1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলের জয়ের পিছনে কারণ

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিবির তার দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি, রাজনৈতিক কৌশল এবং ইস্যু নির্ধারণে সঠিক অবস্থানে থfকায় এই ফল পেয়েছে এবং তাদের আর্থিক সক্ষমতাও বেশি৷

ফলাফলের অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা
এবারের ডাকসু নির্বাচনে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী ছিলো। ফলে নির্বাচন ছিলো ব্যাপক বৈচিত্র্যময়।  ছবি: NurPhoto/IMAGO

ডাকসুতে বাংলাদেশ ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের জয়ে বিস্মিত নন বিশ্লেষকরা। বরং তারা মনে করেন, শিবির তার দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি, রাজনৈতিক কৌশল এবং ইস্যু নির্ধারণে সঠিক অবস্থানে থfকায় এই ফল পেয়েছে এবং তাদের আর্থিক সক্ষমতাও বেশি৷

এবারের ডাকসু নির্বাচনে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন এবং স্বতন্ত্র  মিলিয়ে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী ছিলো। ফলে নির্বাচন ছিলো ব্যাপক বৈচিত্র্যময়।  সন্ত্রাস দমন আইনে নিষিদ্ধ থাকায়  ছাত্রলীগ এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। তবে তাদের সমর্থক ভোটাররা ছিলেন, যা নিয়েকোনো কোনো প্রার্থীকথাও  বলেছেন।

জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইমলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বামপন্থি সাতটি ছাত্রসংগঠনের প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদ, এনসিপির ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ আরো অনেক দলের প্যানেল ছিলো এবারের ডাকসু নির্বাচনে।  ২০২৪-এর ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতারাও এবার প্রার্থী হয়েছিলেন। 

 

ডাকসুর ফলাফল

নির্বাচনে ডাকসুর ভিপি, জিএস এবং এজিএসসহ প্রায় সব পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে।হল সংসদগুলোতেও তাদের জয় জয়কার। আর কেন্দ্রীয় সংসদে তাদের জয় বিশাল ভোটের ব্যবধানে। ভিপি পদে ছাত্র শিবিরের আবু সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান পাঁচ হাজার ৭০৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন। জিএস পদে ছাত্র শিবিরের এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ছাত্রদলের তানভীর বারী হামিম। তিনি পেয়েছেন পাঁচ হাজার ২৮৩ ভোট। এজিএস পদে শিবিরের মুহা. মহিউদ্দিন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ। তিনি পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৪ ভোট। ডাকসুতে ১২টি সম্পাদকীয় পদসসহ মোট পদ ২৮টি। এর মধ্যে তিনটি বাদে আর সব পদেই তাদের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

বিশ্লেষকদের বক্তব্য

জাহাঙ্গীরনগর শ্বিবিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, "প্রকাশ্যে বা পরিচয় গোপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের মতো সংগঠিত আর কোনো ছাত্রসংঠন নাই। ছাত্রদল না, ছাত্রলীগ তো নই, বামপন্থিরা তো ১৪ ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। শিবির তার সংগন ছাড়াও অন্য সংগঠনে আছে, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে আছে। প্রকাশ্য এবং গোপন নেটওয়ার্ক তাদের অনেক বড়, তারা সহজেই সাধারণ ইস্যু তৈরি করতে পারে। ট্যাগিং করতে পারে। ফলে ডাকসুতে যে  শিবিরের উত্থান হবে এটা অনুমেয় ছিলো। যারা এটা ভাবতে পারেন নি তাদের চিন্তার গভীরতার স্বল্পতা ছিলো।”

তার মতে, "ডাকসুতে শিবিরের এই জয়ের তো অবশ্যই প্রভাব এবং ফলাফল আছে। এর প্রথম বিষয়টি হচ্ছে যে শিবির তো  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতহাসে এবারই প্রকাশ্যে বড় কোনো সফলতা পেল। গোপন সফলতা তাদের অনেক আছে। কিন্তু এর ফলে প্রথমত, যে প্রচারণার মাধ্যমে শিবির ডাকসুতে জিতেছে, একই ধরনের প্রচারণা যে জাতীয় নির্বাচনে হবে না তা কিন্তু বলা যায় না। আর আরেকটি বিষয় হল দেশে একটি সাংস্কৃতিক লড়াই শুরু হয়ে গেছে। যারা এখানো বিচ্ছিন্নভাবে লড়াই করছেন তাদের এক হওয়ার একটা প্রেক্ষাপট এই ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।”

শিবির ডাকসুকে দেখেছে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসাবে: ড. সাব্বির আহমেদ

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘‘এবারের ডাকসু নির্বাচনে আর যারা ছিলো তারা একটি অ্যান্টি-শিবির ন্যারেটিভ তৈরি করে প্রচার চালিয়েছে। একদিকে শিবির, আরেক দিকে অ্যান্টি-শিবির। কিন্তু এই অ্যান্টি-শিবির ন্যারেটিভ যারা তৈরি করেছে তারা বহু প্যানেলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। শিবির ডাকসুকে দেখেছে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসাবে। ওই ক্যানভাসটা তারা ব্যবহার করেছে। আর আবিদ-মেঘমল্লাররা বলেছে শিবির হলো স্বাধীনতাবিরোধী এদেরকে ভোট দেবেন না। এরা স্বাধীনতাবিরোধী এদের ভোট দেবেন না-প্রার্থীদের ব্যাপারে এই সরাসরি ভোট না দেয়ার আহ্বান ভোটাররা নেননি। এখানে ন্যারেটিভের একটা খেলা হয়েছে। অন্যরা ২৪-এর ক্যানভাসটি কাজে লাগাতে পারেনি। আর প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে কৌশল নির্ধারণে শিবির এগিয়ে ছিলো। তারা ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছে। সংগঠনটির অর্থও আছে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।  তাদের দীর্ঘদিনের কৌশল পরিকল্পনার ফল তারা পেয়েছে। আর শিবির , ছাত্রদল দীঘদিন নির্যাতন , অবদমনের শিকার হয়েছে। তার কারণে সহানুভূতি পেয়েছে। কিন্তু শিবির  ওই সময়ে বসে থাকেনি। তারা নানা কৌশলে ছাত্রদের মধ্যে কাজ করেছে, ভিন্নভাবে সংগঠনকে বিস্তৃত করেছে, শক্তিশালী করেছে।''

তিনি আরও বলেন," ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের এর আগে প্রকাশ্য কাজ না থাকায় সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে কোনো নেগেটিভ প্রচার করা কঠিন ছিলো। কিন্তু ২০০২ সালে শামনুন্নাহার হলে যে ছাত্রদল হামলা চালিয়ে ছিলো, ছাত্রীদের মধ্যে এটা কিন্তু এবার ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে।”

দক্ষিণপন্থিদের উত্থানের ব্যাপারে তিনি বলেন," এটা তো স্পষ্ট যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নির্বাচনের মাধ্যমে দক্ষিণপন্থিদের উত্থান হয়েছে। কিন্তু এখন দেখার বিষয় তারা কি করে? এটা কিন্তু বিএনপির জন্য একটা ওয়েক আপ কল। ১৯৯১ সালে সবাই মনে করেছিলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গেছে। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এখানো কিন্তু মনে করা হচ্ছে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। আর ডাকসুর ইতিহাস হলো যারা সরকারে থাকে ডাকসুতে তাদের বিরুদ্ধে রায় যায়। অতীতে বামপন্থিরা ডাকসুতে ভালো করেছে। ২০১৯ সালে নূর ভিপি হয়।”   

তারা ক্যাম্পাসে দখলদারীর ছাত্র রাজনীতির আশঙ্কা থেকে ভোট দিয়েছেন: মুশতাক হোসেন

This browser does not support the audio element.

ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন মনে করেন," শিবিরকে যারা ভোট দিয়েছেন তারা যে সবাই শিবিরের আদর্শ চিন্তা করে ভোট দিয়েছেন তা নয়, তারা ক্যাম্পাসে দখলদারীর ছাত্র রাজনীতির আশঙ্কা থেকে ভোট দিয়েছেন। কারণ তারা অতীতে অনেক ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্বের রাজনীতি দেখেছেন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের রাজনীতি দেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই বিবেচনায় শিবিরের রেকর্ড নাই। আর ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে তাদের বড় একটা ভূমিকা ছিলো। আর শিবিরের বিরুদ্ধে যে ছাত্র সংগঠনগুলো ছিলো তাদের পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব ছিলো। এটাও শিবিরকে সুযোগ করে দিয়েছে। ”

"তবে শিবির যত বেশি ভোট পেয়েই জয়ী হোক না কেন তারা ক্যাস্পসে যদি মুক্তিযুদ্ধেরবিরোধী অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে চায়, রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা চায়,  তাহলে এই ছাত্ররাই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। তারা এক পাও এগোতে পারবে না,” বলে মনে করেন তিনি।

সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মাসুদ কামালের মতেও ছাত্ররা নিবর্তনমূলক ছাত্ররাজনীতি ফের ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে শিবিরকে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন," তারা  মনে করেছে  ছাত্রদল জিতলে তারা ছাত্রলীগের মতোই ক্যাম্পাসে আধিপত্য ও দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। গেস্টরুম কালচার তৈরি করবে। সাধারণ ছাত্ররা নির্যাতনের শিকার হবে। সেই বিবেচনায় ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের ইমেজ ভালো ছিলো। আর ছাত্রদলের মধ্যে একট দম্ভ, হামবাড়া ভাব চলে এসেছে। যা ছাত্ররা খেয়াল করেছে। ছাত্রদল জিতলে তারাও ওই রকম হবে। তারও একটা জবাব দিয়েছে তারা।”

"আরেকট বিষয় হলো, ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, তাদের ওপর যত হামলা নির্যাতন হয়েছে তা কারা করেছ? বিএনপি করেছে। ছাত্রদল, যুবদল করেছে। তাদের সন্তানরা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। আর নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগের ভোটারও তো আছে। শুধুমাত্র জগন্নাথ হল ছাড়া অন্য হলের  ছাত্রলীগের ভোট শিবিরের বাক্সে গেছে বলে আমি মনে করি। মেয়েদের হলের ভোট দেখেও তাই মনে হয়েছে। তারা মনে করেছে শিবির তাদের জন্য নিরাপদ। ছাত্রদল ডাকসুতে আসলে তাদের ওপর  নির্যাতন হবে।  তবে সংখ্যালঘু ভোটাররা শিবিরকে তাদের জন্য নিরাপদ মনে করেনি, জগন্নাথ হলের ভোট তার প্রমাণ,” অভিমত তার।

জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তাক্ত হওয়া সেই সানজিদার কথা

03:37

This browser does not support the video element.

আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার মনে করেন," আসলে ছাত্রদের অধিকারকে গুরুত্ব না দিয়ে পুরনো রাজনীতিতে থাকার কারণেই ছাত্রদল পারেনি। আর শিবির ছাত্রদের অধিকারকেসামনে এনেছে। ” তার কথা," ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের কলাণে কাজ করেছে, কোচিং সেন্টার চালিয়েছে, মেস চালিয়েছে। ছাত্রদের নানাভাবে সহায়তা করেছে। ফলে তাদের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের কথা ছাত্রদের মাথায় থাকেনি। তারা তাদের কল্যাণকর বিবেচনা করেছে। তারা তার ফল পেয়েছে। আর এখান থেকে তরুণরা কেমন নেতা চায় তাও বোঝা গেছে। সেটার একটা আকাঙ্খা জাতীয় রাজনীতিতে থাকবে।   সামনে জাকসু, রাকসু, চাকসুসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও এর প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ