1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঠুঁটো জগন্নাথ নির্বাচন কমিশন

আজিজ হাসান
৫ নভেম্বর ২০১৮

ভোট, জালভোট, কারচুপি – সবই যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে৷ নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা, উদাসীনতা বা সদিচ্ছার অভাব যা-ই বলি না কেন, তাদের কারণেই নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে এই ধারণা৷

Bangladesch Gebäude der Wahlkommission in Dhaka
ছবি: DW/M. M. Rahman

তবে গত কয়েক বছরে একটি কাজে বেশ সফলতার পরিচয় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের জন্য অতি প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠা জাতীয় পরিচয়পত্র জাতির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে তারা৷

তবে ওই পরিচয়পত্রের প্রধান যে ব্যবহার, সেই ভোটাধিকার প্রয়োগে গুরুত্ব হারিয়েছে তা৷ এখন অনেকেই ভোট দিতে পারবেন ভেবে জাতীয় পরিচয়পত্র করান না, প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন অফিসিয়াল নানা কর্মকাণ্ডের জন্য৷

ভোট নিয়ে মানুষের ভাবনার এই বদলের কারণ খুঁজতে গেলে আমরা দেখব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যাচ্ছে-তাই কারবার৷ গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ নির্বাচনের ফয়সালা হয়েছে বিরোধী পক্ষের বর্জন, প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে৷ আর যেসব স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে, সেখানেও দেখা গেছে হরিলুটের কারবার৷ তবে কাগজপত্রে সব কিছু ছিল ঠিকঠাক৷

গণতান্ত্রিক যাত্রায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতায়িত করতে ব্যর্থ বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো নির্বাচন কমিশনও অনেকটা ঠুঁটো জগন্নাথ৷ নির্বাচনকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা দেখভালের এখতিয়ার থাকলেও বলিষ্ঠ পদক্ষপ নিতে পারেনি কমিশন৷ সবসময় তাদের দেখা গেছে, জোড়াতালির মধ্য দিয়ে কোনোভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের সমাপ্তি টানতে৷

এই দায় বা দোষ শুধু বর্তমানের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার আমলের নির্বাচন কমিশনেরই নয়৷ অতীতেও এমন হয়েছে বহু বার৷ আর সেই ধারাবাহিকতাই চলছে একের পর এক৷ দশম সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে সরকার গঠনকারী আওয়ামী লীগ সমালোচনার জবাবে বারবারই টেনে আনে বিএনপি সরকার আমলের বিভিন্ন নির্বাচনের কথা৷

১৯৯৪ সালে মাগুরায় উপ-নির্বাচনে কারচুপির ঘটনা নানা সময়ে তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ আমাদের মনে আছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এম এ আজিজ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের কথা৷ ওই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে সারা দেশ উত্তাল করে তুলেছিল তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ৷ পরে জরুরি অবস্থা ও সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন কমিশন গঠনের পর নির্বাচনে আসে দলগুলো৷

এই সরকারের আমলে একের পর এক নির্বাচনে কেন্দ্র দখল আর ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠলেও সে বিষয়ে কার্যত নীরব থেকেছে নির্বাচন কমিশন৷ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রথম স্থানীয় নির্বাচনে অনেক ইউনিয়ন পরিষদেই প্রভাব খাটিয়েছেন এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা৷ আমার এলাকা নড়াইলের একটি ইউনিয়নে নির্বাচন দেখার সুযোগ হয়েছিল৷ যখন সিপিবি সমর্থক প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছিল, তখন একটি কেন্দ্র আটকে দিয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান৷ কয়েক ঘণ্টা পর ঘোষিত ফলে দেখা যায়, এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন৷ তার পাশের আরেকটি ইউনিয়নে নির্বাচনের পর ফল ঘোষণা না করে উপজেলা সদরের দিকে ভোট বাক্স আনার উদ্যোগ নেওয়া হলে সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে৷

আজিজ হাসান, ডয়চে ভেলেছবি: Perschia Pria

এরপরে কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক৷ বিগত উপজেলা নির্বাচনে নড়াইলের কালিয়ায় একটি কেন্দ্রে এক প্রার্থীর সমর্থকদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বুথ দখলে নিয়ে জালভোট দেওয়ার খবর এসপিকে জানালেও তাতে কোনো কাজ হয়নি৷ ‘‘আমাদের কাছে এমন কোনো খবর নেই'' বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি৷ 

এমপিদের অন্যায় আবদার মেনে চলা পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে নির্বাচনি কাজ চালায় নির্বাচন কমিশন৷ তাঁদের সদিচ্ছা আছে কিনা সেটা একটি প্রশ্ন হলেও তাঁরা আসলে স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য বলিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপই নেন বলে দেখা যায় না৷ তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন বাংলাদেশে সম্ভব কিনা, সেটাই এখন অনেকের প্রশ্ন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ