1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাকসু নির্বাচন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

৪ মার্চ ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে এখন পুরো দেশে চলছে আলোচনা৷ গণমাধ্যমেও ফলাও করে এই নির্বাচনের খবর প্রচারিত হচ্ছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোরও উৎসাহ অনেক৷ যেন আরেকটি জাতীয় নির্বাচন৷ কিন্তু কেন?

Bangladesch Universität Dhaka, studentische AnführerInnen | DUCSU Building
ছবি: DW/M.M. Rahman

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ১৯৮৯ সালে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ তিনি এখন গণফোরামের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷ এবার সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘ডাকসুকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ হিসেবে বিবেচনা করলে এর গুরুত্ব বোঝা যাবেনা৷ ডাকসু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করেছে৷ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন, স্বাধীনতার আন্দোলন - সব আন্দোলনেই ডাকসু নেতৃত্ব দিয়েছে৷’’

ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনীতির অচলাবস্থা ও নেতৃত্বের সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ সৃষ্টি হবে: সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এখান থেকেই জাতীয় রাজনীতির যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে৷ তাঁরা দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির একটা কারখানা হলো ডাকসু৷ শুধু রাজনীতি নয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এবং উন্নয়নের ধারায় ডাকসু সবসময়ই সক্রিয় ছিল৷ তারা ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছে সব সময়৷ কথা বলেছে শিক্ষা এবং শিক্ষার অধিকার নিয়ে৷ আর এসব কারণেই ডাকসু এত গুরুত্বপূর্ণ, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এত আলোচনা৷ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় আলোচনাটা আরো একটু বেশি৷’’ ডাকসুর সাবেক এই ভিপি মনে করেন, ‘‘গত ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে এক ধরণের নেতৃত্বশূণ্যতা তৈরি হয়েছে৷ তরুণ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসছেনা৷ আর ডাকসু নির্বাচন এত দিন না হওয়ায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ ছাত্র সংসদগুলোতেও কোনো নির্বাচন হয়নি৷ ফলে আঞ্চলিক এবং স্থানীয় পর্যায়েও তরুণ নেতৃত্বের বিকাশ হয়নি৷’’

‘বড় ধরণের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে’ 

ডাকসু নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের মতো আগের দিনেই ভোট হয়ে না যায়, তাহলে সরকার বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে: খায়রুল কবীর খোকন

This browser does not support the audio element.

১৯৯০ সালে সর্বশেষ   ডাকসু নির্বাচন হয়৷ ওই নির্বাচনে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছিলেন খায়রুল কবীর খোকন৷ তিনি সাবেক সংসদ সদস্য এবং এখন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাকসুর ভূমিকা আছে৷ বিশেষ করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে ডাকসুর ভূমিকা উজ্জ্বল৷ ডাকসু দেশে গণতন্ত্র এবং ইতিবাচক ধারায় সবসময় ভূমিকা রেখেছে৷ ছাত্রদের অধিকার আদায়ে ডাকসু যেমন ভূমিকা রেখেছে, তেমনি দেশের মানুষের অধিকারের জন্যও তারা সক্রিয় থেকেছে৷ বিষয়টি এমন যে দেশের মানুষ কোনো অন্যায় আর অবিচারের প্রতিবাদ দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডাকসুর দিকে তাকিয়ে থেকেছে সবসময়৷ আর এ কারণেই ডাকসুকে বলা হয় সেকেন্ড পার্লামেন্ট৷’’

খোকন বলেন, ‘‘ডাকসু একটি সার্বজনীন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান৷ এখানে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীন মত প্রকাশের চর্চা হয়৷ এখানকার নির্বাচনে সবাই স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন৷ আমাদের দেশে নির্বাচনি ব্যবস্থা বলতে গেলে ভেঙে পড়েছে৷ ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি৷ আগের রাতে ভোট হয়ে গেছে৷ তাই ডাকসু নির্বাচনের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি৷ এখানে যদি শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন তাহলে বড় ধরণের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে৷ ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার খেসারত দিতে হতে পারে এই সরকারকে৷ ২৮ বছর পর তাই এই ডাকসু নির্বাচন আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷’’

‘গবেষণার বিশ্ববিদ্যালয়’

সময় এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিক এবং গবেষণার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার: সাদ্দাম হোসেন

This browser does not support the audio element.

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগ মনোনীত এজিএস পদপ্রার্থী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সবার কেন এত আগ্রহ তার জবাব আছে ইতিহাসে৷ এই জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডাকসুর অবদান সবার জানা৷ সামরিক ও স্বেরশাসনের বিরুদ্ধেও ডাকসু লড়াই করেছে৷ এখানে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরাই পরবর্তীতে রাজনীতি, প্রশাসনসহ রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দিয়েছেন৷’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘একটি রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অবদানকে সম্মান জানিয়েই বলছি, এখন সময় এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিক এবং গবেষণার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার৷’’

বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হয়েছে যে, ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যগত কিছু কারণে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এত আলোচনা, এত আগ্রহ৷ এই কারণগুলো হচ্ছে:

১. বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীকার আন্দোলন স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আদোলনে ডাকসু সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছে৷

২. ডাকসু নেতৃত্ব তৈরি করে৷

৩. গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার থাকে৷

৪. ডাকসু একটি স্বাধীন এবং সার্বজনীন ফোরাম৷

৫. ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করে৷

এর সঙ্গে ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে৷ মনে করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে নতুন কোনো ইতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷

১১ মার্চের ডাকসু নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎপর সব ছাত্র সংগঠন কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদে প্রার্থী দিয়েছে৷ দলীয়ভাবে নির্বাচন না হলেও ছাত্র সংগঠনগুলো প্যানেল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে৷ নির্বাচন হবে ডাকসুসহ ১৮টি হলের ছাত্র সংসদে৷ ডাকসুর ২৫টি পদে ২২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ মনে করেন, ‘‘এবারের   ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে  বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অচলাবস্থা চলছে, নেতৃত্বের সংকট চলছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ সৃষ্টি হবে, যদি নির্বাচন ধারাবাহিকভাবে হয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের সবচেয়ে সচেতন অংশ৷ তারা সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছে৷ এবারও বলবে আশা করি৷’’

আর খায়রুল কবীর খোকন আশা করেন, ‘‘ডাকসু নির্বাচনে যদি জাতীয় নির্বাচনের মতো ভোটের আগের দিনেই ভোট হয়ে না যায়, তাহলে সরকার বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ