মিয়ানমারে ডানাওয়ালা ডাইনোসরের পালকে উকুনের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রথম ১০ কোটি বছর আগে উকুন জাতীয় কোনও পোকার সন্ধান পাওয়া গেল। তবে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, যে উকুনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তার চরিত্র এখনকার মতো নয়।
বিজ্ঞাপন
ডাইনোসরের উকুন বাছতো কে? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিজ্ঞানী মহলে। কারণ সম্প্রতি মিয়ানমারে প্রাচীন কিছু ডাইনোসরের ফসিলে উকুনের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেছেন, ডানাওয়ালা ডাইনোসরের পালকের মধ্যে বাসা বেঁধে রয়েছে উকুনের মতো দেখতে কিছু অতি সূক্ষ্ণ পোকা।
গল্পটা আসলে জুরাসিক পার্কের। স্টিফেন স্পিলবার্গের সেই ছবিতে ডায়নোসরের জিন পাওয়া গিয়েছিল গাছের রেজিনের মধ্যে জমে থাকা জীবাশ্মের মধ্যে। মিয়ানমারে ডাইনোসর বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করতে গিয়ে এমনই কিছু রেজিনে জমে যাওয়া ডানাওয়ালা ডাইনোসরের জীবাশ্মের সন্ধান পান। বেজিংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এরপর সেই জীবাশ্ম পরীক্ষা করে ডাইনোসরের পালকের মধ্যে ১০ রকমের পোকার সন্ধান পান। এরই মধ্যে উকুন জাতীয় কিছু রয়েছে বলেও তাঁদের সন্দেহ। যদিও এখন যে ধরনের উকুন দেখতে পাওয়া যায়, ১০ কোটি বছর আগের সেই পোকা ঠিক তেমন দেখতে নয়। তাদের আকার একটি চুলের দ্বিগুণ। মুখের আদলও অন্যরকম। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এরা কেবলমাত্র ডাইনোসরের পালকেই বাসা বাঁধতো। চামড়া পর্যন্ত পৌঁছতো না। তবে এর ফলে পালকের ষথেষ্ট ক্ষতি হতো বলেই তাঁদের ধারণা।
সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল নেচারে এই সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, মেসোজোয়িক যুগে এমন পোকার সন্ধান পাওয়া এক আশ্চর্য ঘটনা। এর ফলে ওই সময়ের বিজ্ঞানচর্চার এক নতুন অধ্যায় খুলে যাবে।
ডাইনোসরদের রাজা বার্লিনে
টিরানোসরাস রেক্স-এর সাজানো কঙ্কাল সারা বিশ্বে বেশি নেই, বড়জোর ৫০টি৷ এবার ইউরোপেও: টি-রেক্স আসছে বার্লিনের ‘মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টরি’-তে, আগামী তিন বছরের জন্য৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
সুবিশাল মাথা
টিরানোসরাস রেক্স-এর মাথাটা তার বাকি দেহের তুলনায় এত বেশি ভারী যে, সেটা আলাদা করে একটি ডিসপ্লে কেস-এ দেখাতে হয়! ওদিকে টি-রেক্স-এর দেহটাই হলো লম্বায় ১২ মিটার৷ দেড় মিটার লম্বা মাথার খুলিটির প্রায় ৯৮ শতাংশ অক্ষত ছিল, কাজেই এটা টি-রেক্স-এর সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ মাথার খুলি বলা চলে৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
এক্সপ্রেস ডেলিভারি
বার্লিনের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সংগ্রহশালার কর্মীরা মাত্র এক মাস সময় পেয়েছিলেন টি-রেক্স-এর কঙ্কালটি জোড়া দেবার জন্য৷ আদত কঙ্কালটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা রাজ্যে৷ পরে সেটি বাক্স করে সাগরপাড়ি দিয়ে বার্লিন পাঠানো হয়৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
টি-রেক্স সুপারস্টার
সাড়ে ছ’কোটি বছর আগে টিরানোসরাস রেক্স বিলুপ্ত হয় – তা সত্ত্বেও সে হাল আমলের পপ সংস্কৃতির এক সেলিব্রিটি! বিশেষ করে ‘জুরাসিক পার্ক’ ফিল্মটির কল্যাণে৷ তবে গবেষকদের ধারণা যে, টি-রেক্স যত না শিকারি ছিল, তার চেয়ে বেশি পচা মাংসের খোঁজে থাকত৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
বার্লিনের এই টি-রের্ক্সটির নাম ট্রিস্টান হলো কী করে
ডেনমার্কের বাসিন্দা নিলস নিলসেন চিরকালই ডাইনোসরদের ফ্যান৷ পরে হন লন্ডনের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার – এবং এতই সফল যে, টি-রেক্স-এর সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত কঙ্কালটি কিনতেও তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি৷ নিলসেন কঙ্কালটির নাম রাখেন নিজের ছেলের নামে: ট্রিস্টান৷
ছবি: Niels Nielsen
দৈত্যাকার জিরাফ
ব্রাকিওসরাস ব্রাঙ্কাই সবচেয়ে অতিকায় ডাইনোসরদের মধ্যে গণ্য৷ গণ হিসেবে সরোপড৷ তারও একটি কঙ্কাল রাখা আছে বার্লিনের ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়ামে৷ এই জীবটিও জুরাসিক আমলের৷
ছবি: DW/A. Kirchhoff
যে টিকটিকিকে ধরা যায় না
ডাইসালোটোসরাস মানে হলো ‘যে টিকটিকি-কে ধরা যায় না’৷ টি-রেক্স-এর মতো অতটা খ্যাত না হলেও, এই পাঁচ মিটার লম্বা জীবটিও ছিল টি-রেক্স-এর মতোই সর্বভূক, বিশেষ করে ছোট থাকাকালীন – অন্তত বিজ্ঞানীরা তাই বলেন৷
ছবি: Museum für Naturkunde Berlin
জীবাশ্ম-বিজ্ঞানের পথিকৃৎ
বার্লিনের ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম বহুদিন ধরেই ডাইনোসরদের হাড়গোড়ের খোঁজ চালাচ্ছে৷ বিংশ শতাব্দীর সূচনায় এই মিউজিয়াম থেকে বর্তমান তানজানিয়ার তেঙ্গাদুরু হিল এলাকায় একটি অভিযাত্রী দল পাঠানো হয়, যারা বার্লিনে মোট ২৫০ টন ‘ফসিল’ পাঠায়৷ সেই সব ফসিলের মধ্যে বেশ কিছু এখনও মিউজিয়ামের সেলারে রয়েছে ও তা নিয়ে গবেষণা চলেছে৷
ছবি: Museum für Naturkunde Berlin
বার্লিনের একটি নতুন আকর্ষণ
বার্লিনের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সংগ্রহশালা খোলা হয় ১৮৮৯ সালে৷ এটি জার্মানির বৃহত্তম ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম৷ টি-রেক্স-কে নিয়ে নতুন প্রদর্শনীটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সক্রিয় বিবর্তন’৷ বিশ্বের বৃহত্তম ডাইনোসর কঙ্কালের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ছোট ছোট পোকামাকড় ও মাছ, যার সব কিছুই বিবর্তনের প্রতীক৷ প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ দর্শক আসেন এই মিউজিয়ামে৷