সম্প্রতি জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের হাতে এক জার্মান নাগরিকের প্রাণ যাওয়াকে কেন্দ্র করে ডানপন্থিরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল৷ বুধবার জার্মান সংসদে এই বিষয়ে বিতর্কে মেতে ওঠেন রাজনীতিবিদরা৷
বিজ্ঞাপন
দিনের শুরুতে অভিবাসনবিরোধী দল এএফডির সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলেক্সান্ডার গাউলান্ড কেমনিৎসেডানপন্থিদের বিক্ষোভের সমালোচনাকরায় সরকার ও চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে লক্ষ্য করে বক্তব্য রাখেন৷ ম্যার্কেলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ঘৃণা প্রকাশ করা কোনো অপরাধ নয়৷''
গাউলান্ড বলেন, বিক্ষোভে অংশ নেয়া বেশিরভাগ মানুষই ছিলেন ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক'৷
উল্লেখ্য, ‘অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড' বা এএফডি বর্তমানে জার্মান সংসদের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের খোলা শরণার্থী নীতির সমালোচনা ও মুসলিমবিরোধী অবস্থান নিয়ে জার্মান সংসদে প্রবেশে সমর্থ হয় তারা৷
গাউলান্ডের বক্তব্যের উত্তরে ম্যার্কেল বলেন, অভিবাসীরা যে অপরাধ করছেন, তা নিয়ে অন্য জার্মানদের মতো তিনিও উদ্বিগ্ন৷ এবং এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি৷
জার্মানির কেমনিৎসে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এক জার্মান-কিউবান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরসহ অনেক নেতা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/O. Andersen
জার্মান-কিউবানের মৃত্যু
রবিবার ভোরে জার্মানির কেমনিৎস শহরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি এক জার্মান-কিউবান নাগরিক ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান৷ পুলিশ বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ জন মানুষ এই বিবাদে জড়িত ছিলেন৷ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সি এক ইরাকি ও ২৩ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ ‘যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই’ তারা ডানিয়েলকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW/B. Knight
বিক্ষোভ ও বিদেশিদের উপর হামলা
ডানিয়েল এইচ. স্থানীয় কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ফলে তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার বিকালে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এদের মধ্যে চরম ডানপন্থিরাও ছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়েন এবং তাঁরা পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেননি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনা হয়৷ এই সময় বিক্ষোভকারীরা পথেঘাটে বিদেশিদের উপর নির্বিচারে হামলাও চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সোমবারও বিক্ষোভ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সোমবারও কেমনিৎস শহর উত্তপ্ত ছিল৷ সন্ধ্যার সময় প্রায় ২,০০০ চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভে নামেন৷ আর তাঁদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে মাঠে নামেন প্রায় ১,০০০ মানুষ (ছবিতে তাঁদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে), যাদের মধ্যে বামপন্থিরাও ছিলেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন আহত হন৷ দুই পক্ষ একে অপরের উপর আতসবাজিসহ নানা বস্তু নিক্ষেপ করে৷ ৪ জন চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভকারীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সরকারের প্রতিক্রিয়া
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে রবি ও সোমবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এমন আচরণ খাপ খায় না৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফায়দা তুলে বিদেশিবিদ্বেষ ও হিংসা ছড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জনতা ভিন্ন চেহারার মানুষকে বাছাই করে হামলা চালাবে, এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
তাণ্ডবের পেছনে ‘ভুয়া খবর’
‘ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেমনিৎসে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্যাক্সোনি রাজ্য প্রশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধু স্থানীয় চরম দক্ষিণপন্থিরা নয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক রাজ্য থেকে সমমনস্ক মানুষকে কেমনিৎসে আকর্ষণ করা হয়েছে৷ নিহত ডানিয়েল এইচ. নাকি এক নারীর সম্মানরক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
5 ছবি1 | 5
তবে তাই বলে অভিবাসীদের অপরাধের প্রতিক্রিয়ায় ঘৃণা প্রকাশ, নাৎসি সমর্থন ও সংঘাত মেনে নেয়া যায় না, বলে মন্তব্য করেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ কেমনিৎসে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিক্ষোভকে ‘ঘৃণ্য' কাজ বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
জার্মানির গত নির্বাচনে চ্যান্সেলর পদে ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নেতা মার্টিন শ্যুলজ'ও এএফডি দলের সমালোচনা করে সংসদে বক্তব্য রেখেছেন৷ তিনি দলটির বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদের নীতি' অনুসরণ করার অভিযোগ আনেন৷ শ্যুলজ বলেন, দেশের জটিল রাজনৈতিক সমস্যাকে একটিমাত্র বিষয়ে সীমাবদ্ধ করতে চায় এএফডি৷
মুক্ত গণতন্ত্রী দল এফডিপির নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার-ও শ্যুলজের মতো একই সুরে এএফডি দলের সমালোচনা করেছেন৷ জার্মানির রাজনৈতিক বিতর্ক শুধুমাত্র অভিবাসন বিষয়ে নেমে এসেছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি৷ এরপর কয়েকটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এসব সমস্যা নিয়ে আমরা গভীর আলোচনা করতে পারতাম, কিন্তু আমরা আবারও শুধু অভিবাসন নিয়ে কথা বলছি৷''