1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডলার সংকটে অনেকের ব্যবসা বন্ধ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ ডিসেম্বর ২০২৩

ডলার সংকটের কারণে ছোট ছোট আমদানিকারকেরা তাদের ব্যবসা নিয়ে বিপাকে আছেন৷ কেউবা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ আবার কেউ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাইরে থেকে উচ্চ মূল্যে ডলার কিনছেন আমদানির জন্য এলসি খুলতে৷

মার্কিন ডলার নোট৷
ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো ছোট আমদানিকারকদের এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না৷ছবি: Xie Zhengyi/dpa/picture alliance

ব্যাংকগুলো ছোট আমদানিকারকদের এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না৷ আবার বড় ব্যবসায়ীরাও প্রয়োজনীয় ডলার কিনতে পারছেন না৷ ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না৷

পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন গত সপ্তাহে কলাবাগান এলাকার রাস্তায় ডয়চে ভেলের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ভাই আপনারা কিছু লেখেন, আর তো ব্যবসা ধরে রাখতে পারছি না৷ ছোট খাট আমদানির ব্যবসা করি তা দিয়েই সংসার চলে৷ কিন্তু ব্যাংক থেকে অনেক দিন ধরেই ডলার পাচ্ছি না৷ বাইরে থেকে ডলার কিনেও এলসি খোলা অনেক কষ্টের৷ ব্যবসা করা যায় না৷

তার কথা, বড় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ম্যানেজ করতে পারেন৷ আমাদের পাত্তা দেয় না৷ কোনো কোনো ব্যাংক রাজি হলেও ডলারের সমপরিমাণ টাকা আবার ব্যাংকে জমা রাখতে বলছে৷ এলসির বিপরীতে ডলার দিচ্ছে না৷

ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা এখন আর এলসি খুলতে পারছি না৷ মৌলভীবাজারের অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা সরসরি ভোগ্যপণ্য আমদানি করেন৷ কিন্তু তাদের আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে৷ ব্যাংক আমাদের আর ডলার দিচ্ছে না৷ ডলার সংকটের কারণে ব্যবসা এখন মনোপলি হয়ে গেছে৷ বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে চলে গেছে আমদানি ব্যবসা৷’’

আমরা এখন আর এলসি খুলতে পারছি না: মো. বশির উদ্দিন

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘তারপরও আমাদের ব্যবসায়ীরা ২৫-৩০ হাজার ডলার ম্যানেজ করে ছোট ছোট চালানে আমদানি করে৷ সবাই মিলে আমরা এখন এইভাবে কম কম আমদানি করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখছি৷ এক লাখ ডলারের কছাকাছি হলেই আমরা আর আমদানি করতে পারি না৷ গত এক বছরে ব্যাংক থেকে আমি কোনো এলসি খুলতে পারি নাই৷’’

এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ডলার সংকটের কারণে যারা ছোট ছোট আমদানিকারক তাদের অনেকের ব্যবসাই বন্ধ হয়ে গেছে৷ তারা ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছেন না৷ যারা আমদানি করছেন তারা বাইরে থেকে চড়া দামে ডলার কিনে আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে৷ ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ছে৷বড় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছেন৷ কারণ তাদের তো নিজেদেরই ব্যাংক আছে৷ তারা ডলার ম্যানেজ করতে পারছেন৷ তবে তাও যে চাহিদা মতো ডলার তারা পাচ্ছেন তা মনে হয় না৷’’

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম কিছুটা কমালেও তার তেমন প্রভাব নেই খোলা বাজারে৷ আর ডলারের দাম কিছুটা কমলেও ব্যবসায়ী বলছেন, ডলার তো পেতে হবে৷ ডলার না পেলে ডলার দাম কমলেই বা কী?

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২১টি ব্যাংক এখন রীতিমতো ডলার সংকটে ভুগছে৷ কোনো কোনো ব্যাংকে ডলার নেই৷ ডলারের পাশাপাশি টাকার সংকটেও পড়ছে ব্যাংকগুলো ৷ গত বুধবার ব্যাংকগুলোর তারল্য-চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনেই কয়েকটি ব্যাংককে ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ধার দেয়৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) পণ্য আমদানিতে এলসি খোলা কমেছে ১১.২২ শতাংশ ৷ এই চার মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে মোট দুই হাজার ১৮২ কোটি ডলারের৷ যেখানে গত অর্থবছরের একই সময় এলসি খোলা হয়েছিল প্রায় দুই হাজার ৪৬৬ কোটি ডলারের৷ এ সময় ব্যাংকগুলোর এলসি নিষ্পত্তিও কমেছে ২৪ শতাংশের বেশি৷ ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ব্যাংকগুলো এলসি নিষ্পত্তি করেছিল দুই হাজার ৮৯৪ কোটি ডলারের৷ সেখান থেকে কমে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে তা নেমে এসেছে দুই হাজার ১৯৭ কোটি ডলারে৷

এদিকে ডলারের প্রধান উৎস রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সেও নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে৷ রিজার্ভ অব্যাহতভাবে কমছে৷ গত অক্টোবর মাসে ৩.৭৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ২৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন৷ আগের বছরের একই মাসে মোট ৪.৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল৷

ডলারের কারণে এলসি খুলতে না পারার অভিযোগ আমাদের কাছে নেই: মেজবাউল হক

This browser does not support the audio element.

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ আরো কমে ১৯.৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে৷ তবে দায়হীন বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলার৷

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংককে খাদ্য, সার ও জ্বালানি তেল আনতে একটা ডলার মজুত রাখতে হয়৷ সেটা তারা চেষ্টা করছে৷ এর বাইরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি খুলে পণ্য আমদানি সংকট আছে৷ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলার ক্রাইসিস আছে৷ রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স ডলারের মূল উৎস৷ সেখানে উন্নতি হচ্ছে না৷ বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আবার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে৷ আইএমএফ, এডিবির ঋণ এলে কিছু ডলার আসলেও তাতে সংকট কাটবে না৷’’

আর পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘আমাদের যে দায় দেনা আছে সেগুলো রিসিডিউল করা দরকার৷ সেটা করা গেলে ডলারের ওপর চাপ কমতো৷ এখন আমাদের লোনসহ নানা ধরনের দায় দেনার চাপ তো বাড়ছেই৷ ফলে ডলার সংকট কাটানো কঠিন৷ আইএমএফের কিস্তির ঋণ এবং এডিবি ওয়ার্ল্ড ও ব্যাংক থেকে এক-দেড় বিলিয়ন ডলার আসতে পারে৷ এর বাইরে তো বাড়তি ডলার আর কোনো পথ আমি দেখছি না৷ তাই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে সরকারকে আলাপ আলোচনা করে দায়-দেনা শোধ কমিয়ে ডলার বাঁচাতে হবে৷’’

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘‘ডলারের কারণে কেউ এলসি খুলতে পারছেন না এরকম কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই৷ তবে এটা ব্যাংক ও তাদের গ্রাহকের সম্পর্কের বিষয় হতে পারে৷ আমরা তো বলেছি অধিকাংশ ব্যাংকের কাছে এখন বেশি হোল্ডিং আছে কমিটমেন্টের চেয়ে৷ সুতরাং সে এলসি না খুলে বসে থাকবে কেন? ব্যাংকেরও কাস্টমার রিলেশনশিপের বিষয় আছে৷ পারফরমেন্সের বিষয় আছে৷ এগুলো ব্যাংকই ভালো বলতে পারবে৷’’

১ ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ