1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

ডলারের দাম ঠিক করবে বাজার, সতর্কতার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

১৫ মে ২০২৫

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর ঋণের দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাচ্ছে বাংলাদেশ৷ এর জন্য তাদের দেওয়া কিছু শর্ত বাংলাদেশকে পূরণ করতে হচ্ছে৷ একটি ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া৷ বুধবার সেই ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷

১০০ ডলারের নোট
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির আশঙ্কা করেন, ‘‘এই সময়ে বাজারের ওপর ডলারের দাম ছেড়ে দেয়ায় অনেক ঝুঁকি আছেছবি: Xie Zhengyi/dpa/picture alliance

অবশ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রপ্তানি ভালো থাকলেও এখনই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছাড়তে চাইছিলো না৷ অর্থনীতি আরো একটু স্থিতিশীল হলে তারপর ভেবে দেখা যেত বলছেন বিশ্লেষকেরা৷

কিন্তু বাজেট সহায়তার জন্য বাংলাদেশের আইএমএফ-এর দুই কিস্তির ১.৩ বিলিয়ন ডলার দরকার৷ এটা আইএমএফ দিলে উন্নয়ন সহযোগীরা আরো ৩.৩ বিলিয়ন ডলার দেবে আশা করা হচ্ছে৷

আইএমএফ বাংলাদেশকে মোট ৪.৭ বিলিয়ন ডলার দেয়ার চুক্তি করেছে গত সরকারের আমলে৷ এরইমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কিস্তির ঋণ তারা দিয়েছে৷ এখন চতুর্থ এবং পঞ্চম কিস্তির ঋণ একসঙ্গে দিতে সম্মত হয়েছে৷ এটা পেতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুই ভাগে আলাদা করা হয়েছে৷ আর সর্বশেষ ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হলো৷

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির আশঙ্কা করেন, ‘‘এই সময়ে বাজারের ওপর ডলারের দাম ছেড়ে দেয়ায় অনেক ঝুঁকি আছেছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বুধবার দুবাই থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে দেয়ার সময় হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে৷ বাজারভিত্তিক করা হলেও বর্তমানে ডলারের যা দর রয়েছে, তার থেকে খুব বেশি তারতম্য ঘটবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ডলার বাজার স্থিতিশীল ছিল৷ আগামীতেও আশা করছি ডলার বাজারে ইন্টারভেন করার দরকার হবে না৷''

এদিকে, বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের যে সদিচ্ছা আছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেই বার্তা দিতেই ডলারের দাম ‘বাজারভিত্তিক’ করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে ডলারের দাম বেশি বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে৷

ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে সম্প্রতি ডলারের দাম ১২২ টাকার মধ্যেই ছিলো৷ তবে কার্ব মার্কেটে ১২৪ টাকা৷ বুধবারের ঘোষণার পর কার্ব মার্কেটে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ পর্যন্ত ডলারের দাম এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে৷ ব্যাংক রেট এখনো আগের মতোই আছে৷ দুপুর ২টার পর আবারো বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা যায় ডলারের বিনিময় হারে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি৷

‘সিদ্ধান্ত সঠিক'

ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, ‘‘হোয়াট ইজ দ্য প্রাইস অব ডলার? হোয়াটএভার দি মার্কেট ইস রেডি টু পে৷ এই কথাই হলো ডলারের প্রকৃত দাম নির্ধারণের সূত্র৷ এত দিন তো আমরা দাম জোর করে ধরে রেখেছিলাম৷ কিন্তু বাজারই ডলারের দাম নির্ধারণ করবে৷ সেই দিক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত ঠিক আছে৷ এবং এটা নিয়ে অনেক দিন ধরে কথাও হচ্ছিল৷''

তার কথা, ‘‘এখন আমদানি কমে এসেছে, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার কমেছে, রপ্তানিও বেড়েছে, প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ, আন্ডার ইনভয়েস কমেছে৷ ফলে বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য বেড়েছে৷ এর সঙ্গে বাজেটকে সাপোর্ট দিতে আমাদের আইএমএফ-এর ঋণ দরকার৷ এই সব মিলিয়ে ডলারের দাম বাজারেও ওপর ছেড়ে দেয়া হলো৷''

তবে তারপরও চিন্তার জায়গা রয়ে গেছে বলে মনে করেন মামুন রশীদ৷ এই ডলার শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যেতে পারে সেই ভাবনা আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এরজন্য আমাদের স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড লাগবে৷ আর রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয়ের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে৷ ট্যারিফ স্ট্রাকচার সংস্কার করতে হবে৷''

টাকা-ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন ‘ক্রলিং পেগ' পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছিলো৷ এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতি ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১১৯ টাকা দামের (নির্ধারণ করে দেয়া) সঙ্গে ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে ও কমতে পারে৷ এর সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা ব্যবধানে ডলার বিক্রি করা যায়৷ ফলে ডলারের দাম এখন সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হওয়ার কথা৷ তবে এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে৷ তারও আগে বাংলাদেশ ব্যাংক মিনিময় হার নির্ধারণ করে দিতো৷ কিন্তু এখন বিনিময় হার হবে চাহিদা ও যোগানের ওপর৷

আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে: ড. মাহফুজ কবির

This browser does not support the audio element.

‘সবকিছুর দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে'

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির আশঙ্কা করেন, ‘‘এই সময়ে বাজারের ওপর ডলারের দাম ছেড়ে দেয়ায় অনেক ঝুঁকি আছে৷ এখন ডলারের চাহিদা বেশি ফলে ডলারের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে৷ ফলে টাকার অবমূল্যায়ন হতে পারে৷ আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে৷ ফলে সব কিছুরই দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে৷ আর কাঁচামাল আমদানি খরচ বাড়লে শিল্পের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রিজার্ভ আইএমএফ-এর হিসাবে ২১ বিলিয়ন ডলারের মতো৷ আমার বিবেচনায় রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের মতো হলে তখন ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া যেত৷ এটা আসলে আইএমএফ-এর ঋণ পাওয়ার জন্য তাদের চাপে আগেই করে ফেলা হলো৷ সাত দিন আগেও বলা হয়েছে পরিস্থিতি ভালো না৷ আইএমএফ-এর শর্ত মেনে ঋণ নেয়া হবে না৷ সাত দিনে এমন কী উন্নতি হলো যে আমরা তাদের শর্ত মেনে নিলাম৷''

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাস শেষে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২৭.৪২ বিলিয়ন ডলার৷ আর আইএমএফ-এর হিসাবে ২২.০৪ বিলিয়ন ডলার৷ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাড়ে ১০ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷ আর জুনের মধ্যে আইএমএফ দুই কিস্তির টাকা ছাড় করলে রিজার্ভ আরো বাড়ার আশা করছে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ আর রিজার্ভ দিয়ে আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক দায় দেনা শোধ করা হয়৷

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে রিজার্ভ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটা ফান্ড গঠন করা হয়েছে৷ যদি কোনো সংকট হয় সেখান থেকেও সহায়তা দেয়া হবে৷ ব্যাংকগুলো পরস্পরকে সহায়তা করবে৷ আর বাংলদেশ ব্যাংকের মনিটরিং থাকবে৷ প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করতে পারবে৷

‘নজরদারি দরকার'

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমীন বলেন, ‘‘ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া ইতিবাচক৷ এতে অর্থনীতির প্রকৃত শক্তি বোঝা যায়৷ কিন্তু এই সুযোগে প্লেয়াররা ফেয়ার প্লে, না ফাউল খেলবে, সেটা দেখার আছে৷ রেফারি কারা সেগুলো নিয়ে একটা আশঙ্কা আছে৷''

এই সুযোগে প্লেয়াররা ফেয়ার প্লে, না ফাউল খেলবে, সেটা দেখার আছে: মো. নুরুল আমীন

This browser does not support the audio element.

‘‘এক্সচেঞ্জ হাউজ, এমনকি ব্যাংকগুলো হলো বিদেশি মুদ্রার অ্যাগ্রিগেটর৷ তারা ডলার সংগ্রহ করে৷ তারা পরস্পরের খোঁজ নেয়৷ কার ডলার প্রয়োজন, কার কাছে ডলার আছে৷ তারা কম দামে কিনে অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারে৷ আবার তারা ডলার জমিয়ে রেখে দাম বাড়াতে পারে৷ এখানে নজরদারি দরকার৷ আবার কয়েকটি ব্যাংকের হাতে যদি ডলার চলে যায় তাহলে তারাও মনোপলি সৃষ্টি করতে পারে৷ এখন ব্যাংক আর গ্রাহক যেহেতু ডলারের দাম নির্ধারণ করবে তাই ওপেন মার্কেটের নামে মনোপলি থকলে ডলারের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে৷ এখানে নজরদারি থাকতে হবে৷ তবে পরিস্থিতি বুঝতে কয়েকদিন সময় লাগবে,'' বলে জানান তিনি৷

মো. নুরুল আমীন বলেন, ‘‘এখন সবচেয়ে বেশি ডলার আছে ইসলামী বাংকে৷ তারপরে কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক৷ অনেক ব্যাংক তাদের কাছ থেকে ডলার নিয়ে চলে৷ ফলে কোনো ব্যাংক যাতে রেমিট্যান্স হোল্ড করে না রাখতে পারেতার ব্যবস্থাপনা দরকার৷''

সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমার কাছে সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ায় এখনই ডলারের দাম খুব বেশি বাড়বে না৷ হয়তো কিছুটা বাড়বে৷ তবে মূল্যস্ফীতিটা আরেকটু কমে আসলে এটা করা হলে ভালো হতো৷ রিয়াল এফেকটিভ এক্সচেঞ্জ-এর যে হিসাব তার চেয়ে এখন ডলারের দাম এক-দুই টাকা কম-বেশি হচ্ছে৷ সেই বিবেচনায় ডলারের বাজার বেশ কিছুদিন ধরে স্থিতিশীলই আছে৷ ডলারের দাম বাড়বে, কমবে এটাই বাস্তবতা৷ দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে কমিয়ে রাখা হয়েছে সেটা সঠিক নীতি না৷''

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকেই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার নীতি কার্যকর হয়ে গেছে৷ আমাদের একাধিক টিম এর ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া মনিটরিং করছেন৷ ডলারের বাজার স্থিতিশীল আছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ