ক্ষতিকর নাইট্রোজেন গ্যাস নির্গমনকারী পশু খামারগুলো বন্ধে সরকারের নেয়া পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন নেদারল্যান্ডসের কৃষকরা৷ দাবি না মানলে ‘গোটা দেশ অচল' করে দিবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন তারা৷
বিজ্ঞাপন
পরিবেশ নিয়ে সরকারের এক পরিকল্পনায়ে ক্ষুব্ধ নেদারল্যান্ডসের কৃষক ও খামারিরা৷ সোমবার ট্রাক্টর ও ট্রাক নিয়ে দেশটির সপারমার্কেটের খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র অবরোধ করেন তারা৷ কৃষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কয়েকটি বন্দর অবরোধ করেছেন জেলেরাও৷
নেদারল্যান্ডসের সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নাইট্রোজেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস নিঃসরণ ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার এক প্রস্তাব তৈরি করেছে সম্প্রতি৷ এই পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় প্রাদেশিক সরকারগুলোকে তার উপায় বের করতে এক বছর সময় দেয়া হয়েছে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর ফলে বড় আকারের অ্যামোনিয়া নিঃসরণকারী পশু খামারগুলো সরকার কিনে নিতে পারে৷
সংকট কতটা গভীর
বিশ্বে বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন অক্সাইডের গুরুতর ভূমিকা আছে৷ বলা হয় গ্রিন হাউস গ্যাসের জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি দায়ী নাইট্রাস অক্সাইড৷ তবে ডাচ কৃষকরা বলছেন তারা অন্যায় আচরণের শিকার৷ সরকার মোটেও তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে না৷
বায়ুদূষণ রোধে যে দেশগুলোর রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা
ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে বায়ুদূষণ রোধের চেষ্টা করছে৷ কিন্তু ইউরোপের বাইরের অনেক দেশেরই এ বিষয়ের উদ্যোগ সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না৷ চলুন জেনে নিই ছবিঘরে৷
ছবি: Imago/imagebroker
চীনে হাঁটার জন্য সহজ পথ
চীনের বড় বড় শহরগুলো বায়ুদূষণের প্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ চেংডু, চীনের পঞ্চম বৃহত্তম শহর৷ সেখানকার কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন, যাতে আবাসিক এলাকায় মানুষ যানবাহনের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সহজে হাঁটাচলা করতে পারে৷ এই পরিকল্পনার আওতায় শতকরা ৫০ ভাগ রাস্তা গাড়িমুক্ত করার চিন্তা করছেন তারা৷ চীন এখন পর্যন্ত ৩০০টি ইকো-শহর নির্মাণ করেছে৷
ছবি: Imago/Photoshot/Construction Photography
কলম্বিয়ায় গাড়িবিহীন দিন
কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক বাস পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে৷ ১৯৭৪ সাল থেকে এই শহরের মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন সপ্তাহে একদিন ১২০ কিলোমিটার রাস্তায় কোনো গাড়ি চলবে না৷ এর পাশাপাশি শহর কর্তৃপক্ষ কয়েকশ’ কিলোমিটার সাইকেল লেন নির্মাণ করছেন৷ ফলে গাড়িবিহীন দিনগুলোতে এখানে সাইকেল আরোহীদের সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: Transmilenio Colombia
দক্ষিণ কোরিয়ায় কমছে গাড়ির ওপর নির্ভরশীলতা
দক্ষিণ কোরিয়ার শহর ইনচেনের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক এলাকা সংদোতে গাড়ির তুলনায় সাইকেল চালকদের প্রাধান্য দেয়া হয়৷ গণপরিবহণের পাশাপাশি যাতে বিপুল সংখ্যক সাইকেল নির্বিঘ্নে চলতে পারে, সেজন্য এই এলাকার রাস্তাগুলোকে চওড়া করা হয়েছে৷ আবাসিক এলাকার ভবনগুলো এমন দূরত্বে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে হেঁটে যাওয়া যায়৷ ২০২০ সাল নাগাদ এই পরিকল্পনা অনুযায়ী এই শহরের নির্মাণকাজ শেষ হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
বিশুদ্ধ বাতাসের শহর
২০২০ সাল নাগাদ স্যান ফ্রান্সিস্কো মার্কেট এলাকায় সব ধরনের গাড়ি নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করছেন কর্তৃপক্ষ৷ এই প্রস্তাবের আওতায় ঐ এলাকায় গণপরিবহণকে প্রাধান্য দেয়া হবে৷ এছাড়া এই এলাকাটি সাইকেলআরোহী এবং পথচারীবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে৷ আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যান নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করছে৷
ছবি: Imago/imagebroker
মেক্সিকো সিটির পরিকল্পনা
বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহরগুলোর একটি হলর মেক্সিকো সিটি৷ কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে ২০২৫ সাল নাগাদ সব্ ধরনের ডিজেলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধের অঙ্গীকার করেছে শহরটি৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
ভারতে বৈদ্যুতিক রিকশা
ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে ক্রমাগত বাড়ছে বায়ুদূষণ৷ ইলেকট্রিক রিকশা এক্ষেত্রে বায়ুদূষণ রোধে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ২০৩০ সাল নাগাদ নতুন সব বাহন হবে বিদ্যুৎচালিত এবং রাজধানীতে গ্যাস চালিত যান নিষিদ্ধ করা হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
6 ছবি1 | 6
পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণসহ অন্যান্য খাতগুলোকেও বিধিনিষেধের আওতায় আনা হচ্ছে৷ তবে অ্যামোনিয়া গ্যাস নিঃসরণকারী পশু খামারগুলোই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে নেদারল্যান্ডসের সরকার৷
প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকাগুলোর কাছে নাইট্রোজেন নির্গমন ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় সরকার৷ এর ফলে দেশটির ৩০ শতাংশ পশু খামার বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷
আন্দোলন অব্যাহত থাকবে
কৃষকেরা তাদের দাবি না মানলে ‘গোটা দেশ অচল করে দেয়ার' হুমকি দিয়েছেন৷ তাদের এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন৷
এমন অবস্থায় পরিবেশ সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং কৃষকদের সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ দিয়েছে সরকার৷
যদিও প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে এই বিষয়ে কড়া অবস্থানই নিয়ে রেখেছেন৷ কট্টর বিক্ষোভের জন্য দায়ী কৃষকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি৷
২০১৯ সালের একটি ছবিঘর দেখুন:
বায়ুদূষণে মৃত্যুতে বাংলাদেশ পঞ্চম
বাংলাদেশের শতভাগ মানুষই মাত্রাতিরিক্ত দূষিত বায়ুতে বসবাস করছে৷ এজন্য ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ‘দি স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট ২০১৯’ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: bdnews24.com
বায়ুদূষণে ঝুঁকি
বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যু ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ৷ দূষিত বায়ু গ্রহণের কারণে হৃদযন্ত্রের অসুখ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যা, ফুসফুস সংক্রমণ ও ক্যানসারের মতো রোগে ভুগছে মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/S. Ziese
মৃত্যুর কারণ
বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয় বায়ুদূষণ তার মধ্যে পঞ্চম৷ ২০১৭ সালে ৪৯ লাখ মানুষ দূষিত বায়ুর কারণে মারা গেছে৷ মোট ১৪.৭ কোটি বছর সুস্বাস্থ্যে কাটানোর সুযোগ হারিয়েছে৷
ছবি: Greenpeace/V. Zalevskiy
দূষণের শিকার বেশিরভাগ মানুষ
একটি দেশের বায়ু স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপযোগী তা পরিমাপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডাব্লিউএইচও’র মানদণ্ড রয়েছে৷ সে অনুযায়ী ৯০ ভাগ মানুষই এমন অঞ্চলগুলোতে বাস করে যেখানকার বায়ু সুস্বাস্থ্যের উপযোগী নয়৷ ডাব্লিউএইচও-র সবচেয়ে নীচের লক্ষ্যমাত্রাটিও পূরণ করতে পারছে না এমন এলাকায় বাস করে অর্ধেকের বেশি মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
মাত্রাতিরিক্ত দূষণ দক্ষিণ এশিয়ায়
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু দক্ষিণ এশিয়ায়৷ ডাব্লিউএইচও’র মাত্রা অনুযায়ী ২০১৭ সালে সবচেয়ে দূষিত বায়ু ছিল নেপালে৷ এরপর রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান৷ এই অঞ্চলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বায়ু আছে ভুটানে৷ ডাব্লিউএইচওর নীচের মাত্রাটির কাছাকাছি তাদের অবস্থান৷ অঞ্চল ভিত্তিতে মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার পরে আছে সাব সাহারা আফ্রিকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Swarup
বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ
ডাব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্বের যেসব দেশের শতভাগ মানুষ মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের মধ্যে বাস করছে তার একটি বাংলাদেশ৷ একই পরিস্থিতি পাকিস্তান, ভারত, চীন, নাইজেরিয়া ও মেক্সিকোতেও৷
ছবি: Pavel Rahman/AP/dapd
বায়ুদূষণে বাংলাদেশে মৃত্যু
দূষিত বায়ুর কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়া শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ৷ ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ বায়ুদূষণে মারা গেছে৷ প্রথম চারটি দেশের মধ্যে আছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া৷
ছবি: bdnews24.com
দূষণ রোধে গড় আয়ু বাড়বে
বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যহানি আর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে৷ প্রতিবেদন বলছে এখন বিশ্বে যেসব শিশু জন্ম নিচ্ছে, গড়ে তারা কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ মাস কম আয়ু পাচ্ছে৷ দক্ষিণ এশিয়ায় যা ৩০ মাস৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তাই গড় আয়ুও বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ning
গড় আয়ু বেশি বাড়বে বাংলাদেশ
স্বাস্থ্যকর বায়ু নিশ্চিত করার সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে বাংলাদেশ৷ জন্ম নেয়া শিশুদের গড় আয়ু তখন ১.৩ বছর বেড়ে যাবে৷ এমন সুবিধা পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে থাকবে ভারত, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান৷ তাদের গড় আয়ু ১ বছর বেড়ে যাবে৷