ভারতের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বাণিজ্যিক মুনাফা বাড়াতে হামেশাই অনৈতিক চিকিৎসা পদ্ধতি নেয়া হচ্ছে৷ জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হচ্ছে মেডিক্যাল কারণ ছাড়াই৷ কর্নাটকের গরিব মহিলাদের দুর্ভাগ্যের কাহিনি উঠে এসেছে তদন্ত রিপোর্টে৷
বিজ্ঞাপন
প্রচলিত বিশ্বাস ডাক্তারি পেশার মতো মহত পেশা আর হয় না৷ অথচ ক্রমশ সেই পেশাতেই কালির ছিঁটে পড়ছে৷ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বেসরকারি ও কর্পোরেট চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই নিয়ে হৈ চৈ কম হচ্ছে না৷ ব্যবসায়িক মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে অনৈতিক মেডিক্যাল পদ্ধতির প্রয়োগ চলছে আকছার৷ সম্প্রতি ভারতের কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রে গ্রামে স্ত্রীরোগে আক্রান্ত হতদরিদ্র মহিলাদের যথেষ্ট মেডিক্যাল যৌক্তিকতা ছাড়াই তড়িঘড়ি অপারেশন করে জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির তদন্ত রিপোর্টে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা উঠে এসেছে৷
গত দু-এক বছরে অন্তত ২২৫৮টি হিস্টারেক্টমি অপারেশন করা হয়েছে যথেষ্ট মেডিক্যাল কারণ এবং মেডিক্যাল অনুশাসনবিধি ছাড়াই৷ রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলার ডেপুটি কমিশনার উজ্জ্বল ঘোষ অভিযুক্ত হাসপাতালগুলির লাইসেন্স বাতিল করার আদেশ দেন৷ কর্নাটক মেডিক্যাল কাউন্সিলকে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যেন পেশাগত নৈতিকতা চিকিতত্সা অনুশাসনবিধি লঙ্ঘন এবং অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ কারণ এর খেসারত দিতে হচ্ছে কর্নাটকের গ্রামাঞ্চলের অনেক অল্পবয়সি নারীদের৷ তাঁদের জীবনে অকালে নেমে এসেছে অন্ধকার৷
ভারতে যক্ষ্মার ভয়াবহতা
ভারতে প্রতি তিন মিনিটে যক্ষ্মা বা টিবি-তে মারা যান দুই জন৷ সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ২০১২ সালে ডিআরটিবি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজারে৷
ছবি: DW/B. Das
যক্ষ্মা রোগের সংক্রমণ যেখানে বেশি
বিশ্বে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভারতে৷ বিশ্বের মোট টিবি রোগীর ২৬ ভাগই এই দেশে৷ যক্ষ্মা সংক্রামক প্রাণঘাতী রোগ৷ দক্ষিণ এশীয় এই দেশে প্রতি তিন মিনিটে যক্ষ্মায় দুই জন মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: DW/B. Das
লাখো মানুষ আক্রান্ত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে ২০১২ সালে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৮৬ লাখ এবং মারা গেছে ১৩ লাখ রোগী৷ গত দশ বছরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে মাত্র দুই শতাংশ৷
ছবি: DW/B. Das
ডিআরটিবি বা ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্মা জীবাণু
রেজিসটেন্স টু ড্রাগস বা ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্মা জীবাণু আরো সমস্যার সৃষ্টি করেছে৷ অর্থাৎ অনেক রোগী এমন সব ওষুধ ব্যবহার করে যার ফলে জীবাণুর উপর ওসব ওষুধের কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না৷ ২০১২ সালে ডিআরটিবি-তে সমস্যাক্রান্ত হয়েছে সাড়ে চার লাখ মানুষ৷ এর মধ্যে অর্ধেকেরই বাস ভারত, চীন ও রাশিয়াতে৷ বিশ্বে মাল্টি ড্রাগ রেজিসটেন্স টিবিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার৷
ছবি: DW/B. Das
ভারতে এমডিআর-টিবি বাড়ছে
চিকিৎসার ক্ষেত্রে সঠিক মান বজায় না রাখার কারণে ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্মা-জীবাণুর উদ্ভব ঘটছে৷ কোনো একটি বিশেষ ওষুধ প্রতিরোধ নয় বরং নানা ওষুধ প্রতিরোধ করতে পারছে এ জীবাণু৷ এসব জীবাণুকে বিশেষজ্ঞরা মাল্টিড্রাগ-রেজিস্টেন্স টিবি বা এমডিআর-টিবি হিসেবে অভিহিত করে থাকেন৷ ২০১২ সালে এ কারণে ভারতে নতুন রোগী হয়েছে ৬৪ হাজার৷
ছবি: DW/B. Das
মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা
ইনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মনিপুর রাজ্যের এমডিআর-টিবি রোগী৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিআরটিবি মনুষ্যসৃষ্ট, যা যক্ষ্মার সঠিক চিকিৎসা না করার ফলে হয়৷
ছবি: DW/B. Das
বদঅভ্যাস
ম্যাকগ্রিল আন্তর্জাতিক যক্ষ্মা কেন্দ্রের মধুকর পাই জানালেন, ভুল এবং নিম্ন মানের ওষুধ, সঠিক পরীক্ষা না করার কারণে এমডিআর টিবি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷
ছবি: DW/B. Das
চিকিৎসা
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ভারতে বিনামূল্যে টিবি-র চিকিৎসা দেয়া হয়, যার আওতায় আছে দেশটির ১৫ লাখ রোগী৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানালেন, আক্রান্ত অর্ধেক রোগী প্রাইভেট সেক্টরে চিকিৎসকদের কাছে যান, যারা এই রোগের চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত নন৷
ছবি: DW/B. Das
7 ছবি1 | 7
স্ত্রীরোগের উপসর্গ নিয়ে গ্রামের গরিব পরিবারের বৌ-ঝিরা হাসপাতালে যান ডাক্তার দেখাতে৷ যেমন পিঙ্কু বাই৷ তাঁর বিয়ে হয়েছিল ১৩ বছর বয়সে৷ ১৯ বছরের মধ্যেই তিনটি সন্তানের জননী৷ ২৪ বছরে তলপেটে যন্ত্রণা, যোনিপথে তরল স্রাব নিসরণের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যান ডাক্তার দেখাতে৷ ডাক্তাররা বলেন, তার দেহে স্বাস্থ্য জটিলতা রয়েছে৷ জরায়ু ফুলে গেছে৷ অবিলম্বে হিস্টারেক্টমি অপারেশন করে জরায়ু কেটে বাদ না দিলে জীবনসংশয় হতে পারে৷ জীবনের ভয় দেখাতে পিঙ্কু বাইয়ের দুশ্চিন্তা – মরে গেলে কে তাঁর বাচ্চাগুলোকে দেখবে? অতি গরিব পরিবার৷ তাই ধারদেনা করে অপারেশনের খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা হাসপাতালের বিল দিতে হয়৷ তবু সে পুরোপরি সুস্থ হয়ে উঠেনি৷ কোমরে ব্যথা, ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা৷ দৃষ্টিশক্তি কমজোরি হওয়ায় সে কাহিল৷ কর্নাটকের লাম্বানি জনজাতির নারীদেরও একই দশা৷ একদিকে নিরক্ষতা, দারিদ্র৷ অন্যদিকে চিকিত্সকদের অর্থ লালসায় পেশাগত নৈতিকতার শ্বাসরুদ্ধ৷ নির্দিষ্ট চিকিত্সাবিধির পরোয়া না করে দ্রুত বাণিজ্যিক স্বার্থসিদ্ধি৷ কোনো কোনো রোগিণীর ক্ষেত্রে মূত্রনালিতে সংক্রমণ হলেও, তার নিদান হিসেবে জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয়৷ বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা, টেস্ট না করেই৷ একই দিনে চারজনের হিস্টারেক্টমি অপারেশন করে গর্ভাশয় কেটে বাদ দেওয়া হয়৷ এদের মধ্যে একজন মারা যায়৷
ক্যানসারের দশ লক্ষণ
ক্যানসারের কিছু লক্ষণ আছে, যা মানুষ নিজের অজান্তেই এড়িয়ে যায়৷ অথচ রোগবালাই শুরুতে ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়৷ তাই আজ জানাবো ক্যানসারের দশটি লক্ষণের কথা, যেগুলো সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/ Alexander Raths
ঘনঘন কাশি
মাঝে মাঝে কাশি হলে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই৷ কিন্তু ঘনঘন কাশি কিংবা কফের সঙ্গে রক্ত বের হলে, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো ব্যাপার বৈকি! বেশিরভাগ কাশি বিপদের না হলেও কিছুক্ষেত্রে তা ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
ছবি: Fotolia/Brenda Carson
অন্ত্রের অভ্যাসে ঘনঘন পরিবর্তন
আপনার অন্ত্রের মধ্যে নড়াচড়া যদি সহজ না হয় এবং মল স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কিংবা কোনোভাবে অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে তা মলাশয়ে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ তাই এক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Jiri Hera
মূত্রথলির অভ্যাসে পরিবর্তন
যদি কারো মূত্র বা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে তা মূত্রথলি বা কিডনির ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আবার মূত্রনালীতে সংক্রমণের কারণেও এটা হতে পারে৷ তাই সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই শ্রেয়৷
ছবি: imago/eyevisto
ঘনঘন অপ্রত্যাশিত ব্যথা
অধিকাংশ ব্যথাই ক্যানসারের লক্ষণ নয়, তবে ঘনঘন ব্যথা হলে তা চিন্তার বিষয়৷ তবে ক্রমাগত মাথাব্যথা হলে আবার এটা ভাবার কারণ নেই যে, কারো বুঝি ব্রেইন ক্যানসার হয়েছে৷ কিন্তু বুকে ক্রমাগত এবং নিয়মিত ব্যথা ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা তলপেটে ক্রমাগত ব্যথা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Adam Gregor
আঁচিল বা তিলের আকৃতিতে পরিবর্তন
সব আঁচিল বা তিলের সঙ্গে টিউমারের সম্পর্ক নেই৷ তবে কোনো আঁচিল বা তিলের আকৃতি ক্রমাগত পরিবর্তন হতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই ভালো৷
ছবি: Fotolia/ Alexander Raths
ক্ষতস্থান না শুকালে
আপনার শরীরে কোনো ক্ষত যদি তিন সপ্তাহেও না শুকায়, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ থাকতে পারে৷ এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাই দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Karl-Josef Hildenbrand
অপ্রত্যাশিত রক্তপাত
মাসিকের সময় ছাড়া অন্য সময়ে যোনি থেকে রক্তপাত সার্ভিকাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ আর মলদ্বার থেকে রক্তপাতও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/absolutimages
অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমা
অনেকেই ওজন কমানোর জন্য নানারকম চেষ্টা করেন৷ কিন্তু যদি কোনোরকম চেষ্টা ছাড়াই কারো ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে, তাহলে সেটা বিপদের লক্ষণ৷
ছবি: Fotolia/rico287
অপ্রত্যাশিত স্ফীতি
শরীরের কোথাও কোনো অপ্রত্যাশিত স্ফীতি বা কোনো ফোলা স্থানের আকার পরিবর্তন হতে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন৷ মেয়েদের স্তনের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডের উপস্থিতিও কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ৷
ছবি: picture alliance/CHROMORANGE
ঘনঘন গিলতে সমস্যা হলে
এটা দু’ধরনের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷ ঘাড় এবং খাদ্যনালীর ক্যানসার৷ তাই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান৷ দ্রষ্টব্য: ছবিঘরটি তৈরিতে ‘‘ওম্যান’স হেল্থ’’ ম্যাগাজিন থেকে তথ্য সহায়তা নেয়া হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Dasha Petrenko
10 ছবি1 | 10
কর্নাটকের কেআইসি নামে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক এনজিও অভিযুক্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয়৷ দোষি ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করার দাবি জানায়৷ এই এজিও-র সদস্যা টিনা জেভিয়ার মনে করেন, মহিলাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ডাক্তারের কাছে টাকা রোজগার করাই প্রধান৷ ইদানীং কর্নাটকের সংলগ্ন মহারাষ্ট্রের ওসমানাবাদ জেলাও হিস্টারেক্টমি অপারেশনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷ আশপাশের গাঁ-গঞ্জ থেকে রোগিণীদের ভিড় বাড়ছে৷
কেন বাড়ছে? এর প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করেছেন সমাজসেবী রূপা হাসান৷ তিনি বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশই মুখ্যত এরজন্য দায়ী৷ ঐ সব গ্রামের প্রচলিত রীতিনীতি, আচার-বিচার, সংস্কার একেবারে আদ্যিকালের৷ যেমন মেয়েদের মাসিক বা ঋতুস্রাবকালে থাকতে হয় ঘরের বাইরে, দূরে একটা নোংরা গুমটি ঘরে বা গোয়ালঘরে৷ এতে করে যোনিপথে সংক্রমণ হওয়াটাই স্বাভাবিক৷ প্রতিমাসের এই জ্বালা-যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকেই জরায়ু কেটে বাদ দেওয়াকে বেশি স্বস্তিকর বলে মনে করে৷ মাথা না থাকলে মাথা ব্যাথাও থাকবে না, ব্যাপারটা এমনই৷ কিছু চিকিত্সক নারীদের যৌনজীবন এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা না করেই তড়িঘড়ি হিস্টারেক্টমি অপারেশন করে জরাযু বাদ দিয়ে দেন৷
এই কথারই প্রতিধ্বনি করে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আর. ভেঙ্কটেশ বলেন, অত্যধিক রক্তস্রাব, সংক্রমণ, ফাইব্রয়েড নিয়ন্ত্রণে অন্যসব চিকিত্সায় কাজ না হলে হিস্টারেক্টমি অপারেশন করা হয়ে থাকে, তাও একেবারে শেষ পর্যায়ে৷ তবে সেটাও করতে হবে বায়োপসি, প্যাপ স্মিয়ার ইত্যাদি পরীক্ষার পর৷ সমাজকর্মী কে. নীলার নেতৃত্বে কর্নাটক রাজ্য মহিলা কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট বলছে, যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ এবং নথিপত্র দাখিল করা হয়৷ কিন্তু অভিযুক্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আজও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ তবে একটি তদন্ত রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে৷ সরকারি হাসপাতালের জনৈক বড় ডাক্তার বেসরকারি হাসপাতালে গত দু'বছর ধরে অনাবশ্যকভাবে প্রায় ১৪০০টি হিস্টারেক্টমি অপারেশন করেছেন, সেইসব মহিলাদের ওপর, যাদের ৪০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নীচে৷ শাস্তি হিসেবে তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয় মাত্র৷
কিছু ডাক্তারের অনৈতিকভাবে চিকিৎসা শাস্ত্রের অনুশাসন লঙ্ঘন করার ফলে গোটা চিকিৎসক সমাজের যে বদনাম হচ্ছে, তাতে তাঁদের প্রতি মানুষের বিশ্বাসবোধ নড়ে যেতে তো পারেই৷
অন্যের পুরুষাঙ্গ নিয়ে নতুন জীবন শুরু
যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তির পুরুষাঙ্গে ক্যানসার হয়েছিল৷ ফলে অস্ত্রোপচার করে ফেলেই দিতে হলো লিঙ্গ৷ সেই থেকে বড় হতাশায় ভুগছিলেন৷ অবশেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অন্য একজনের লিঙ্গ দেয়া হয়েছে তাঁকে৷ এমনও সম্ভব!
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Riley/Mass General Hospital
লিঙ্গ প্রতিস্থাপন
চিকিৎসা শাস্ত্রের অগ্রগতির ফলে এখন শরীরের অনেক অঙ্গই প্রতিস্থাপন, অর্থাৎ অন্যের দেহ থেকে এনে লাগিয়ে দেয়া যায়৷ পুরুষাঙ্গও যে এভাবে অন্যের কাছ থেকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করা যাবে ১১ বছর আগেও তা ভাবা যেত না৷ ২০০৫ সালে প্রথমবারে মতো একজনের দেহ থেকে পুরুষাঙ্গ এনে আরেকজনের দেহে লাগিয়ে দেয়ার পর বোঝা যায় এমনও সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম দৃষ্টান্ত চীনে
সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত মাত্র তিনজনের দেহে সফলভাবে পুরুষাঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে৷ পুরুষাঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রথম দৃষ্টান্তটি দেখা যায় চীনে৷ ২০০৫ সালে চীনের এক ব্যক্তির দেহে অস্ত্রোপচার করে লাগানো হয়েছিল নতুন পুরুষাঙ্গ৷ কিন্তু ওই পুরুষাঙ্গ নিয়ে ভদ্রলোক স্বচ্ছন্দ বোধ না করায় কয়েক সপ্তাহ পরেই আবার অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেয়া হয় সেই পুরুষাঙ্গ৷
ছবি: Fotolia
অন্যের পুরুষাঙ্গ নিয়ে প্রথম সুস্থ ব্যক্তি
২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার এক ব্যক্তির দেহে পুরুষাঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়৷ সেই ব্যক্তি এখনো সুস্থ আছেন৷ লিঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর সন্তানের জন্মও দিয়েছিলেন৷ তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মারা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবার যুক্তরাষ্ট্রে
যুক্তরাষ্ট্রের থমাস ম্যানিং একদিন অফিসে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে খুব ব্যথা পেয়েছিলেন৷ ব্যথার চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানা যায় তাঁর পুরুষাঙ্গে ক্যানসার হয়েছে৷ ক্যানসার থেকে বাঁচতে পুরুষাঙ্গটাই ফেলে দিতে হয়৷ সেই থেকে হতাশার জীবন কাটাচ্ছিলেন৷ গত সপ্তাহে ৬৭ বছর বয়সি থমাস ম্যানিংকেও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে নতুন পুরুষাঙ্গ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Riley/Mass General Hospital
নতুন জীবন
এক ব্যক্তি মৃত্যুর আগে নিজে লিঙ্গ দান করে যাওয়ায় ১৫ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে সেই লিঙ্গ ম্যানিংয়ের দেহে জুড়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে৷ অস্ত্রোপচার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের ম্যাসেচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে৷ সপ্তাহ খানেক পরও ভালোই আছেন থমাস ম্যানিং৷ জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে টের পাচ্ছেন তিনি আবার পূর্ণাঙ্গ পুরুষ হয়ে উঠেছেন৷