1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডলার সংকট: আমদানি ব্যয় কমানোর প্রভাব দেশীয় উৎপাদনে

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৯ নভেম্বর ২০২২

ডলার সংকটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ আর এর প্রভাব পড়বে দেশীয় উৎপাদনেও৷

গত মে মাসে ১৩৫টি পণ্যে শুল্ক বাড়ায় সরকার
গত মে মাসে ১৩৫টি পণ্যে শুল্ক বাড়ায় সরকারছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংকট কেটে যাবে৷

এদিকে সর্বশেষ আরও ৩৩০টি পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এর আগে গত মে মাসে ১৩৫টি পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হয়৷ ঠিকমতো এলসি খুলতে না পারার কারণে তৈরি পোশাকের উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা৷ ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো খাদ্যপণ্য ছাড়া এলসি খুলতে দিচ্ছে না৷ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি আরও কিছু পণ্যে মৌলিক চাহিদা তৈরি হয়েছে৷ সেইসব পণ্যও এখন আমদানি করা যাচ্ছে না৷ এমনকি বিদেশে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি-ও পরিশোধ করতে পারছেন না অভিভাবকরা৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলালউদ্দীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এভাবে গণহারে এলসি বন্ধ করে দেওয়াতে দেশীয় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে৷ কারণ আমাদের দেশে সব ধরনের উৎপাদনের সঙ্গে আমদানি জড়িত৷ ফলে উৎপাদন ব্যাহত হলে আমরা ভালো আছি, সেটা তো আর বলা যাবে না৷ অনেকেই বলছেন, আমরা এখন মাঝারি সংকটে আছি, আসলে আমরা মহাসংকটে আছি৷ হঠাৎ রেমিট্যান্স কমে গেল কেন? এটা খুঁজে বের করতে হবে৷ আপনি যখন বৈধ উপায়ে এলসি খুলতে দেবেন না, তখন ব্যবসায়ীরা হুন্ডি করে পণ্য আনবে৷ সরকার রাজস্ব হারাবে৷ এনবিআর যে পলিসি নিয়ে এগুচ্ছে, সেটা সঠিক বলে মনে হচ্ছে না৷ খুব সহসাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ আমি দেখতে পাচ্ছি না৷'

"আমাদের উৎপাদন সোজাসুজি ৩০ ভাগ কমে গেছে''

This browser does not support the audio element.

মোবাইল সরঞ্জামের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গত তিন মাস ধরে আমি কোনো পণ্যই আনতে পারছি না৷ কোনো ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না৷ ফলে কর্মচারীদের বিদায় করে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে৷ এক সময় তো আমাদের মৌলিক চাহিদা বলতে খাবারই ছিল৷ এখন তো মোবাইল ফোনও মৌলিক চাহিদার অংশ৷ এক বেলা না খেয়ে থাকলেও হাতের মোবাইলটা সবাই সচল দেখতে চায়৷ ইন্টারনেটটা চালু রাখতে চায়৷ এখন যদি মোবাইলের ব্যাটারি, চার্জার এগুলো আমরা দিতে না পারি তাহলে তো সংকট হবেই৷”

একটি নামকরা ব্যান্ডের বিদেশি প্রসাধনী সামগ্রী আমদানি দেশের একটি শীর্ষ শিল্প গ্রুপ৷ গত ছয় মাসে তারা বিদেশ থেকে কোন প্রসাধনী আমদানি করতে পারেনি৷ ওই গ্রুপের একজন কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এগুলো তো এখন কাউকে বলতেও পারছি না৷ পণ্য না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থাকবে কীভাবে? প্রতিষ্ঠান চলবে কীভাবে? এভাবে তো দিনের পর দিন চলতে পারে না৷ এর একটা সমাধান হওয়া দরকার৷”

গত আগস্টে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আমদানি নিরুৎসাহিত করা যায়, এমন ৩৩০টি পণ্যের তালিকা তৈরি করেছিল৷ এনবিআর সেই তালিকা ধরে এখন কাজ করছে৷ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এর আগে গত মে মাসে ১৩৫টি পণ্যে শুল্ক বাড়ায় সরকার৷ আরও কোন কোন পণ্যে শুল্ক বাড়ানো যায়, তার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করার জন্য গত ২০ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি)৷ কমিশন তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করে গত ৮ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেই তালিকা পাঠায় এনবিআরকে৷ গত ৭ নভেম্বর গণভবনে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় আমদানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হয়৷

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "খাদ্য ছাড়া সবকিছুর এলসি বন্ধ হয়ে গেছে একথা ঠিক নয়৷ কারণ আমি যদি ফাস্ট কোয়ার্টারের রিপোর্টটা দেখি, সেখানে ফুয়েল, ফুড ছাড়াও অনেক কিছু আমদানি হয়েছে৷ সেখানে কিছু জিনিস নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এগুলোর ইকনোমি কস্ট তো আছেই৷ তবে রিজার্ভের উপর যেভাবে চাপ পড়েছে সেটা কিছুটা না কমা পর্যন্ত এটা করতেই হবে৷ এলসি কমার কারণে রিজার্ভ যে প্রতি মাসে এক বিলিয়ন করে কমছিল সেটা হয়ত কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে৷ 

আসলে আমরা মহাসংকটে আছি:ড. মোহাম্মদ হেলালউদ্দীন

This browser does not support the audio element.

গত জুলাই, আগস্টে এসেছিল ৪ পয়েন্ট ১ বিলিয়ন রেমিট্যান্স৷ সেখানে সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে এসেছে ৩.১ বিলিয়ন রেমিট্যান্স৷ অর্থাৎ ১ বিলিয়ন রেমিট্যান্স কমে গেছে৷ এখন সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে তাতে যেসব রেমিটেন্স ইনফরমালে চলে গিয়েছিল সেগুলো যদি ফিরে আসে তাহলে একটা ইতিবাচক অবস্থায় আসবে৷ জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে বলে আমার মনে হয়৷”

গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: উদ্বেগের জায়গা ও করণীয়' শীর্ষক এক ওয়েবিনারে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, "চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতির চাপ কেবল বাংলাদেশের নয়, এটি বৈশ্বিক সংকট৷ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা মাঝারি পর্যায়ের৷ বাংলাদেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম সংকটে থাকা দেশ যেমন আছে, তেমনি বেশি সংকটে পড়া দেশও আছে৷ বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি যেখানে ৮.৯১ শতাংশ, সেখানে পাকিস্তানে ২০ শতাংশ এবং তুরস্কে ২৫ শতাংশের উপরে৷ আবার ভিয়েতনামে এ হার ৪.৩০ শতাংশ এবং ভারতে ৫.৭১ শতাংশ৷”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রেমিট্যান্সটা কোন দিকে যাচ্ছে, সেটার উপরই নির্ভর করবে সামনের সময়ের পরিস্থিতি৷ এখন যদি ইনফর্মাল চ্যানেলে চলে যাওয়া রেমিট্যান্স বৈধ পথে আসে তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে৷ ওই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লোক ধরে কোন লাভ নেই৷ আসল হোতাদের খুঁজে বের করতে হবে৷ তবে সমস্যাটা হচ্ছে, এলসি বন্ধ রাখলে এখান থেকে টাকা হুন্ডি হয়ে দুবাই যাবে৷ সেখান থেকে ডলার যাবে চীনে৷ ব্যবসায়ীরা পণ্য আনবেন৷ সরকার রাজস্ব হারাবে৷”

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাদের উৎপাদন সোজাসুজি ৩০ ভাগ কমে গেছে৷ কারণ বায়াররা যে পণ্য নিয়েছে সেটার মূল্য ঠিকভাবে পরিশোধ করছে না৷ আবার সেব পণ্য তৈরি আছে সেগুলোও এখন আর নিচ্ছে না৷ ছয় মাস পিছিয়ে দিচ্ছে৷ ফলে আমরা ব্যাক টু ব্যাক এলসির পয়সা দিতে পারছি না৷ ব্যাংকগুলোও আর এলসি খুলতে দিচ্ছে না৷ ফলে আমাদের উৎপাদনে এর প্রভাব পড়ছে৷ কীভাবে, কবে এর সমাধান মিলবে সেটা আমরা জানি না৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ