1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাকসু নির্বাচন: ভোটকেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আগামী ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন৷ তফসিল ঘোষণার ফলে ২৮ বছর পর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে৷

Bangladesch Universität Dhaka, studentische AnführerInnen | DUCSU Building
ছবি: DW/M.M. Rahman

অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের দাবি উপেক্ষা করে হলেই ভোটকেন্দ্র রেখে সোমবার ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়৷ তফসিল অনুযায়ী ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বিতরণ৷ ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই ৷ ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে প্রার্থী তালিকা৷ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় সময় ২ মার্চ৷  চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩ মার্চ৷ সম্পূরক  ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৫ মার্চ। ভোট গ্রহণ ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত৷

এরই মধ্যে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচন পেছানোর দাবিতে মিছিল করেছে৷ তাদের দাবি, হলে ভোট কেন্দ্র নয়, ভোট কেন্দ্র করতে হবে হলের বাইরে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক অথবা অ্যাকাডেমিক ভবনে৷ আর হল ও ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদি তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ হলগুলো এখন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলে রয়েছে৷ তারাই নিয়ন্ত্রণ করে৷ যারা হলে থাকেন না, তারা হলে ভোট দিতে যেতে ভয় পাবেন৷ আর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলে থাকায় হলে ভোটকেন্দ্র হলে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই ভোট হবে৷ ছাত্রদলকে রুটিন করে মিছিল মিটিং করতে দেবে৷ কিন্তু নির্বাচনে কারচুপি করে ফল তাদের পক্ষে নিয়ে যাবে৷''

মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ

This browser does not support the audio element.

সহাবস্থানের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘হল ও ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ হলে তারা থাকতে পারছেন না৷ ৩০ ডিসেম্বর জরুহুল হক হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি বোরহান উদ্দিন শিপন নির্যাতনের শিকার হন৷''

নির্বাচন পেছানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যেভাবে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে এত অল্প সময়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়৷ আগে পরিবেশ নিশ্চিত করে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে৷ নির্বাচন কমিশনের ১৬ জন শিক্ষকের সবাই আওয়ামীপন্থি শিক্ষক৷ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে৷ তারপর নির্বাচন৷ তা না হলে এটা একটা সাজানো নাটক হবে৷''

ছাত্র ইউনিয়নও সহাবস্থান ও হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র চায়৷ তবে তারা নির্বাচন পেছানোর পক্ষে নয়৷ তারা যথাসময়েই নির্বাচন চায়৷ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন,  ‘‘৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচন করার আদেশ আছে উচ্চ আদালতের৷ নির্বাচন পেছানো হোক তা আমরা চাই না৷ কিন্তু ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে নেয়া এবং সহাবস্থানের দাবি পূরণ না করেই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে৷ আমরা আমাদের দাবি আদায়ে আন্দোলনে আছি৷ আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিক হলে আইনের মধ্যে থেকেই তারা নির্বাচনের আগে ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে প্রশাসনিক বা অ্যাকাডেমিক ভবনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ আর তারা চাইলে এর মধ্যেই সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন৷''

মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘৭০ ভাগ শিক্ষার্থী সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন৷ হলগুলোতে তারা চাপের মুখে থাকেন৷ ফেসবুকে লেখার জন্য তাদের পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়া হয়৷ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়৷ বঙ্গবন্ধু হলে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷ সব মিলিয়ে হলে যারা আছেন, তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই৷ আবার হলের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী থাকেন, তারা হলের এই পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত নয়৷ ফলে যে-কোনো ভয়ভীতির কারণে তারা হলে ভোট দিতে না-ও যেতে পারেন৷''

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন মনে করেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সহাবস্থান আছে৷ তাই প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠনই আসলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তারা যেসব কথা বলছে, তা ইস্যু সৃষ্টির জন্য বলছে৷ ইস্যু সৃষ্টি করে তারা সুবিধা নিতে চায়৷ যারা এসব বলছে, তাদের অনেক নেতার ছাত্রত্ব নেই৷ তারা প্রার্থী হতে পারবেন না, ভোট দিতে পারবেন না৷ নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন৷ কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্বাচন চায়৷ তারা ডাকসুতে সঠিক এবং যোগ্য নেতৃত্ব দেখতে চায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘সহাবস্থানের কোনো সংকট বিশ্ববিদ্যলয়ে নেই৷ আচরণবিধি কমিটি আছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হচ্ছে৷ কে কী করছেন তা গোপন থাকছে না৷ হলে ভোট দিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো আপত্তি নেই৷ আর কোনো অসুবিধাও নেই৷ যারা সংকটের কথা বলছেন, তারা মূলত প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কায় এসব কথা বলছেন৷''

নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে একটি আচরণবিধি কমিটি করা হয়েছে৷ সেই কামিটির সদস্য ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভুঁইয়া৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডাকসু'র একটি ঐতিহ্য হলো হলে ভোট কেন্দ্র৷ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ছাড়াও একই সঙ্গে হল সংসদের নির্বাচনও হয়৷ ডাকসুর ঐতিহ্য আমরা কেন ভাঙবো ? তাই হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র নেয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখি না৷ আর কেউ যদি হলে গিয়ে ভোট দিতে ভয় পায়, তাহলে নির্বাচিত হলে হলে যাবে কিভাবে?''

সাইফুল আলম ভুইয়াঁ

This browser does not support the audio element.

সহাবস্থানের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এই কথাটি রাজনৈতিক চিন্তাপ্রসূত৷ ডাকসু নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে হয়৷ এখানে বিভিন্ন দলের অনুসারী ছাত্র সংগঠন আছে সত্য, কিন্তু নির্বাচনটি হয় স্বতন্ত্র৷ যারা নির্বাচন করেন, তারা তাদের সুবিধার জন্য প্যানেল করে নেন৷ যারা সহাবস্থানের কথা বলছে, তারা হলের বৈধ ছাত্র-ছাত্রী কিনা, যদি হন এবং হলে থাকতে না পারেন, তাহলে প্রভোস্ট মহোদয়দের লিখিতভাবে জানালেই তারা ব্যবস্থা নেবেন৷কিন্তু এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কোথায়?''

তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচনি প্রচারে হলে বা ক্যাম্পাসে বাধা পেলে রিটার্নিং অফিসারদের জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন৷ আচরণবিধি আছে৷ আচরণবিধি কমিটি আছে৷ নির্বাচনে কী হবে, ভোট রিগিং হবে এটা তো হাইপোথেটিক্যাল কথা৷ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা উচিত৷''

প্রসঙ্গত,  সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু  নির্বাচন হয়৷ ১৯৭১ সালের পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাত বার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ