ডাকসু নির্বাচন: ভোটকেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের দাবি উপেক্ষা করে হলেই ভোটকেন্দ্র রেখে সোমবার ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়৷ তফসিল অনুযায়ী ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বিতরণ৷ ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই ৷ ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে প্রার্থী তালিকা৷ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় সময় ২ মার্চ৷ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩ মার্চ৷ সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৫ মার্চ। ভোট গ্রহণ ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত৷
এরই মধ্যে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচন পেছানোর দাবিতে মিছিল করেছে৷ তাদের দাবি, হলে ভোট কেন্দ্র নয়, ভোট কেন্দ্র করতে হবে হলের বাইরে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক অথবা অ্যাকাডেমিক ভবনে৷ আর হল ও ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ হলগুলো এখন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলে রয়েছে৷ তারাই নিয়ন্ত্রণ করে৷ যারা হলে থাকেন না, তারা হলে ভোট দিতে যেতে ভয় পাবেন৷ আর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলে থাকায় হলে ভোটকেন্দ্র হলে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই ভোট হবে৷ ছাত্রদলকে রুটিন করে মিছিল মিটিং করতে দেবে৷ কিন্তু নির্বাচনে কারচুপি করে ফল তাদের পক্ষে নিয়ে যাবে৷''
সহাবস্থানের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘হল ও ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ হলে তারা থাকতে পারছেন না৷ ৩০ ডিসেম্বর জরুহুল হক হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি বোরহান উদ্দিন শিপন নির্যাতনের শিকার হন৷''
নির্বাচন পেছানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যেভাবে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে এত অল্প সময়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়৷ আগে পরিবেশ নিশ্চিত করে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে৷ নির্বাচন কমিশনের ১৬ জন শিক্ষকের সবাই আওয়ামীপন্থি শিক্ষক৷ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে৷ তারপর নির্বাচন৷ তা না হলে এটা একটা সাজানো নাটক হবে৷''
ছাত্র ইউনিয়নও সহাবস্থান ও হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র চায়৷ তবে তারা নির্বাচন পেছানোর পক্ষে নয়৷ তারা যথাসময়েই নির্বাচন চায়৷ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচন করার আদেশ আছে উচ্চ আদালতের৷ নির্বাচন পেছানো হোক তা আমরা চাই না৷ কিন্তু ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে নেয়া এবং সহাবস্থানের দাবি পূরণ না করেই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে৷ আমরা আমাদের দাবি আদায়ে আন্দোলনে আছি৷ আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিক হলে আইনের মধ্যে থেকেই তারা নির্বাচনের আগে ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে প্রশাসনিক বা অ্যাকাডেমিক ভবনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ আর তারা চাইলে এর মধ্যেই সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘৭০ ভাগ শিক্ষার্থী সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন৷ হলগুলোতে তারা চাপের মুখে থাকেন৷ ফেসবুকে লেখার জন্য তাদের পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়৷ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়৷ বঙ্গবন্ধু হলে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷ সব মিলিয়ে হলে যারা আছেন, তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই৷ আবার হলের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী থাকেন, তারা হলের এই পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত নয়৷ ফলে যে-কোনো ভয়ভীতির কারণে তারা হলে ভোট দিতে না-ও যেতে পারেন৷''
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন মনে করেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সহাবস্থান আছে৷ তাই প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠনই আসলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তারা যেসব কথা বলছে, তা ইস্যু সৃষ্টির জন্য বলছে৷ ইস্যু সৃষ্টি করে তারা সুবিধা নিতে চায়৷ যারা এসব বলছে, তাদের অনেক নেতার ছাত্রত্ব নেই৷ তারা প্রার্থী হতে পারবেন না, ভোট দিতে পারবেন না৷ নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন৷ কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্বাচন চায়৷ তারা ডাকসুতে সঠিক এবং যোগ্য নেতৃত্ব দেখতে চায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘সহাবস্থানের কোনো সংকট বিশ্ববিদ্যলয়ে নেই৷ আচরণবিধি কমিটি আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হচ্ছে৷ কে কী করছেন তা গোপন থাকছে না৷ হলে ভোট দিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো আপত্তি নেই৷ আর কোনো অসুবিধাও নেই৷ যারা সংকটের কথা বলছেন, তারা মূলত প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কায় এসব কথা বলছেন৷''
নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে একটি আচরণবিধি কমিটি করা হয়েছে৷ সেই কামিটির সদস্য ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভুঁইয়া৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডাকসু'র একটি ঐতিহ্য হলো হলে ভোট কেন্দ্র৷ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ছাড়াও একই সঙ্গে হল সংসদের নির্বাচনও হয়৷ ডাকসুর ঐতিহ্য আমরা কেন ভাঙবো ? তাই হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র নেয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখি না৷ আর কেউ যদি হলে গিয়ে ভোট দিতে ভয় পায়, তাহলে নির্বাচিত হলে হলে যাবে কিভাবে?''
সহাবস্থানের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এই কথাটি রাজনৈতিক চিন্তাপ্রসূত৷ ডাকসু নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে হয়৷ এখানে বিভিন্ন দলের অনুসারী ছাত্র সংগঠন আছে সত্য, কিন্তু নির্বাচনটি হয় স্বতন্ত্র৷ যারা নির্বাচন করেন, তারা তাদের সুবিধার জন্য প্যানেল করে নেন৷ যারা সহাবস্থানের কথা বলছে, তারা হলের বৈধ ছাত্র-ছাত্রী কিনা, যদি হন এবং হলে থাকতে না পারেন, তাহলে প্রভোস্ট মহোদয়দের লিখিতভাবে জানালেই তারা ব্যবস্থা নেবেন৷কিন্তু এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কোথায়?''
তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচনি প্রচারে হলে বা ক্যাম্পাসে বাধা পেলে রিটার্নিং অফিসারদের জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন৷ আচরণবিধি আছে৷ আচরণবিধি কমিটি আছে৷ নির্বাচনে কী হবে, ভোট রিগিং হবে এটা তো হাইপোথেটিক্যাল কথা৷ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা উচিত৷''
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচন হয়৷ ১৯৭১ সালের পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাত বার৷