাড়াবাড়িই মনে হয়েছে তখন!
নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Islam
যদিও শেষের দিকে এসব কারণে অনেক দোকানের বিভিন্ন পণ্যের তাকে এক প্যাকেটের বেশি কেনা যাবে না, তা লিখে রাখা হতো৷ সে পরিস্থিতি মনে হচ্ছে আবারও ফিরে এসেছে, এখন আবারও টয়লেট পেপার বা করোনা প্যানিক কেনাকাটা নিয়ে জোক শুরু হয়ে গেছে, ফেসবুক, টুইটার আর ইন্সটাগ্রামে৷
তবে একটা কথা ঠিক যে যারা শহরের একটু বাইরে থাকেন বা চাকরীজীবী, তাদের অনেকে দরকারি অদরকারি জিনিসপত্র কিনে বাড়ির সেলার বা স্টোররুমে রেখে দেয় ৷ জার্মানদের এই স্বভাবের কিছুটা প্রভাব আমরা যারা অনেকদিন ধরে এদেশে আছি তাদের মধ্যেও পড়েছে৷
মন্ত্রী ক্ল্যোকনার ঠিকই বলেছেন যে, কিনে রাখা অতিরিক্ত পণ্যের কিছুটা শেষ পর্যন্ত আবর্জনায় ফেলা হয়৷ আর তা আমি আমার জার্মান বন্ধুবান্ধব আর প্রতিবেশীদের মধ্যে কিছুটা হলেও দেখেছি৷ অতিরিক্ত কেনাকাটা মানেই বাড়তি অর্থের প্রয়োজন৷ করোনা সংকটে প্রতিটি মানুষের যে সে সামর্থ্য নেই তা প্রায় সকল সচেতন নাগরিকেরই জানা৷ শুধু এ বিষয়টা মাথায় রাখলে মার্চ মাসের মতো পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব!
আমার বিশ্বাস, মন্ত্রীর অনুরোধ মেনে করোনা সংকট পরিস্থিতিতে সকলে একে অপরের প্রতি সহানুভুতিশীল হবেন এবং অতিরিক্ত পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকবেন!
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: ইউরোপে আবার কড়াকড়ি
ইউরোপে করোনার প্রকোপ আবার বাড়ছে৷তাই অর্থনীতি বাঁচাতে লকডাউন এড়িয়েই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আবারো কড়াকড়ি আরোপ করছে কয়েকটি দেশের সরকার৷
ছবি: Philippe Lopez/AFP/Getty Images
জার্মানিতে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকা বাড়ছে
করোনা সংক্রমণের নতুন ঝুঁকিতে জার্মানির মিউনিখ শহর৷ বার্লিনে হঠাৎ করেই বেড়েছে সংক্রমণ৷ আর তাই রাতে কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন৷ শহরটিতে ৭০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কারফিউ জারি করা হলো৷ রাত ১১টার মধ্যে দোকানপাটসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ আপাতত অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ পাঁচ জনের বেশি মানুষ রাত ১১টার পর ঘরের বাইরে এক হতে পারবে না৷
ছবি: Fabrizio Bensch/Reuters
চেক প্রজাতন্ত্রে জাতীয় পর্যায়ে লকডাউন জারি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো দেশব্যাপী লকডাউন জারি করেছে চেক প্রজাতন্ত্র সরকার৷ অক্টোবরের ৫ তারিখ থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে৷ মাস্ক সব জায়গায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ গির্জায় ১০ জনের বেশি মানুষের প্রবেশ নিষেধ৷ শপিং সেন্টারগুলোতে ওয়াইফাই বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, যাতে তরুণদের জমায়েত কম হয়৷
ছবি: Gabriel Kuchta/Getty Images
স্পেনে জরুরি অবস্থা জারি
স্পেনে হঠাৎ করে আবারো বেড়েছে করোনা সংক্রমণ৷ সংক্রমণ কমাতে মন্ত্রিসভা ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ দিয়েছে৷ সারাদেশে কোয়ারান্টিন পদ্ধতি আবারও বলবৎ হচ্ছে৷ মাদ্রিদের স্থানীয় সরকার করোনা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অমান্য করার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো৷
ছবি: SOPA Images/ZUMA Wire/picture-alliance
ফ্রান্সে কড়াকড়ি আরোপে পুলিশি তৎপরতা
ফ্রান্সে দ্রুত বাড়ছে করোনা সংক্রমণ৷ এ কারণে রাজধানী প্যারিসে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব ‘বার ’৷ তুলোঁ এবং মঁতেপিলার ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকার শীর্ষে৷ শনিবার ফ্রান্সে একদিনে সংক্রমণের হার ছিল ২৭ হাজার, যা মহামারি শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ৷ প্যারিস এবং এর উপকন্ঠে পুলিশ সবসময় লক্ষ্য রাখছে বারগুলো বন্ধ আছে কিনা আর রেস্তোরাঁগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কিনা৷
ছবি: Kiran Ridley/Getty Images
পোল্যান্ডে সংক্রমণ বাড়লেও স্কুল খোলা
পোল্যান্ডে টানা পাঁচদিন ধরে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ কিন্তু এরপরও স্কুল খোলা আছে৷ ৬০ থেকে ৬৫ বছর বয়সি মানুষদের জন্য সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকছে৷ বাইরে বের হলে সর্বত্র মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ ৩ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার ৬৩৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন এবং ২ হাজার ৯৭২ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/K. Pempel
স্লোভাকিয়া: ছয় জনের বেশি একসাথে নয়
স্লোভাকিয়ায় ১৩ অক্টোবর থেকে ছয় জনের বেশি মানুষ জমায়েত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ তবে পরিবারের সদস্যরা এই নিয়মের বাইরে৷ গির্জায় প্রার্থনা ও সব ধরনের ‘পাবলিক ইভেন্ট’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ সর্বত্র মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ ফিটনেস আর ওয়েলনেস সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে৷ রেস্তোরাঁর ভেতরে খাবার দেয়া নিষিদ্ধ৷ (৩০ সেপ্টেম্বর তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে করোনা কড়াকড়ির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ৷)
ছবি: Pavel Neubauer/dpa/picture-alliance
ইংল্যান্ডে ‘থ্রি-টায়ার’ অ্যালার্ট
ইংল্যান্ডে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ‘থ্রি-টায়ার’ অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করেছে সরকার৷ নতুন এই সিস্টেমে করোনা সংক্রমণের হারের ভিত্তিতে এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ‘মধ্যম’ ‘উচ্চ’ ও ‘সর্বোচ্চ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ যেমন: উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় আছে লিভারপুল৷ এই এলাকায় কড়াকড়ি আরোপের কথা ভাবছে সরকার৷ ফলে জিম, পাব, ক্যাসিনো বন্ধ রাখার ঘোষণা আসতে পারে৷